সাহিত্যের দর্পণে আত্মোপলব্ধির স্বরূপ : ভাস্কর চৌধুরীর সাহিত্যতত্ত্ব ও অন্যান্য প্রসঙ্গ | আহমেদ তানভীর

সাহিত্যের দর্পণে আত্মোপলব্ধির স্বরূপ : ভাস্কর চৌধুরীর সাহিত্যতত্ত্ব ও অন্যান্য প্রসঙ্গ আহমেদ তানভীর


বইআলোচনা বা পাঠ-প্রতিক্রিয়া বলতে যা বোঝায় এটা তেমন কিছু নয়, স্রেফ পাঠোত্তর কিঞ্চিৎ উপলব্ধি।
‘সাহিত্যতত্ত্ব ও অন্যান্য প্রসঙ্গ’ বইটি প্রধানত তিনটি পর্বে সাজানো- সাহিত্যতত্ত্ব, কবিতা প্রসঙ্গ এবং সাহিত্য ও অন্যান্য প্রসঙ্গ। পর্ব তিনটির ভেতরে আবার থরে থরে সাজানো বেশ কিছু উপপর্ব রয়েছে।

সাহিত্যতত্ত্ব পর্বে সাহিত্যের বিভিন্ন পরিভাষা (Literary Terms) নিয়ে সাবলীলভাবে আলোচিত হয়েছে। বাংলাভাষী পাঠক-লেখক-গবেষকদের জন্য এ অংশটি খুবই উপকারী হবে এই অর্থে যে, Literary Terms নিয়ে নানাজনের লেখা নানাবিধ পুস্তকাদি বাজারে পাওয়া গেলেও তুলনামূলক বিচারে এ বইতে Termগুলো অত্যন্ত সহজ ও সরলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

কবিতা প্রসঙ্গ পর্বটিতে ‘কবিতা’ বিষয়টিকে দারুণভাবে ব্যবচ্ছেদ করেছেন লেখক। প্রসঙ্গক্রমে নিজের আত্মিক উপলব্ধিও তুলে ধরেছেন এভাবে-


… হালের তনু হত্যার ব্যাপারে খুব বিস্তারিত কিছু লেখা যায় না। লিমনের পা নিয়ে জোরালো সাহিত্য হয় না। কারণ সেগুলি পোষা বুদ্ধিজীবী, আমলা ও পুঁজিবাদী পুরস্কারদাতা প্রতিষ্ঠানের কাছে আবর্জনা হয়ে যায়। লিমন ও তনুরা একদিন সাহিত্যের পাতা থেকে হারিয়ে যায়। আসে নবাবজাদীর কিসসা কাহিনি। সেগুলো সসম্মানে গৃহীত ও পুরস্কৃত হয়। এরপর তাদের বলতে শুনেছি, পুরস্কার দিলো। নিলাম। আমি কিছু জানি না। এভাবে অপসাহিত্য মূল সাহিত্যধারাকে হত্যা করতেই থাকে। সেটাও ভালো যে, অন্তত সত্য প্রকাশক লেখকের হাতে হাতকড়া পড়ে না। ভদ্র সমাজ কতো ভালো এটি তার নমুনা।…

 

সাহিত্য ও অন্যান্য প্রসঙ্গ অংশে লেখক স্বাধীনতা-পূর্ব ও স্বাধীনতা-উত্তর সাহিত্যচর্চা নিয়ে দারুণ তথ্যবহুল কিছু অজানা বিষয় সামনে এনেছেন। তৎকালীন সাহিত্য-মানুষ ও সাহিত্য-মানসকে তুলে ধরেছেন স্বচোখে দেখা সময় থেকে। এখানেও কতিপয় আত্মোপলব্ধির স্বরূপ এমন-


“মানুষ বয়েস ফুরাবার আগেই নাই হয়ে যায়। নিজের কাছে নিজে হারিয়ে যায়। জীবনে হেরে বসে থাকে। এমন মানুষের প্রচুর দেখা মেলে।…”

 

বইটিতে বানানজনিত ও মুদ্রণজনিত কিছু প্রমাদ রয়েছে। যেমন : ত্রিদিব দস্তিদার’র বইয়ের নাম ‘ভালোবেসে ফতুর করে দেব’ এর স্থলে ‘ভালবাসতে বাসতে ফতুর করে দেব’ হবে; ৬৭ পৃষ্ঠায় মুদ্রিত ‘আবু ইসাহাক’, ‘জাহান আরা ইমাম’‘মিজানুর রহমান’ এর স্থলে যথাক্রমে ‘আবু ইসহাক’, ‘জাহানারা ইমাম’ ‘মীজানুর রহমান’ হবে।

সর্বোপরি বইটি একটি কাজের বই। সাহিত্যপাঠক তো বটেই, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের দারুণ কাজে লাগবে। অদূর আগামীতে বইটি বাংলাভাষী পাঠক, লেখক, গবেষক ও শিক্ষার্থীদের কাছে একটি নির্ভরযোগ্য reference book হয়ে ওঠবে, আশা করি।

----------------------
বইয়ের নাম : সাহিত্যতত্ত্ব ও অন্যান্য প্রসঙ্গ
লেখক : ভাস্কর চৌধুরী
প্রকাশক : নন্দিতা প্রকাশ
প্রকাশকাল : একুশে বইমেলা ২০১৯

মতামত:_

0 মন্তব্যসমূহ