পলাশ মজুমদারের "হরিশংকরের বাড়ি" গল্পগ্রন্থ সম্পর্কে সাজেদুল করিম সুজনের মতামত

পলাশ মজুমদার রচিত গল্পগ্রন্থ "হরিশংকরের বাড়ি"


পলাশ মজুমদার জন্মগ্রহণ করেন ফেনীতে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। জীবিকার তাগিদে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকলেও তাঁর ধ্যানজ্ঞান লেখায়।

বইটি উৎসর্গ করা হয়েছে বাংলা ভাষার শক্তিমান কথাশিল্পী স্বকৃত নোমানকে। এই বইটির লেখক পলাশ মজুমদার তাঁর বন্ধু।

'হরিশংকরের বাড়ি' বইটি তাঁর জ্বলন্ত উদাহরণ। এই বইটিতে তিনি স্থান দিয়েছেন বারোটি গল্প। প্রতিটি গল্পে রয়েছে শেখার এবং জানার মত অনেক কিছু। এই গল্পগুলোর মাধ্যমে আমরা নতুন প্রজন্ম জানতে পারি আমাদের অতীত, আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের ঐতিহ্য। লেখক বইটিতে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছেন ১৯৪৭ এর সময়কালকে। তুলে ধরেছেন সাম্প্রদায়িক, অসম্প্রদায়িক পটভূমি। দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে দেশভাগের করুণ চিত্র ফুটে উঠেছে তাঁর লেখায়। শিবচরণ ও আব্দুল্লাহ এই দুজন হিন্দু-মুসলিমের মাঝে মেলবন্ধনের চিত্র ছিল হৃদয় ছুয়ে যাওয়ার মত এবং হিন্দু মুসলিম এর মাঝে বিপরীতার্থক মনোভাব সেটাও স্পষ্ট অক্ষরে লিপিবদ্ধ করেছেন তিনি। যা না পড়লে বোঝার উপায় নেই।

বিধর্মী গল্পের প্রধান চরিত্র মহব্বত স্বশিক্ষিত মানবতাবাদী। তিনি বলেন,

সব মানুষ আল্লাহর সৃষ্টি; আল্লাহকে মানলে মানুষকে ভালবাসতে হবে; মানুষে মানুষে ভেদাভেদ করা যাবে না। আত্মতত্ত্ব যে জেনেছে দিব্যজ্ঞানী সেই হয়েছে।

মহব্বত আলীর এই উক্তি, এই কথা, এই বাণী নিঃসন্দেহে পাঠক হৃদয়কে আন্দোলিত করবে।

সহযোদ্ধা গল্পের মুক্তামণি সেন এবং নিখিলেশ বাবুর কর্মকাণ্ড একজন পাঠক কে সমাজসেবী হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়তা করবে আমার বিশ্বাস। এছাড়াও তিনি গল্পের মধ্যে যেভাবে গান্ধীজী এবং রবি ঠাকুরের কৃতিত্ব তুলে ধরেছেন তা নতুন প্রজন্মের জন্য বিশাল পাওয়া। সুন্দর উপস্থাপনা ও সুস্পষ্ট বর্ণনায় অতিরিক্ত ঘটনাকে সুকৌশলে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে ক্ষান্ত হননি, সূক্ষ্মভাবে তুলে ধরেছেন রাজনীতিক অবস্থা, নারী-পুরুষের চিরন্তন প্রেম। ভালোবাসার বিষয়টিকেও তিনি দারুণ ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন তাঁর গল্পে।

আমার দৃষ্টিকোণ থেকে বইটি সবার পড়া উচিত। আমাদের ইতিহাস, আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের ধর্ম, প্রেম ভালোবাসা, সাম্প্রদায়িকতা, অসাম্প্রদায়িকতা ইত্যাদি সম্পর্কে জানার জন্য হলেও বইটি পড়া দরকার বলে আমি মনে করি।

পরিশেষে "হরিশংকরের বাড়ি" গল্পের বইটির লেখক পলাশ মজুমদারের প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, সম্মান জানিয়ে তাঁর সুস্বাস্থ্য কামনা করছি। সুদৃঢ় হোক তাঁর আগামীদিনের পথ চলা।

‍‍~~~0~~~
হরিশংকরের বাড়ি
পলাশ মজুমদার

প্রচ্ছদ- মোস্তাফিজ কারিগর

প্রথম প্রকাশ- ফেব্রুয়ারি ২০২০
প্রকাশক-
মজিবর রহমান খোকা, বিদ্যাপ্রকাশ।

পৃষ্ঠাসংখ্যা-১২৮
মূল্য দুইশত টাকা
ISBN: 978-984-93698-4-4

মতামত:_

0 মন্তব্যসমূহ