ফুলগুলো সরিয়ে নাও - সমীরণ দাস

ফুলগুলো সরিয়ে নাও - সমীরণ দাস

 "কীসের শব্দ? নিশ্চয়ই মুলিবাঁশের বেড়ার গায়ে কুকুর বা বিড়াল গা ঘষছে। শব্দের জোর বাড়ল। মানিক হারিকেন জ্বেলে দেখল প্রচণ্ড চাপে একটা জায়গা ফুলে উঠছে। হয়তো কুকুর-বিড়াল নয়, তাহলে কী? সে হারিকেনের আলো বাড়িয়ে দিয়ে চিৎকার করে উঠল, কে? কে ওখানে? কিন্তু বুঝতে পারল ভয়ে গলা দিয়ে কোনো স্বর বের হচ্ছে না। বাইরে থেকে চাপ আরো বাড়ল। এক সময় সেই বেড়া ভেঙ্গে ঢুকে পড়ল একটা হলুদ রঙের শক্তিশালী থাবা। থাবার সামনে দেখা যাচ্ছে লম্বা লম্বা নখ। ভিতরে মানুষের গন্ধ পেয়ে জন্তুটা আর নিজেকে সামলে রাখতে পারছে না। প্রচণ্ড গর্জনে ঘর কাঁপছে। মানিক প্রাথমিক ভয় সামলে নিয়ে একটা কাটারি হাতে নিয়ে এগিয়ে গেল। সামনে মৃত্যু, কিন্তু সেই মৃত্যুকে তো প্রতিহত করতেই হবে! আরো একটু এগোতেই দেখল বিশাল শরীরের একটি ভয়ঙ্কর বাঘ জ্বলন্ত দৃষ্টিতে তাকাতে তাকাতে ওর দিকে এগিয়ে আসছে। হাত থেকে দা পড়ে গেল মানিকের। 

ঘুম ভেঙ্গে গেল। এই স্বপ্নের কী অর্থ? সত্যিই কি মৃত্যুতুল্য কিছু এগিয়ে আসছে? বাঘ কীসের প্রতীক? যে অনারোগ্য মৃগীরোগ ক্রমশ ওকে ধ্বংসের দিকে টেনে নিয়ে চলেছে, এই বাঘ কি সেই মৃগীর প্রতীক ? মানিক বিভ্রান্তভাবে তাকিয়ে থাকে।”



হ্যাঁ , এই অনারোগ্য মৃগীরোগই মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাঁধে স্থায়ীভাবে আসন পেতেছিল সিন্ধবাদের কাঁধের বুড়োর মতো। ফলত লেখককে সারাজীবন লড়তে হয়েছিল ত্রিমাত্রিক লড়াই --- শিল্পের সঙ্গে , দারিদ্র্যের সঙ্গে ও মৃগীরোগের সঙ্গে।


"ফুলগুলো সরিয়ে নাও" এক আপসহীন দুঃখদগ্ধ স্রষ্টার অনন্ত যুদ্ধের ইতিকথা।

বইটি প্রসঙ্গে লেখক সমীরণ দাস বলেন, 

“মধুময় তামরস-এর পর যে উপন্যাসটি লিখতে লিখতে আমি সম্পূর্ণ নিঃশেষিত। প্রণম্য পাঠক-ই একমাত্র বিচারক -- এখন তাঁরাই স্থির করবেন আমার শ্রমের সাফল্য বা ব্যর্থতা‌।”



---
ফুলগুলো সরিয়ে নাও (প্রথম খন্ড )

সমীরণ দাস
অভিযান পাবলিশার্স
অভিযান বুক ক্যাফে
১/১এ , বঙ্কিম চ্যাটার্জি স্ট্রিট। কলকাতা -- ৭৩
মুদ্রিত মূল্য -- ৬৫০ টাকা।
প্রচ্ছদ -- পার্থপ্রতিম দাস।

মতামত:_

0 মন্তব্যসমূহ