যথাশব্দ - মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান

যথাশব্দ - মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান

যথাশব্দ
মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান


প্রকাশক: ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড, ঢাকা।
প্রথম সংস্করণ: ১৯৭৪ (বাংলা একাডেমী কর্তৃক)
পরিবর্ধিত দ্বিতীয় সংস্করণ: ১৯৯৩
প্রচ্ছদ: সমর মজুমদার
পৃষ্ঠা: ৮০৬
মূল্য: ২৯৫ টাকা।
ISBN: 984 05 0137 2

যে কোন ভাষার প্রতিটি শব্দের একাধিক সমার্থক শব্দ থাকে। শব্দসন্ধানী পাঠক-লেখক যথাযথ শব্দের অভাবে অনেক সময় বিভ্রান্ত বোধ করেন। শব্দটির সমার্থক অন্য শব্দ হয়তো তার মাথায় আছে, কিন্তু প্রয়োজনের সময় মনে আসছে না। সফলতম শব্দটি হাতের নাগালে এসে ধরা দিচ্ছে না। এমন একটি অতৃপ্তিকর সময়ে স্বস্তি নিয়ে আসতে পারে যে বই তা শুধুমাত্র অভিধান নয়; তার চাইতেও বেশি কিছু। এর নাম ভাব-অভিধান। অভিধান শব্দার্থ নিরূপণের জন্য, আর ভাব অভিধান শব্দের ভাব অনুধাবন ও অন্বেষণের জন্য।

ইংরেজি ভাষায় ছিল ডক্টর পিটার মার্ক রজে (Peter Mark Roget 1779-1869) এর থীসরাস (Thesaurus)। 'রজার্স থীসরাস' বা 'রজার্স থসার্স' (Roget's Thesaurus) নামে পরিচিত এই বইটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৮০৫ সালে। সংস্কৃত ভাষার 'অমরকোষ' (অমরসিংহ রচিত 'নামলিঙ্গানুশাসন’) থেকে মি. রজে যথেষ্ট প্রভাবিত হয়েছিলেন। কিন্তু বাংলা ভাষায় এরকম ভাবার্থসমৃদ্ধ বইয়ের অভাব ছিল বহুকাল। এক ছিল প্রাণতোষ ঘটক- এর রচিত ১৯৫৫ সালে প্রকাশিত 'রত্নমালা'। তবে বাংলা ভাষায় ভাব-অভিধানের অভাব প্রথম পূরণ হয় মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান সংকলিত 'যথাশব্দ' বইটির মাধ্যমে। প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৭৪ সালে। প্রকাশিত হওয়ার পরপরই বাংলা ভাষার পাঠক-লেখক তথা বিদ্বৎসমাজ শব্দকুহক থেকে মুক্তি পাবার একটা দিশা পেয়ে যান; হাতে পান যথাযথ শব্দ চয়নের উপযুক্ত হাতিয়ার।

প্রত্যেক লেখকেরই লেখালেখি করার সময় প্রয়োজনীয় একটি ভাব মনে অনুরণন তোলার পর তাকে প্রকাশ করার একটি ব্যাকুলতা তৈরি হয়। কিন্তু ঠিক কোন শব্দটি তার মনের ভাবনাটিকে উপযুক্ত অর্থব্যঞ্জনা প্রকাশ করতে সক্ষম হবে তা নিয়ে দ্বিধা কাটে না। ঈপ্সিত শব্দের সন্ধান না পেয়ে লেখকের মনের যে টানাপোড়েন, তাকে সন্তুষ্ট করতে পারে একমাত্র ভাব-অভিধান। বাংলা ভাষায় প্রথম এই সন্তুষ্টি নিয়ে আসে মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান সংকলিত 'যথাশব্দ' বইটি।

প্রথম সংস্করণের ভূমিকা থেকে প্রথম অনুচ্ছেদের একাংশ উল্লেখ করলে বিষয়টি বুঝতে কিছুটা সহজ হবে:


জানা শব্দ অনেক সময় প্রয়োজনবোধে মনে আসে না। যে শব্দ মনে আছে অথচ মনে আসছে না, সেই বিস্মৃত শব্দের সূত্রসন্ধানে এবং যে শব্দ মনে আসছে অথচ মনে ধরছে না, অতৃপ্ত মনের সেই অভিপ্সিত শব্দের উদ্দেশ্যে এই ভাব-অভিধানের সূত্রপাত। অভিধান শব্দার্থ নিরূপণের জন্য বর্ণানুক্রমে সাজান। এই পুস্তক ভাবপ্রকাশে যথার্থ শব্দ নির্বাচনে সহায়তার জন্য ব্যবহারিক সুবিধার্থে ভাবানুক্রমে বিন্যস্ত। বলাবাহুল্য, এই ভাব-অভিধান অভিধানের বিকল্প নয়, যদিও নির্ঘন্টে প্রদত্ত শব্দের অর্থ ও প্রয়োগের বিশ্লেষণে ও প্রাসঙ্গিক পর্যায়ের নির্দেশনায় এবং প্রত্যেক পর্যায়ে পর্যায়-শব্দ ও প্রতিশব্দের সমাহারে শব্দের অর্থের দ্যোতনা ও ব্যঞ্জনা পরিস্ফুট।

 

এই গ্রন্থটিতে মানবহৃদয়, প্রকৃতি ও পরিপার্শ্বের যাবতীয় ভাবাত্মক শব্দগুলোকে এক হাজারটি পর্যায়ে ভাগ করে এই একহাজারটি পর্যায়কে আবার আটটি প্রধান শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়েছে (প্রথম সংস্করণে ছয়টি শ্রেণী ছিল)। প্রত্যেকটি পর্যায়ে পর্যায়-শীর্ষক শব্দের প্রতিশব্দ বা সমার্থকশব্দ সংকলিত হয়েছে। মোট কতটি শব্দ এই বইতে রয়েছে, তার কোন উল্লেখ বইয়ের কোথাও পাওয়া গেল না। তবে প্রয়োজনীয় শব্দসন্ধানে যথাশব্দ পাঠককে কখনও নিরাশ করে নি। আবার উপযুক্ত শব্দ সন্ধানে ব্রতী হয়ে কৌতুহলী পাঠকের মনে কিরূপ ভাবনার উদয় হয় সে সম্পর্কেও সংকলক বিনয়াবনত। সংকলক সবিনয়ে স্বীকার করেছেন:


যথাশব্দের সন্ধানে বিশল্যকরণী আনতে গন্ধমাদন পর্বতের শব্দারণ্য হাজির করলাম কি না সে নিয়ে মনে একটা দ্বন্দ্ব রয়ে গেল।

 

যথাশব্দ গ্রন্থটিতে বাংলা শব্দগুলোকে যে আটটি শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়েছে তা নিম্নরূপ:

  • প্রথম শ্রেণী: নির্বস্তুক ভাব
  • দ্বিতীয় শ্রেণী: স্থান
  • তৃতীয় শ্রেণী: পদার্থবিজ্ঞান
  • চতুর্থ শ্রেণী: বস্তু
  • পঞ্চম শ্রেণী: সংবেদন
  • ষষ্ঠ শ্রেণী: বুদ্ধিবৃত্তি
  • সপ্তম শ্রেণী: ইচ্ছা
  • অষ্টম শ্রেণী: চিত্তবৃত্তি
'যথাশব্দ' হাতে নিয়ে শব্দসন্ধানী অনুসন্ধিৎসু পাঠক 'শব্দশিকারে' নেমে পরস্পরসম্পর্কিত অনেক নতুন ও পুরাতন শব্দের মুখোমুখি হবেন, অপ্রচলিত কিন্তু ব্যঞ্জনাময় শব্দের দেখা পেয়ে চমৎকৃত হবেন। বাংলা ভাষার শব্দভাণ্ডার তার শব্দক্ষুধাকে মিটিয়ে ঐশ্বর্যময় শব্দলোকের এক অনাবিস্কৃত জগতে পৌঁছে দেবে।

মতামত:_

0 মন্তব্যসমূহ