"চন্দ্রবিন্দু" পত্রিকায় অগ্রজদের নৈকট্যে তরুণরা নিজেদের বৈভব ও লেখার প্রাণপ্রাচুর্য বৃদ্ধি করতে পারেন

"চন্দ্রবিন্দু" পত্রিকায় অগ্রজদের নৈকট্যে তরুণরা নিজেদের বৈভব ও লেখার প্রাণপ্রাচুর্য বৃদ্ধি করতে পারেন
প্রদোষ মিত্র

মঈন ফারুক সম্পাদিত ও চৌধুরী ফাহাদ প্রকাশিত সাহিত্যপত্রিকা চন্দ্রবিন্দু৷ ১২৮ পৃষ্ঠার সাহিত্যপত্রিকাটির সূচিপত্রভুক্ত লেখকতালিকা অনেক বড়৷ গুচ্ছকবিতা ও একক কবিতা রয়েছে অনেক কবির৷ অধিকাংশই তরুণ৷ এব্যাপারে সম্পাদকীয়তে উল্লেখ রয়েছে এভাবে,
প্রতিবারই আমরা অগ্রজ এবং সময়ের তরুণতুর্কীদের পাশাপাশি একেবারে নতুন যারা— লেখালিখি শুরু করেছেন, উদ্দীপনা আছে, গভীর মনোনিবেশ আছে, লেখায় চমৎকারিত্ব ছোঁয়ার প্রাণপন চেষ্টা আছে— এমন লেখকদের বেশি করে স্থান দেয়ার চেষ্টা করি৷ তারা যেন অগ্রজদের লেখার নৈকট্যে নিজেদের বৈভব ও লেখার প্রাণপ্রাচুর্য আরও বৃদ্ধি করতে পারেন৷
সম্পাদকীয় বক্তব্যের প্রতিফলন দেখা যায় এবারের সংখ্যায়৷ পরিচিত নামগুলোর পাশাপাশি চোখে পড়ে অনেক অপরিচিত নাম; হয়তো নতুন৷ সংখ্যাটি শুরু হয়েছে রাশেদ রউফের নিবন্ধ ‘কবিতার চাল ও শব্দের সৌন্দর্য’ দিয়ে৷ এই ছোট্ট লেখায় লেখক তরুণ কবিদের উৎসাহিত করতে চেয়েছেন৷ উদ্ধৃত করেছেন আবু হাসান শাহরিয়ারের কবিতা৷ লেখাটি আরো ব্যাপক–বিস্তৃত হলে ভাল হতো৷

পত্রিকাটির একটি বিভাগের নাম ‘লেখক আলোচনা’ ৷ এই বিভাগে অগ্রজ দুই কবি হাফিজ রশিদ খান ও ভাগ্যধন বড়ুয়া লিখেছেন দুই তরুণ কবি, যথাক্রমে ইলিয়াস বাবর ও ইয়ার ইগনিয়াসের কবিতা নিয়ে৷ দুটো আলোচনাই ভাল লেগেছে৷ হাফিজ রশিদ খান ব্যক্তিগত আলাপ দিয়ে লেখাটি শুরু করে কবিতার আলোচনায় চলে গেছেন৷ আর ভাগ্যধন বড়ুয়া গদ্যের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আলো ফেলেছেন তরুণ কবি ইয়ার ইগনিয়াসের কবিতায়৷ দুইজনের আলোচনার ঢং দুইরকম হলেও দুজনই উৎসাহব্যাঞ্জক আলোচনা করেছেন৷

আটটি গল্প মুদ্রিত হয়েছে এবারের সংখ্যায়৷ আমার সবচেয়ে ভাল লেগেছে ‘ফেক আইডি’ গল্পটি৷ সূচিতে এই গল্পের লেখকের নাম মুদ্রিত রয়েছে ‘দেবাশিষ মজুমদার’; আর ভেতরে গল্পের শুরুতে মুদ্রিত রয়েছে ‘মজুমদার দেবাশীষ’!

অন্যান্য গল্পগুলোও ফেলনা নয়৷ গল্পের ভেতরে গল্প আছে৷ সেগুলোও ভাল৷ ‘অহনাকে আমি কিছু বলি নাই’ গল্পে মাহরীন ফেরদৌস একটি প্রেমের গল্প বলেছেন আমাদেরকে৷ গল্পের শেষে যখন দেখা যায় হিমেল চরিত্রটি ‘অহনার বান্ধবী’ চরিত্রটিকেই প্রেমপত্র দিয়েছিলো, তখন গল্পটির সার্থক সমাপ্তি ঘটে৷ গল্পটির ভেতরে লেখক ছোট ছোট কিছু কাজ করেছেন, যা পাঠ আগ্রহ ধরে রাখতে সহযোগিতা করেছে৷ ‘পোলাও পাতা’ গল্পে জাকির হোসেন ফ্ল্যাট বাড়ির কাজের বুয়ার গল্প বলেছেন৷ গল্পটি যেভাবে লেখক টেনে নিয়ে গেছেন সমাপ্তির দিকে তা ভাল ছিলো, কিন্তু শেষাংশে তিনি যেন বড্ড তাড়াহুড়া করে ফেলেছেন৷ শেষাংশ নিয়ে গল্পকার আরও ভাল কাজ করতে পারতেন৷ ‘সন্ধ্যারাগের আচমকা আলোয়’ গল্পের লেখক অঙ্কনা জাহান৷ এটিও প্রেমের গল্প৷ ছোট্ট৷ সুন্দর৷ কোনো কোনো ছোট্ট ঘটনা আমাদের বিবেচনাবোধ বদলে দিতে পারে, এই বিষয়টি নিয়েই গল্প আবর্তিত৷ গল্পটি ভাল লেগেছে, তবে আরেকটু সম্পাদিত হলে গল্পটি আরও উজ্জ্বল হতে পারতো৷ আখতার মাহমুদ রচিত রাজনৈতিক গল্প ‘বগা জামালের পাড়া’৷ পাড়ার এক গুন্ডার উত্থানের বর্ণনা এই গল্প৷ যেখানে সকলে এই গুন্ডার কার্যকলাপে বিরক্ত-ক্ষুব্ধ হলেও ঝুঁকি নিতে চায় না বলে সকল প্রকার গুন্ডাগিরি দেখেও চুপ করে থাকে, মেনে নেয়৷ কিন্তু এক শিশু, কোত্থেকে সে আসে কেউ জানে না, সেই শিশুই গুন্ডার দিকে প্রতীকী হিসু ছুঁড়ে দিয়ে দম্ভ চূর্ণ করে দেয়৷ গল্পের প্লট সুন্দর৷ কয়েকটি জায়গায় খাপছাড়া মনে হয়েছে৷ গল্পের ভেতরের ইন্টার্নাল লিংক আরও মজবুত হলে গল্পটি আরও উপভোগ্য হতো৷ এই সংখ্যায় আরও গল্প লিখেছেন, রাজিব রাহুল, ওমর ফারুক, মুস্তাকিম আল মাহিয়ান, ইমাম হোসেন খান৷ গল্পগুলো পত্রিকার মান সত্যিই বাড়িয়ে দিয়েছে৷

কবিতার বই আলোচনা রয়েছে চারটি৷ জহির হাসানের ‘বউ কয় দেখি দেখি’ নিয়ে আলোচনা করেছেন মলয় দত্ত৷ খালেদ হামিদীর ‘তুমি কি রোহিঙ্গা মাছি’ নিয়ে আলোচনা করেছেন সাঈদ শ’, মিলটন রহমানের ‘স্নোড্রপ চুম্বনেরা’ নিয়ে আলোচনা করেছেন মোস্তফা হায়দার৷

====================
চন্দ্রবিন্দু
আগষ্ট ২০১৮, ১০ম বর্ষ, সংখ্যা ০৭
প্রচ্ছদ :: সঞ্জিব রায়
প্রকাশস্থানঃ চট্টগ্রাম
মূল্যঃ ৫০ টাকা

মতামত:_

0 মন্তব্যসমূহ