শব্দমূলকল্পদ্রুম : কতিপয় ইংরেজি শব্দের উৎসকথা - মেহেরাব ইফতি

শব্দমূলকল্পদ্রুম : কতিপয় ইংরেজি শব্দের উৎসকথা - মেহেরাব ইফতি

এখন, বইখানা ‘ছোট্ট’ কিন্তু এইটার মালমশলা তৈয়ার হইছে নানান বই থেকে। জি এইচ হাবীব সাব অবশ্য নিজেই কনফেশন করতেছেন যে, এই বইখানা কোনো মহৎ উদ্দেশ্য লইয়া লেখা না; প্রবাস জীবনের একাকীত্ব কাটানির জন্য এই কাম করছেন উনি অর্থাৎ বইখানা লিখছেন। মালমশলা বলতে গিয়া তিনি আইনস্টাইনরে ইয়াদ করছেন, “Originality is the art of concealing your sources”- বাহ তালিয়া! তালিয়া! মনে হইতেছে মাথা ভাইঙ্গা খাওয়ার তৃতীয় তরীকার খুব কাছাকাছি আমরা চইলা আসছি।

এই বইখানা তৈয়ার করার মশলা হইল,
  • ১) Word Origins (Fun with English) [George Beal, Peter Stevenson]
  • ২) American Heritage Dictionary of the English Language [ Editors of the American Heritage Dictionaries]
  • ৩) All About Words: An Adult Approach to Vocabulary Building [ Maxwell Nurnberg ,Morris Rosenblum ]
  • ৪) Word Origins: The Hidden Histories of English Words from A to Z [John Ayto ]

এই চাইর খানা বইয়ের সন্ধান দিয়া হাবিব সাব কইতেছেন আরো কিছু উৎস আছে তয়, “আশা মেটালে ফেরে না কেহ, আশ রাখিলে ফেরে...” আমরা এই আশ রাখিয়াই বইখানা শুরু করব কিন্তু, বইখানার রিবিয়ুর আগে মেকিং লইয়া এতো জায়গা খরচ করা কেনো!

লম্বায় বইখানা সাড়ে ছয় ইঞ্চির কমবেশি হইবে; সাইজে খুবই ছোট এই বইখানা তৈয়ারের মালমশলা আপনাদের সামনে ঠিকুজি আকারে শো করার কারণ হইল হাবীব সাবের কথার সত্যটা যাচাই করা। উনি যে কইলেন, প্রবাস জীবনের একাকীত্ব কাটানির জন্যই স্রেফ এই কাম করছেন এইটা কতটুকু সত্য! আমরা দেখলাম, এইটা সত্য না; উনি সর্বাধিক পরিশ্রম দিয়াই ‘শব্দমূলকল্পদ্রুম : কতিপয় ইংরেজি শব্দের উৎসকথা’ গাছ হইতে ফল ফলাইছেন।

বইয়ের ভিত্রে হান্দাইয়া যাওনের আগে বইলা রাখি, প্রকৃতি-পরিচয় নামক প্রকাশনা সংস্থা এই বইখানা দিয়াই তাহাঁদের প্রকাশনা ধান্ধা শুরু করিয়া ছিলেন; পাঠক বিনীত অনুরোধ, ধান্ধা কথাটারে সর্ব অর্থে ‘নেতি’ হিসাবে নিবেন না। ইহার ইতিবাচকতাও রিয়ালিটিতে একজিস্ট করিয়া থাকে...

শব্দ ব্যক্তি তৈয়ার করে (যেমন ধরেন টমাস হাক্সলি সাব। উনি তৈয়ার করলেন agnostic শব্দটা), সমাজ তৈয়ার করে, আবার দেখতেছি একটা পরিবারও শব্দ তৈয়ার করে! যেমনঃ hooligan অর্থ মাস্তান। এইটা আইছে Houlihan নামের এক পরিবার থেইকা। বুঝতেই পারতেছেন, অই পরিবারের সুনামের সাথে মস্তান/গুন্ডা/বদমাইশ ট্যাগলাইন যুক্ত আছিল! এই পরিবারের বসবাস ছিল দক্ষিন-পুব লন্ডনের সাউথওয়ার্কে। একটা মিউজিক হল ভিত্তিক গানে এই পরিবাররে অমর কইরা রাখা হইছে মানে মরতে দেওয়া হইবে না আরকি! হাবিব সাব সন্দেহ করছেন, এইটা ব্রিটিশ ‘propaganda’ নয় তো?
এইভাবে আমরা জানতে পারি যে এখনকার hell (নরক) প্রাচীন নর্সে আছিল hel হিসাবে এবং অই হেল এর গুন বর্ণনা হইছেঃ শীতল হিসাবে; এইটা অবশ্য প্রথাগত খ্রিস্টীয় ধারণার বিপরীত হইয়া যায়! আরো আগাইলে আমরা জানতে পারি, প্রাচীন মিশরের সৌন্দর্য চর্চার অংশ হিসাবে মিহি কালা গুঁড়া চোখে লাগানি হইত; এরে তারা বলতঃ al-koh’l। আপ্নেরা সবাই জানেন এইটা এখন হইয়া গেছে সুরমা। কিন্তু অই শব্দটার কি হইল? বহু শতাব্দী পার হওনের পর, ইংরেজগণ এই শব্দটারে বানাইয়া ফেলেনঃ alcool। এবং, পরে এইটা মিহি গুঁড়ার বদলে পাতনের তরল অর্থাৎ পাঠক বুঝতেই পারতেছেন শব্দটা হইল গেলোঃ Alcohol; হ্যাঁ, অইটাই অখন মদ্য(গলা পর্যন্ত পান করুন)।

Answer শব্দের দ্বিতীয় অংশ (swear) অর্থ ধারন করে কোনো অভিযোগের বিপরীতে ভাবগম্ভীর শপথ উচ্চারণ করা, barbecue ভারতের পশ্চিম দ্বীপপুঞ্জের বিলুপ্ত তাইনো জাতির ভাষা থেকে আইছে কিন্তু অইটার মানে ছিল ‘কাঠের কাঠামো’; beg আসছে ১৩ শতকের ফরাসি কোন এক ভিক্ষুক সন্ন্যাসীর তফায়; আর আমার প্রিয় ‘Book’ শব্দটার গঠন দেখেন = book আর beech বুৎপত্তিগতভাবে, একই গাছের দুইখানা শাখা। দুইটারই Germanic শব্দমূল হইল bok- এইটা আইছে একটা ইন্দো-ইউরোপীয় শব্দমূল থেইকা; যার মানে বিচ গাছ।

এরপরে, কাপুচিন সম্প্রদায় থেকে কিভাবে cappuccino (এক্সপ্রেসো কফি) হইল, cynic শব্দের পূর্ণ ব্যবচ্ছেদ, fortnight ক্যান চোদ্দ রাতের সংক্ষিপ্ত রূপ, Gordian knot এর সেই বিখ্যাত কাহিনী, বেঞ্জামিন ফ্রাংকলিন কি বুঝাইতে harmonica বলছিলেন, hazard আগে বিপদ আনত না, পাশা খেলার নাম হিসাবে ব্যবহার হইত- এই একটার পর একটা ঘটনা, ঘটনার তর্জমা, শব্দের ভিতরের শব্দ, ইতিহাস, ঐতিহ্য সব টেনে এক বইতে নামাইছেন লেখক জি এইচ হাবীব। শব্দের জগত এবং তার ঐতিহ্যগত ইতিহাস বড় অবিস্মরণীয়!

====================
শব্দমূলকল্পদ্রুম
জি এইচ হাবীব

প্রকাশক : প্রকৃতি-পরিচয়, ঢাকা
প্রথম প্রকাশ : ২০১৩ সাল
পেইজ সংখ্যা : ৮০
প্রচ্ছদশিল্পী : সব্যসাচী হাজরা
আইএসবিএন : 9789848882979

মতামত:_

0 মন্তব্যসমূহ