“উনিশ শতকের বাংলার মফস্বল” - ‘জি. গ্রাহাম’ | অনুবাদঃ আখতার জাহান দোলন

“উনিশ শতকের বাংলার মফস্বল” - ‘জি. গ্রাহাম’ | অনুবাদঃ আখতার জাহান দোলন

খুব বেশিদিন নয়, মাত্র দেড়শত বৎসর আগের কথা। সেসময় ভারতবর্ষ ব্রিটিশ শাসনাধীনে ছিল। ব্রিটেন থেকে তরুণ প্রশাসক আসতেন ভারতবর্ষে চাকরি করার জন্য। তাদের মধ্যে একজন জি. গ্রাহাম। নিয়মিত ভাবে প্রতিদিনের জীবনযাত্রার বিবরণী লেখার অভ্যাস ছিল তার। অনেকটা ডায়েরির মত করে তিনি নিজের প্রাত্যাহিক কার্যক্রম ও ভাবনাচিন্তা লিখে রেখেছিলেন। এই লেখাগুলোতে তার সময়কালের বাংলাদেশ অঞ্চলের সময়, সমাজ ও সংস্কৃতির এক বাস্তব চিত্র পাওয়া যায়। তার লেখাগুলি নিয়ে আজকের আলোচ্য বই “উনিশ শতকের বাংলার মফস্বল”। তথ্যবহুল আকর্ষণীয় এই বইটি ইংরেজি থেকে বাংলা ভাষায় অনুবাদ করেছেন ‘আখতার জাহান দোলন’

বইটি প্রচলিত ধারার ইতিহাসগ্রন্থ নয়। একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তার বিভিন্ন কাজ-কর্মের স্বলিখিত প্রাত্যাহিক বিবরণী। লেখক ১৮৬০ সালের অক্টোবর মাসে ভারতগামী জাহাজে চড়ে বসেন। প্রায় সাড়ে ৪ মাসের ক্লান্তিকর দীর্ঘভ্রমণ শেষে উপস্থিত হন ভারতের কোলকাতা শহরে। ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে কর্মজীবন কাটিয়ে দেন। ডায়েরির মত করে লিখে রাখা  কর্মজীবনের বিভিন্ন বৈচিত্র্যময় ঘটনাগুলো বই হিসেবে প্রকাশিত হয় ১৮৭৮ সালে। “Life in The Mofussil; or, The Civilian in Lower Bengal by An Ex-Civilian” নামে বইটি দুই খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছিল।

লেখক তার প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বর্তমান বাংলাদেশ অঞ্চলের কয়েকটি এলাকায় দীর্ঘদিন থেকেছেন। বাংলার অবারিত প্রকৃতির কোলে বাস করেছেন, সাধারণ মানুষের সুখে দুঃখে পাশে থেকেছেন, এলাকার উন্নয়নে সরকারী নীতিমালা ও আদেশ-নির্দেশ নিষ্ঠার সাথে বাস্তবায়ন করেছেন, স্থানীয় প্রভাবশালী মানুষজনের সহায়তায় রাস্তা, ব্রিজ তৈরি করেছেন। আর এসব ঘটনা দৈনন্দিন জীবনের অবসরে লিখে রেখেছেন ডায়েরির পাতায় পাতায়। তিনি সচেতন ভাবে ইতিহাস রচনা করার জন্য ডায়েরি লিখেছেন এমন নয়। তাই তারিখ বা ঘটনার সূত্র বাদ দিয়েছেন। শুধুমাত্র সময় কাটানো ছিল তার প্রধান উদ্দেশ্য। আর এছাড়াও এই কিছুদিন আগে পর্যন্ত প্রত্যেক শিক্ষিত মানুষের নিকট ডায়েরি লেখা সুরুচি ও সুশিক্ষার পরিচায়ক ছিল। যদিও এখন এই অভ্যাসটি ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। মি. জি. গ্রাহাম তার আপন মনের ক্ষুধা মেটাবার জন্য যা লিখে রেখেছেন, তা আমাদের নিকট এক অজানা রহস্যময় জগতের দ্বার খুলে দেয়। এই ডায়েরির পাতায় পাতায় আমরা সেকালের সমাজের এক জীবন্ত ও মনোজ্ঞ চিত্র দেখতে পাই। এর অনেক কিছু বর্তমান সময়ের প্রান্তে দাঁড়িয়ে কল্পনা করা একেবারেই অসম্ভব।

মানুষের জীবনের, রাষ্ট্রের, সীমানার নানারকম উত্থান পতন ঘটে প্রশাসক, ম্যাজিস্ট্রেট ও কালেক্টরেটদের হাত ধরে। যা কখনো কখনো গল্পের চাইতেও আকর্ষণীয়, মনোহর বা রোমাঞ্চকর হতে পারে। যার প্রতিফলন ঘটেছে এই বইটিতে। অনুবাদকের ভূমিকা থেকে এর খানিকটা আঁচ করা যায় -

গল্পটা উনিশ শতকের শেষভাগের। যদিও আমি এটাকে 'গল্প' বললাম আসলে এটা সেই সময়ের এক ব্রিটিশ সরকারি কর্মকর্তা/ আমলার ডায়েরি। কিন্তু প্রায় দেড়শ বছর আগের সেই ডায়রির পাতায় পাতায় যে জীবনকে দেখা যায় আজকে তা যেন দারুণ এক 'গল্প' হয়ে ধরা দিয়েছে। তাতে যেমন ঘটনার চমৎকারিত্ব আছে তেমনি আছে সেগুলোর বিশদ বর্ণনা। এটা একই সাথে যেমন একটা ভ্রমণ বৃত্তান্ত, তেমনি এর পাতায় পাতায় লুকিয়ে আছে তৎকালীন সমাজ, সংস্কৃতি, ইতিহাস আর দৈনন্দিন জীবনের সমৃদ্ধ তথ্য। বিচার, প্রশাসন বা সরকারের কর্মকাণ্ডের অনেক খুঁটিনাটি বিষয় লেখক তুলে এনেছেন তাঁর অভিজ্ঞতা আর লেখনির মিথস্ক্রিয়ায়। পৃষ্ঠা- ৭

অফিসের যান্ত্রিক কার্যক্রমের সাথে সারাদিন যুক্ত থেকেও লেখকের সমাজ ও সাহিত্যবোধ হারিয়ে যায় নি। সরকারি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সারাদিনে যা করেছেন, দেখেছেন তা সন্ধ্যায় বসে বসে ডায়েরিতে লিখতে গিয়ে কখনো আবেগকে লুকিয়ে রাখেন নি। মনের জানালার পাল্লা উন্মুক্ত রেখে হাত  খুলে ধরেছেন ডায়রির সাদা পাতায়। সূচিপত্র দেখলে ব্যাপারটি বোঝা সহজ হবে।

  • সূচিপত্র
  • ভূমিকা
  • কলকাতায় শিক্ষাজীবন
  • তীরহুতের পথে
  • মোজাফফরপুরের দিনগুলো
  • মোজাফফরপুর
  • দ্বারভাঙ্গার জীবন
  • কৃষ্ণনগর
  • ঢাকা জীবনের স্মৃতি
  • শীতকালীন ভ্রমণ
  • মামলার শহর ঢাকা
  • ময়মনসিংহের পথে
  • ময়মনসিংহের স্মৃতি
  • শেষের কথা

লেখক তার কর্মজীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে দেশের কোন কোন অংশে কাজ করেছেন তা সূচীপত্র পাঠে বোঝা যাচ্ছে। ইংল্যান্ড থেকে জাহাজে এসে কলকাতায় নামার পর শুরু হয় তার ভাষা শিক্ষা বিষয়ক পড়াশোনা। সেটার নামকরণ করেছেন শিক্ষাজীবন। এরপর প্রাথমিকভাবে ভাষা ও দেশীয় সংস্কৃতির সাথে পরিচয় হওয়ার পর শুরু হয় প্রশাসনিক কর্মজীবন। বিভিন্ন বৈচিত্র্যময় সমাজ ও প্রাকৃতিক পরিবেশে কর্মকাল কাটিয়ে তিনি এক পর্যায়ে আসেন ঢাকা অঞ্চলে। বর্তমান বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা সে সময়ে কেমন ছিল, তা পাঠককে জানানোর আগ্রহ থেকে দুটি চৌম্বক অংশ উপস্থাপন করি।

‘ঢাকা জীবনের স্মৃতি’ নিবন্ধে জানা যায় ১৮৬৮ সালে মার্চের প্রথম সপ্তাহে তিনি ঢাকার ম্যাজিস্ট্রেট এবং কালেক্টর হিসেবে নিয়োগ পান। যোগদানের পরপর কমিশনার সনডার্স সাহেবের সাথে ঢাকার বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখতেছিলেন।

আমরা ময়মনসিংহ রোড ধরে নদীর দিক থেকে উত্তর দিকে হাঁটতে থাকলাম। ব্যাংক হিসেবে ব্যবহৃত একটি বাংলো, একটি চার্চ এবং কাছারি পার হলাম। কাছাড়ি বাড়িটি নতুন শৈলীতে তৈরি। আমরা একটি ব্রিজ দিয়ে ধোলাইখাল নামে একটা খাল পার হলাম। খালটি শহরের প্রায় অর্ধেকটা জুড়ে একটা অর্ধবৃত্ত তৈরি করে বুড়িগঙ্গায় গিয়ে মিলেছে। খাল পেরিয়ে দীর্ঘ প্রশস্ত রাস্তা দিয়ে এগিয়ে অবশেষে বামদিকে দেখতে পেলাম বিশাল খোলা সমান একটা জায়গা-- এটাই রেসকোর্স- এর মাঠ। আর ডানদিকে পরিত্যক্ত ঢাকা রেজিমেন্ট। ম্যালেরিয়া জ্বরে এখানকার সব সৈন্যই মারা গিয়েছিলো। সনডার্স আমাকে একটি খোলা মাঠ দেখিয়ে বললেন এটা হচ্ছে এখানকার পোলো গ্রাউন্ড। এর পেছনেই উত্তর দিকে জঙ্গল শুরু হয়েছে, যা ময়মনসিংহের দিকে বিস্তৃত। মাঝখানের বনাঞ্চলটির নাম মধুপুর। পৃষ্ঠা- ৮৩

যে দৃশ্য দেখা গেল তাতে বোঝা যায় বর্তমান ঢাকার তেজগাঁও এলাকা থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত ছিল বিস্তৃত মধুপুর বন। মানুষজনের কোন বসতি ছিল না। এটা এখন কল্পনা করা বড়ই কঠিন।

রচনার একাংশে লেখক ঢাকার মানুষদের পারস্পরিক বিভিন্ন বিভেদ বিদ্বেষের কথা বর্ণনা করছিলেন। আর্মেনিয়দের পারস্পরিক ঝগড়া,  শিয়া-সুন্নীদের ধর্মীয় বিদ্বেষ ইত্যাদি প্রসঙ্গে মামলার কথা জানিয়েছিলেন। সেসব বিবরণ দিতে গিয়ে ঢাকা শহরের প্রকৃতিগত একটু ছোট্ট বর্ণনা চোখে পড়ে।

পৌরসভা হিসেবে ঢাকার অবস্থা তখন ভালো নয়। পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা বলে কিছুই ছিলো না। পানি নিষ্কাশনের অবস্থাও তথৈবচ। রাস্থা-ঘাট ছিলো মেরামতের অযোগ্য। আর সারা শহর জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে অসংখ্য পচা কাদায় ভরা দুর্গন্ধময় ডোবা-নালা। মাটির ঘর বানাতে এই গর্তগুলো সৃষ্টি হয় আর পরে পরিত্যক্ত হয়ে এমন দুরবস্থা।-- পৃষ্ঠা- ৯৫
 উল্লেখ্য যে, ঢাকা শহর ব্রিটিশদের ভারতবর্ষে আসার আগে থেকেই রাজধানীর মর্যাদা পেয়েছিল। কিন্তু সুপেয় ও জীবাণুমুক্ত জলের বন্দোবস্ত ব্রিটিশদের আগে দেশ শাসন করা শক্তিশালী, বুদ্ধিমান, মহাপ্রতাপশালী জনদরদী দাবীদার শাসকেরা কেউ করে নি। ফলে কলেরার প্রকোপ সহজে শহরের সাধারণ জনগণের মধ্যে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ত।

কলেরার প্রাদুর্ভাব এখানকার অতি সাধারণ ব্যাপার। কেননা এলাকাবাসীরা তাদের নিশ্বাসের সাথে যে বাতাস গ্রহণ করে তা যেমন দূষিত, তেমনি তারা যে পানি পান করে, যে পানি দিয়ে গোসল করে, কাপড় ধোয় তার সবই পয়ঃনিষ্কাশনের বর্জ্য দিয়ে দূষিত। - পৃষ্ঠা ৯৭

তিনশত চারশত বৎসর আগের কথা বাদ দিন; আজকের মেট্রোপলিটন ঢাকা শহর মাত্র দেড়শত বৎসর আগে এমনই মাটির বাড়িঘর, পুতিগন্ধময় কাদায় ভরা ডোবা নালায় ভর্তি ছিল। শুধুমাত্র জমিদার ও ব্রিটিশদের জন্য ছিল কয়েকটি মাত্র পাকা বাড়ি। এ চিত্র বর্তমান কালের প্রেক্ষিতে কল্পনা করা সহজ নয়। তবে সময়ের সাথে সাথে শহরের বৈচিত্র্য, সীমানা ও কাঠামোর পরিবর্তন হবে সে কথা বলাই বাহুল্য। ব্রিটিশরা এদেশে প্রশাসনিকভাবে শাসন করার পাশাপাশি অর্থনৈতিক শোষনের জন্যই এসেছিল। আর শাসনকার্যের অন্যতম অংশ যে উন্নয়ন সে বিষয়ক আন্তরিকতা তাদের ছিল। সেজন্যই ইংরেজ-পূর্ব বিদেশী শাসকদের চাইতে ব্রিটিশ আমলের উন্নয়নের গতি অনেকটাই ছিল অধিকতর দৃশ্যমান ও অনুভবযোগ্য। ইংরেজরা ব্রিটেন থেকে জাহাজ ভর্তি করে শুধু অস্ত্র আনে নি, এনেছিল বই পত্র সহ প্রযুক্তিগত নানারকম উপাদানও।

ইংরেজ শাসনের এমন বিবিধ কার্যক্রম ও উন্নয়নের বিভিন্ন চিত্র আরও একটি বইয়ে পাওয়া যায়। প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসির মামুন লিখিত 'কোই হ্যায়' এরকম একটি বই। ইংরেজ শাসকদের লিখিত ডাইরি, রিপোর্ট, চিঠি ইত্যাদি বইটির মূল উপাদান। মুনতাসির মামুন কোনরকম কল্পনার আশ্রয় না নিয়ে সরাসরি ইংরেজদের লিখিত ডকুমেন্টের উপর ভিত্তি করে এই বইটি লিখেছেন। 'কোই হ্যায়' বইয়ের শেষ হয়েছে দেশভাগের ঠিক পরবর্তীকাল পর্যন্ত। ফলে দেশভাগ কেন হল বা কারা লাভবান হল বা জনগণের কি লাভ হল ইত্যাদি যেমন ব্রিটিশদের দৃষ্টিকোন থেকে জানা যায়, তেমন দেশভাগের পূর্ববর্তী কয়েকশত বৎসরে বাংলাদেশ অঞ্চলের মানুষের সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাষ্ট্রিয়, ধর্মীয় জীবনযাত্রার নানাবিধ চিত্রও অকপট বিবরণে পাওয়া যায়। সেখানেও একজন ব্রিটিশ ব্যক্তি ঢাকা শহরের রাস্তার পাশে কলেরায় মৃত অর্ধগলিত কুকুর শেয়ালে খাওয়া বিকৃত লাশ দেখতে পেয়েছিলেন। মানুষ তাড়াহুড়া করে কোনমতে একটু খুঁড়ে লাশ চাপা দিয়ে রাখত, আবার রাত্রিবেলায় শিয়াল কুকুর সেই লাশ টেনে বের করে ফেলত। সেই পচা গলা লাশ থেকে আবার চারপাশে জীবাণু ছড়িয়ে পড়ত। ভারতবর্ষে ব্রিটিশরা আসার পর এই বিষয়গুলো সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা শুরু করে। কিন্তু ব্রিটিশদের আগে বাংলাদেশের মানুষকে স্বাস্থ্য ও অন্যান্য বিষয়ে শিক্ষিত সচেতন করে তোলার কোন প্রচেষ্টার কথা জানা যায় না।

আমাদের আলোচ্য বইটি বেশ কৌতুহলোদ্দীপক। ইতিহাস বই না হলেও উনবিংশ শতাব্দীর বাংলাদেশ অঞ্চল সম্পর্কে অনেক তথ্য ও সামাজিক চিত্র এই বই থেকে পাওয়া যায়। জি. গ্রাহাম লেখক হিসেবে মানবিক দৃষ্টিকোণের অধিকারী। ব্রিটিশদের সম্পর্কে যে সব প্রচারণা প্রচলিত, লেখক জি. গ্রাহামের মধ্যে সে রকম কোন অস্বাভাবিক বা ভুল আচরণ দেখতে পাওয়া যায় নি। একজন চাকুরীজীবি বা প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে তার যে ধরনের কাজকর্ম করা দরকার, সরকারি আদেশ নির্দেশ পালনে যে সব পদক্ষেপ নেয়া দরকার, তিনি সেসবের বাইরে অতিরিক্ত কিছু করেন নি। সরকার কর্তৃক প্রদত্ত ক্ষমতার কোন অপব্যবহার করেন নি। বলা যায় ব্রিটিশ শাসকদের সম্পর্কে যে ধরণের চিত্র আমরা বাংলা ভাষার বিভিন্ন বইপত্র থেকে জানি, এই বইতে তার একেবারে বিপরীত চিত্র অংকিত হয়ে রয়েছে। আগ্রহী পাঠক বিশেষত নতুন প্রজন্মের পাঠকের এই বই পড়া দরকার। তাহলে ব্রিটিশদের সম্পর্কে একটা সমানুপাতিক দৃষ্টিভঙ্গি তার মননে জন্ম নেবে।

বাংলা ভাষায় ব্রিটিশ শাসনের খুঁটিনাটি বিবরণ নিয়ে ব্রিটিশ শাসকদের লেখা বই সম্ভবত খুব বেশি নেই। মুনতাসির মামুনের ‘কোই হ্যায়’ এবং আখতার জাহান দোলন অনুদিত জি. গ্রাহাম রচিত ‘উনিশ শতকের বাংলার মফস্বল’ ছাড়া আর কোন বই আছে কি না তা জানা যায় নি। তবে এই জাতীয় বই আরও বেশি প্রকাশ ও তার প্রচার হওয়া দরকার। তাহলে মানুষ ব্রিটিশ শাসনের বিভিন্ন দিক জানার পাশাপাশি বাংলাদেশ অঞ্চলের পরিবেশ ও সামাজিক দৃশ্য সম্পর্কে যথাযথ চিত্র জানতে পারবে।

প্রসঙ্গক্রমে অনুবাদকের ভাষাজ্ঞানের প্রশংসা করতেই হবে। বাংলাভাষার শব্দভাণ্ডারের উপর তার দখল ভাল। যার প্রতিফলন বইয়ের প্রতিটি বাক্যে রয়েছে। অনুবাদ সাবলীল, বোঝা যায় লেখক আন্তরিকতার সাথে অনুবাদ করেছেন। ফলে পড়তে গিয়ে কোথাও হোঁচট খেতে হয় না। প্রচ্ছদশিল্পী মোস্তাফিজ কারিগর পুরাতন বাংলার চিত্র ফুটিয়ে তুলতে গিয়ে যথাযথ কল্পনা করেছেন। তার অংকনশৈলীর উচ্চ প্রশংসা করছি। এই বইয়ে উনবিংশ শতাব্দীর বাংলাদেশ অঞ্চলের প্রাণপ্রকৃতির, জনজীবনের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে জানা যাবে। প্রচলিত ইতিহাস বইয়ের রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহের বাইরে অর্থনৈতিক ও গণমানুষের মানবিক সামাজিক জীবনযাত্রার তথা সংস্কৃতির নানারকম প্রসঙ্গের সাথে পরিচিত হওয়া যাবে। এই লক্ষ্যে আখতার জাহান দোলন অনুদিত জি. গ্রাহাম রচিত ‘উনিশ শতকের বাংলার মফস্বল’ বইয়ের ব্যাপক প্রসার প্রত্যাশা করি।

<<<<#>>>>

উনিশ শতকের বাংলার মফস্বল
জি. গ্রাহাম
অনুবাদঃ আখতার জাহান দোলন


প্রচ্ছদঃ মোস্তাফিজ কারিগর
প্রকাশকঃ দিব্যপ্রকাশ, ঢাকা
প্রকাশকালঃ ২০১৭
পৃষ্ঠাসংখ্যাঃ ৪৪
মূল্যঃ ২২৫
ISBN: 978 984 92632 0 3

মতামত:_

0 মন্তব্যসমূহ