নব্বইয়ের দশক, রেল কলোনি, প্রেম, রাজনীতি এবং একটি মধ্যবিত্ত পরিবার নিয়ে জয়দীপ দে লিখিত "ওপারে আঁধার"- রাসেল ইসলাম

নব্বইয়ের দশক, রেল কলোনি, প্রেম, রাজনীতি এবং একটি মধ্যবিত্ত পরিবার নিয়ে জয়দীপ দে লিখিত "ওপারে আঁধার"- রাসেল ইসলাম




পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ 

 
ওপারে আঁধার উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র সম্রাট। সম্রাটের বাবা রেল এর চাকরি সূত্রে রেল কলোনির একটা কোয়াটারে বসবাস করতেন। সাত ভাই বোনের মধ্যে সম্রাট ছিলেন ছয় নম্বর। ছোট থেকে মায়ের আদর বঞ্চিত সম্রাট বড়ো বোনের কাছেই বড়ো হয়েছে। একসময় মানুষ ভর্তি বাসাটা এখন খালি হয়ে থাকে পরিবারের সবাই যে যার মতো করে থাকে, বোনদের বিয়ে হয়েছে, চাচারা নিজেদের সংসার নিয়ে আলাদা হয়েছে সম্রাট আর রাজা থাকে একসাথে। রাজা সম্রাটের ছোট ভাই। সম্রাট ডিগ্রি কলেজের ভিপি। তাই নর্থ কলোনি এলাকায় তার ক্ষমতা অনেক। রেলকে ঘিরে যত ধরনের অবৈধ চোরাকারবার তাতে নিজেদের আদিপত্ব বিস্তারে মাঝেমধ্যে বিরোধী পার্টির মধ্যে ক্ষমতার রদ বদল দেখা যায়। কখনো কেউ কাউকে ধাওয়া দিয়ে এলাকা ছাড়া করে। মামুনের ধাওয়া খেয়ে সম্রাট এলাকা ছাড়া। ইস্ট কলোনি মামুনের। সম্রাট স্ক্র্যাপ ডিপো থেকে মালামাল সরায়। তার কাজে সাহায্য করে মুন্সি হামিদুল। একসময় সম্রাট এলাকা ছাড়া হয় তার থেকে ক্ষমতা নিয়ে নেয় ইস্ট কলোনির মামুন। টেন্ডার বাজি এবং রেলের তেল চুরি বিরুদ্ধে অবিভুত হয় মহিউদ্দন। যার জন্য অবরুদ্ধ হয় তিনি, স্টাফ ইউনিয়ন এর হাতে রক্তাত হয় মহিউদ্দিন। নিদ্রাময় তাকে উদ্ধার করে সম্রাট।

উপন্যাসে আর একটি চরিত্র নার্গিস। নার্গিস চরিত্রটি ব্যাপক ভাবে পাঠক কে সামনে নিয়ে যাবে। সম্রাট নার্গিসকে পছন্দ করে। নার্গিস ফকরুল সাহেবের মেয়ে এবং একজন নাট্যকর্মী। মুক্তপাখি নাটকে নন্দিনীর চরিত্রে অভিনয় করে নার্গিস। নর্থ কলোনি ছেড়ে অফিসার্স কলোনিতে নার্গিসদের কোয়ার্টার হয়েছে। এ নিয়ে অনেক খুশি ফকরুল সাহেব। সম্রাট নার্গিসকে পছন্দ করলেও, নার্গিস কখনো ভাবতো না তাকে নিয়ে। একসময় অফিসার্স কলোনির হিল্লোল নামের একজনের সাথে পরিচয় হয় নার্গিসের। দুজনের মধ্যে গড়ে উঠে সম্পর্ক। হিল্লোল ও নার্গিসকে এক সাথে রিক্সায় দেখে সম্রাট। নার্গিসের উপর সম্রাটের যে দুর্বলতা তা থেকে হিল্লোলকে চড় মারে সম্রাট। কিছুদিন পর হিল্লোল এর চাকরি হয় জার্মানির একটি প্রতিষ্ঠানে। চাকরি থেকে ফিরে এসে নার্গিসের পরিবারের কাছে প্রস্তাব পাঠাবে বলে হিল্লোল চাকরি জন্য ঢাকা মেইলে করে রওনা হয়। পরদিন শোনা যায় ঢাকা মেইল ডাকাতি হয়েছে। খবর আসে সেখান থেকে শুধু হিল্লোল নিখোঁজ। এই নিখোঁজ হওয়ার সকল দোষ এসে পরে সম্রাটের উপর। কারণ কিছুদিন আগে হিল্লোলকে চড় মেরেছিলো সম্রাট। অভিযোগ আনা হয় সম্রাটের নামে এই ডাকাতির পিছনে তারই হাত। কিছুদন পর হিল্লোলের লাশ পাওয়া যায় অভিযোগের তীর সম্রাটের দিকে আসে। অথচ এক ধনীর স্ত্রীর সাথে অবৈধ সম্পর্কের কারণে হিল্লোলকে অপহরণ করে মেরে ফেলা হয়। রহস্য উদঘাটন হয় দোষীও চিহ্নিত হয় কিন্তু টাকার কারনে হিল্লোলের বাবা মিথ্যের আশ্রয় নিয়ে সম্রাটকে দোষী করে মামলা চালায়। কারন আইন চায় সাক্ষ্য-প্রমান যা প্রকৃত দোষীর বিরুদ্ধে ছিলো না।এদিকে সি পোর্ট চালুর জন্য নেভি ও বন্দর এর স্থানীয়দের মাঝে সংঘর্ষের পর বন্দর এলাকাতে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এতে সম্রাট সহ কয়েকজন বিডিআর এর হাতে পিঠুনি খায়। মহিউদ্দিন এগিয়ে আসে রক্তাক্ত সম্রাট কে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় আড়াই মাস পর বাসায় ফেরে সম্রাট। কিছুদিন পর সম্রাট স্বাভাবিক হতে শুরু করে। এক সময় সম্রাট সুস্থ হয় কিন্তু তার পরপরেই হঠাৎ একদিন পুলিশের পিকআপ আসে সম্রাট এর বাড়িতে। নির্দোষ সম্রাট কে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। অনেক ঘুরেও সম্রাটকে ছাড়িয়ে আনা সম্ভব হয় না। মিথ্যাে অভিযোগে বন্দি হয় সম্রাট। অসমাপ্ত থাকে তার প্রেম।

পাঠক প্রতিক্রিয়াঃ

ওপারে আঁধার উপন্যাসটি একটি মিশ্রিত উপন্যাস

যেখানে লেখক রাজনীতি, প্রেম, রেল কলোনির মধ্যে বসবাস করা একটি পরিবার, এবং রেলের মধ্যে চোরাকারবারের যে মহা উৎসব সেই বিষয় বস্তু গুলো সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছেন। উপন্যাসটিতে আলাদা মাত্রা যোগ করেছে নার্গিস চরিত্রটি। যা সহজে পাঠককে সামনের দিকে নিয়ে যাবে। বইয়ের ভাষাগত দিকটি খুব সুন্দর ভাবে প্রকাশ করেছে লেখক যা পাঠকের জন্য বুঝতে অনেক সহজ হবে।

১২৭ পৃষ্ঠার এই উপন্যাসটি পড়তে শুরু করলে না শেষ করে উঠতেই চাইবে না সহজে। মোট কথা দারুণ একটি উপন্যাস এটা।

বাইন্ডিংঃ বাইন্ডিং নিয়ে কিছু বলতে চাই না, কিংবদন্তী পাবলিকেশন এর বই মানে বলার মতো কোন গ্যাপ থাকে না।

=======


বইঃ ওপারে আঁধার
লেখকঃ জয়দীপ দে
প্রকাশনীঃ কিংবদন্তী পাবলিকেশন
ধরনঃ উপন্যাস

মতামত:_

0 মন্তব্যসমূহ