'সব বৃক্ষ মহোদয় হয় না' কাব্য ও সাহিত্যের বিবিধ প্রসঙ্গে তরুণ কবি মোকলেছুর রহমানের সাক্ষাৎকার

'সব বৃক্ষ মহোদয় হয় না' কাব্য ও সাহিত্যের বিবিধ প্রসঙ্গে তরুণ কবি মোকলেছুর রহমানের সাক্ষাৎকার



১৷ আপনার প্রথম বই প্রকাশের অভিজ্ঞতা জানতে চাই।

মোকলেছুর রহমান: আমার প্রথম কবিতার বই 'সব বৃক্ষ মহোদয় হয় না' প্রকাশের অভিজ্ঞতা দারুণ রোমাঞ্চকর, নির্ঘুম বহু রাত, দিনের পর দিন নিবিড়ভাবে লেগে থেকে সম্পন্ন হয়েছে, যেন আমি এবং আমার চিন্তা জগৎ মিলে-মিশে একাকার হয়ে আছে।

২৷ সম্প্রতি আপনার কবিতার বই প্রকাশিত হলো। আপনার অনুভূতি জানতে চাই।

মোকলেছুর রহমান: একটা নতুন দিনের তাজা, প্রাণবন্ত ও উচ্ছাস জাগানিয়ার মতো।

৩৷ বই প্রকাশের সিদ্ধান্তে উপনীত হলেন কীভাবে?

মোকলেছুর রহমান: বই প্রকাশের সিদ্ধান্ত এক বা দু- বছরের নয়, অনেক বছর আগের তাও আট বা নয় বছর হবে। তখন বই প্রকাশের চিন্তা মাথায় আসে, পান্ডুলিপি গোছানো শুরু করে দেই। ২০২০ খ্রিস্টাব্দে পান্ডুলিপি গোছানো কাজ শেষ করি এরপর তা কাটা-ছেঁড়া শুরু কোন কোন কবিতা বাদ দেই, নতুন কবিতা সংযুক্ত করি, শব্দ খেলার নেশায় বহু শব্দ বাদ দিয়ে নতুন শব্দ বন্দনার আনন্দে হয়েছি আত্মহারা। এভাবে ২০২১ গেল, ২০২২ গেল, ২০২৩ এ আর পারলাম না, বই প্রকাশের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করে ফেললাম। বইটার প্রকাশকালে আত্মানুভূতি বিস্ময়কর।

৪৷ বইটি প্রকাশ করতে প্রকাশক নিয়ে জটিলতায় পড়তে হয়েছিলো কি?

মোকলেছুর রহমান: বই প্রকাশ করতে গিয়ে প্রকাশক নিয়ে জটিলতায় পড়িনি।

৫৷ নিজের লেখার প্রতি আত্মবিশ্বাস কতটুকু?

মোকলেছুর রহমান: নিজের লেখার প্রতি গভীর আত্মবিশ্বাস আছে বলেই লিখি, তা শত ভাগেরও অধিক।

৬৷ অনেকে বলেন লেখার ক্ষেত্রে প্রস্তুতির প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে আপনারা প্রস্তুতির কথা জানতে চাই।

মোকলেছুর রহমান: যেকোন কাজ করতে গেলে প্রস্তুতির প্রয়োজন, লেখাতো আরো বিশেষ কাজ। সেক্ষেত্রে বলবো প্রস্তুতি সবসময় থাকে, তবু প্রস্তুত হই প্রত্যেক নতুন সময়ে মিনিটে-মিনিটে। কোন লেখা এক বসায় সমাপ্ত হয় আবার কোনটা দিনের পর দিন এমনকি বছরের পর বছর লেগে যায়। তখন প্রস্তুতির সাথে লেখা সম্পন্ন করার তাগিদসহ অপেক্ষায় থাকি।

৭৷ কবিতায় আপনি কোন দিকটাকে বেশি গুরুত্ব দিতে চেয়েছেন।

মোকলেছুর রহমান: কবিতার বিষয় ভাবনায় বৈচিত্র, যথোপোযুক্ত শব্দ শৈলীর নান্দনিক বুনন।

৮৷ পাণ্ডুলিপি গোছানোর ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েছেন?

মোকলেছুর রহমান: লেখা, লেখা এবং বাছাইকৃত বিষয় বৈচিত্রে উত্তীর্ণ লেখা। কবিতার নাম নির্বাচন, যথোপোযুক্ত বইয়ের নামকরণ করা এবং পারফেক্ট শব্দ কবিতার জন্য সিলেক্ট করে বাক্যে ব্যবহার করা।

৯৷ শিল্প না কি পাঠক, আপনার দায়বদ্ধতা কার কাছে?

মোকলেছুর রহমান: 'শিল্পের জন্য শিল্প’  অথবা 'কবিতার জন্য কবিতা' আমি ওরকম বলতে চাই না বা ওরকম পুরোপুরি ভাবিও না। বরং আমি বলতে চাই- মানুষের জন্য শিল্প, মানুষের জন্য কবিতা। মানুষ না থাকলে শিল্পের, কবিতার বা সৌন্দর্যের কে উপভোগ বা রসাচ্ছাদন করবে? মানুষই তো মূখ্য তবে তা  শিল্পকে খারিজ করে নয়। লেখায় শিল্প অনুপস্থিত থাকলে পাঠক যেমন থাকবে না অনুরুপ  শিল্প উপস্থিত, পাঠক নেই এমনটাও হয় না। পাঠক সময়-শ্রম-অর্থ ব্যয় করে কোন কিছু পাঠ করলো আর তাতে কিছুই সে পেল না, তাহলে কেন সেটা পাঠ করবে? লেখক বা কবিকে সেটা সযত্নে মাথায় রাখতে হবে। আমি শিল্প তো অবশ্যই পাঠকের নিকটও আমার অনেক দায়বদ্ধতা আছে।


১০৷ একজন পাঠক হিসেবে যখন বইটি দেখছেন, তখন বইটিকে কেমন মনে হচ্ছে?

মোকলেছুর রহমান: প্রথমত আমি একজন পাঠক তারপর কবি, লেখক বা সম্পাদক। অন্যের লেখার বরাবরই পাঠক আর প্রত্যেক লেখকই নিজ-নিজ লেখারও প্রথম পাঠক। সে হিসেবে বলবো একজন পাঠক হয়ে যখন নিজের কবিতা বা  রচিত বইটি পড়ি আমাকে ছুঁয়ে যায়, আন্দোলিত করে, ভালো লাগার রসদ জোগায় গভীর জীবন বোধের আখ্যানে। ভিন্ন মাত্রা দোলায় বাস্তব আর কল্পনার অপরূপ মেল-বন্ধনে। বলবো অসাধারন। আমি অত্যন্ত আশাবাদী, পাঠকদের আমার কবিতা ভালো লাগবে, বইটি পাঠক প্রিয়তা পাবে আরও বিশ্বাস করি পাঠকদের ভালো লাগার অনেক কিছুই আছে।

১১৷ অধিকাংশ লেখক বইমেলাকে কেন্দ্র করে বই প্রকাশ করে, বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখেন?

মোকলেছুর রহমান: খুবই পজেটিভলি দেখি। ধার্মিকরা যেমন তাদের নিজ-নিজ ধর্মীয় উৎসবে মেতে ওঠে, আনন্দ করে। তেমন লেখকদের ধর্ম লেখা-লেখি করা, তা প্রকাশ করা, সাহিত্য আড্ডা দেয়া, সাহিত্য সম্মেলন করা, বই মেলা করা বা নতুন বইয়ের উৎসব করা। সেহেতু  বই মেলাকে কেন্দ্র করে নতুন বই প্রকাশ একজন লেখক এর অধিক আনন্দ বা উৎসব হয় না। বই মেলা বছরে মোটাদাগে একবারই হয়, এতে লেখকরা সারা বছর লিখে যায় মেলায় প্রকাশ করবে বলে। এতে লেখক-লেখকে, লেখক-পাঠক,  লেখক- প্রকাশকদের মহা মিলন মেলায় পরিণত হয়। বই মেলা ছাড়াও সারা বছর নতুন বই প্রকাশতো চলতেই থাকে এতে নেগেটিভ কিছু দেখি না।

১২৷ লেখালেখি নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

মোকলেছুর রহমান: পাঠ ও লেখালেখির মাত্রা বাড়িয়ে প্রতি মুহুর্তে নতুনভাবে নতুন লেখা লিখে যাওয়া। মহাবিশ্ব, পৃথিবী, মানুষের জীবন আরো নিবিড়-নিখুঁতভাবে উপলব্ধির করায়ত্ব করে, জীবনের, আসমানী নয় জমিনী মানুষ হয়ে জমিনের হাসি-কান্না কলমের নিবে ধরা। যুগযন্ত্রনায় ধাতস্ত হয়ে লিখনী অর্জন করা। লেখা ও যাপিত জীবন লেখক হিসেবে আমার পরম ব্রত।

১৩। আমাদেরকে সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন। আপনার কবিজীবনের শনৈঃ শনৈঃ উন্নতি কামনা করি।

মোকলেছুর রহমান: আপনাকেও ধন্যবাদ।

 

* পড়ুন মোকলেছুর রহমান লিখিত 'সব বৃক্ষ মহোদয় হয় না' প্রকাশের খবর

মতামত:_

0 মন্তব্যসমূহ