প্রতিটি কবি দিনের শেষে একজন মানুষ, ভীষণভাবে রক্ত মাংসের, আবেগে, উন্নাসিকতায়, রাজনীতিতে, যৌনতায়। হরেক গলি, উপগলি, অন্ধগলির জালিকা বিস্তার তাঁর মননে, তাঁর স্বত্তায়। কবিরাও মনুষ্যজন্মের ব্যতিক্রম নন, নন কবি সাম্য রাইয়ানও।
‘তারারা’ পত্রিকার জুন ২০২৩, নবম বর্ষ, দ্বিতীয় সংখ্যা যেন আচমকাই ফ্লাডলাইটে ভরে দিয়েছে প্রিয় কবি সাম্য রাইয়ানের মেধার হরেক অলিগলি। তাঁর সৃষ্টির ব্যপ্তিকে বহুরঞ্জিত (অতিরঞ্জিত নয়) করে তুলেছেন কিছু শ্রদ্ধেয় কলমেরা। ছুঁয়ে ছুঁয়ে গেছেন, গভীর বিশ্লেষণে ডুবেছেন কেউ কেউ।
কবি সাম্যকে কতটুকুই বা জানি! কিছু বিচ্ছিন্ন কবিতা আর বিভিন্ন ওয়েবজিন ঢুঁড়ে ‘হালকা রোদের দুপুর’। টের পেয়েছিলাম, রোমান্টিকতা কতটা সুদূরপ্রসারী, হৃদয়াবেগ কতটা অতলস্পর্শি! কিন্তু ওটুকু পড়ে ওঁর বহুমাত্রিকতা স্পর্শ করতে পারলাম কই! সাহিত্যের আলোকপত্র ‘তারারা’ এই বৃত্ত খানিকটা সম্পূর্ণ করলো। ‘খানিকটা’ এই কারণেই বললাম, কারণ ওঁর কাব্যগ্রন্থগুলি এখনও এই পাঠকের পড়া হয়নি।
কবি সাম্য বয়সে তরুণ। কিন্তু বিশেষ সংখ্যার গবেষণালব্ধ প্রবন্ধ-নিবন্ধগুলো পড়ে বুঝলাম, তাঁর সাহিত্যের ব্যাপ্তি প্রশস্ততর। যথার্থই লিখেছেন ফেরদৌস লিপি,
“সাম্য – অভিজ্ঞতাগুলো তাঁর এমনই বাস্তব – যেন পুড়ে যাচ্ছে কোনো সিগারেট। আর ধোঁয়ার অন্ধকারে জন্মাচ্ছে অবধারিত কবিতা। কবিতাগুলো যেন উঠে আসে শব্দের পেট চিড়ে মাকড়সার সুতোর মতো মুহূর্তের পাঠককে জড়িয়ে ধরে।”
সত্যিই তো, ‘মুহূর্তের পাঠক‘ আমি! একদা জড়িয়ে ধরেছিল ‘হালকা রোদের দুপুর’। আর সেইজন্যেই অন্যান্য বহু বহু প্রসঙ্গ রিলেট করতে পারেনি এই পাঠক, ওই সাম্যের বইগুলি না পড়ার কারণেই। তবে হ্যাঁ, তৃষ্ণা বেড়ে গেল বড়। সাম্যকে নিমগ্ন পাঠের পিপাসা।
কথাপ্রসঙ্গে দুটি বিন্দু এখানে উত্থাপন করতেই হচ্ছে।
প্রথমত, প্রায় সমসময়ে দুটি পত্রিকা কবি সাম্য রাইয়ানকে নিয়ে কাজ করলেন। একটি মুদ্রিত (তারারা), অন্যটি ডিজিটাল (এবং)। খুব কাকতালীয় ঘটনা হলেও আমার মত অবোধ পাঠকের কাছে পরম প্রাপ্তি। প্রাপ্তির বেশ কিছুটা হিস্যা কিন্তু কবিরও! তরুণ কবিকে নিয়ে ‘বিশেষ সংখ্যা’ কিন্তু সচরাচর দেখা যায় না। বিশেষ সংখ্যার কবি হতে গেলে কবিকে আরও অনেকটা পথ পার হতে হয়। (এই প্রসঙ্গে ক্রৌঞ্চদীপ ও হেমন্তলোকের কবি শ্রী জহর সেন মজুমদারের বিশেষ সংখ্যা মনে পরছে।) তবে অন্যান্য বাংলা পত্রিকাও কি বাংলার উজ্জ্বল তরুণ কবিদের নিয়ে সিরিয়াসলি কাজ করতে এগিয়ে আসবেন!
দ্বিতীয়ত, বেশ কিছু লেখায় এবং শেষের কবি পরিচিতিতে লেখা আছে কবির জন্ম নব্বই দশকের ডিসেম্বর মাসে অথবা ৩০শে ডিসেম্বরে। (একটি দশকে দশটি ৩০ ডিসেম্বর আসে) বারবার একই জিনিষ রিপিট হওয়াতে মনে হল, এটা কি সত্যিই কাকতালীয়! যদিও কবির জন্মসাল পাঠকের কাছে কোনো ম্যাটার করেনা, তবুও জন্মসাল উল্লেখ করা যেত৷ (সম্পাদকের নোট: দ্বিতীয় সংস্করণে জীবনপঞ্জিতে জন্মসাল যুক্ত করা হয়েছে)
আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও সাধুবাদ জানাই ‘তারারা’ পত্রিকার সম্পাদক শ্রী আশুতোষ বিশ্বাস মহাশয়কে, এমন একটি সংখ্যায় কবিকে আলোকিত করবার জন্য ও পাঠক হিসেবে আমাকে আলোড়িত করার জন্য।
শুভ কামনা জানাই, টিম ‘তারারা’ ও কবি সাম্য রাইয়ানকে।
**********
তারারা
বর্ষ ৯, সংখ্যা ২
সাম্য রাইয়ান বিশেষ সংখ্যা
প্রথম সংস্করণ: জুন ২০২৩
দ্বিতীয় সংস্করণ: সেপ্টেম্বর ২০২৩
সম্পাদক: আশুতোষ বিশ্বাস
সহ-সম্পাদক: স্বাগতা বিশ্বাস
ভারত থেকে প্রকাশিত৷
দাম: ২০০ টাকা
**********
* 'তারারা' পত্রিকার সাম্য রাইয়ান সংখ্যা নিয়ে আরেকটি আলোচনা 'তারারা' পত্রিকার সাম্য রাইয়ান বিশেষ সংখ্যার পাঠপ্রতিক্রিয়া - অনিরুদ্ধ সুব্রত
0 মন্তব্যসমূহ
মার্জিত মন্তব্য প্রত্যাশিত। নীতিমালা, স্বীকারোক্তি, ই-মেইল ফর্ম