‘কবিতা আমার ইচ্ছার ফল’— গোবিন্দলাল হালদারের কবিতাপাঠ
‘একটি নিসিন্দা পাতার ঘুম’ গোবিন্দলাল হালদার রচিত ৫৬টি কবিতার সম্মেলন। নিরীক্ষাপ্রবণ কবিতাগুলো যাপিত জীবন, প্রেম-বিচ্ছেদ, রীতি-নীতি, সংশয় ও আধ্যাত্মিক বিষয়ের উপর নির্ভরশীল। ‘নোনতা জল এবং উত্তরাধুনিকতা’ কবিতায় তিনি মন্তব্য করেন,
উত্তরাধুনিকতা, আমার ইচ্ছার ফল
কথাটির যথার্থতা সম্পর্কে আধুনিক কবিদের তৎকালীন বিশ্লেষণও যথেষ্ট! সাহিত্যিক নরেশ গুহ আধুনিকতার যুগে বলেছিলেন,
কবিতার স্বাতন্ত্র্যতা নাই
সুধীন্দ্রনাথ দত্ত বলেন,
কবিতা কবির পূর্বপুরুষ, কবি কাব্যের জন্মদাতা নয়
আদি শঙ্করাচার্যও কবিতা সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন,
কবিতা অত সহজে বোঝা যায় না, এমনকি কখনো কখনো কবি নিজেও এর অর্ন্তনিহিত অর্থ বোঝেন না
কবিতার জন্মলগ্ন সম্পর্কে মহাকবি বাল্মীকি’র
মা নিষাদ প্রতিষ্ঠাং...
ইত্যাদি অনূভুতিও কিন্তু অতীন্দ্রিয়! গোবিন্দলাল হালদারের কবিতাপাঠ প্রসঙ্গে উত্তরাধুনিকতা সম্পর্কে কবির মন্তব্য যথার্থ বলে মনে করি।
পৃথিবীতে যখন যুদ্ধ-বিগ্রহ, রক্তারক্তি, ধর্ষণ, হানাহানি চলছে তখন একজন কবি নিভৃতে যতনে কবিতার পঙ্ক্তি আওরাচ্ছেন; বিষয়টি যতটা না সহজ তার চেয়েও বাস্তবতার নিরীক্ষা কতটা ভয়ঙ্কর সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না। কবিতায় দ্রোহ-বিদ্রোহ, প্রেম-বিচ্ছেদ থাকবে এটি স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু কবিতা যখন জনমানুষের হাতিয়ার হয়ে দাঁড়ায় তখন কিন্তু কবি-কবিতা, মানুষ ও চরাচর সবমিলে একাকার হয়ে যায়।
পোস্টমর্টেমের সময় তুমি যদি উৎসুক থাকো, দেখতে চাও।
লাশকাটা ঘরের রৈরব দৃশ্য-দৃশ্যান্তর। তবে পাথর গুরুর অশ্রু
নিবারণ মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে যেয়ো। হার্ট এ্যাটাক ইদানীং
মামুলি রোগ।
‘একটি নিসিন্দা পাতার ঘুম’ জীবনের উৎকণ্ঠা দূর করে উৎকর্ষতার কথা বলে, সম্মোহন করে, ভেদাভেদের নিগূঢ় সত্যের তফাৎ বোঝায়; রহস্যময়ী কবিতার আধ্যাত্মিক কার্যাবলী বিশ্লেষণ করলে, পাঠক বুঝতে পারেন কবিতার সান্নিধ্য কতটা জরুরী! বোধদয় ও চিন্তাসূত্রের রূপময় বৈচিত্র্য ঘটায়। তিনি নিজেই বলেন....
আমি এবার চলে যাব তাদের কাছে
যারা অনুভূতির শব্দে কথা বলে।
পঙ্ক্তিগুলো সেইসব পাঠককে উদ্বুদ্ধ করবে, যারা চিন্তা করতে ভালোবাসেন, কবিতার গভীরতায় পৌঁছতে চান এবং জানতে চান তার অন্তর্নিহিত অর্থ! কবিতার পাঠককে বলা হয়, নিবৃত্তিমার্গের পাঠক —এই সত্যটি আমি স্বীকার করি; কারণ কবিতা হলো অতিমানসের অতীন্দ্রিয় সত্ত্বা! পাঠক, এই সত্ত্বাটিকে যখন অনূভুতির অঙ্কনে সাজিয়ে তোলেন— তখন তাকে সিদ্ধ বা সৎ বলা চলে। এ প্রক্রিয়া একজন পাঠককে বোধের উচ্চস্তরে নিয়ে এলে তাকেই নিবৃত্তিমার্গের পাঠক বলা যায়। কবিতার পাঠক হওয়া অতটা সহজ নয়! দীর্ঘ প্রয়াস দরকার, ধৈর্য্য ও বোধের সমন্বয় দরকার। জীবনানন্দ দাশ বলেছিলেন,
যতদূর পার পৃথিবীর ভালো কবিতাগুলো পড়ার চেষ্টা কর।
কিন্তু ভালো-মন্দের বেড়াজালে এখন কবিতার পাঠক দুর্বল হয়ে পড়ছে। বর্তমানে কবিতার প্রতি পাঠকের দুর্বলতা তার দোষ পাঠকের নিজের, এ কথা সুধীনন্দ্রনাথ দত্ত বলেন। আমাদের অলস মস্তিষ্ক ভালো কিছু ধারণ করার সক্ষমতা রাখে না। এজন্য, ‘একটি নিসিন্দা পাতার ঘুম’ বুদ্ধ পাঠকে পাঠ করার জন্য বলব, পঙ্ক্তিগুলির যত্ন নিলে কবিতাগুলো আরো প্রখর, উৎকর্ষমূলক হতে পারতো; এক্ষেত্রে কবির ভূমিকা অনস্বীকার্য।
**********
একটি নিসিন্দা পাতার ঘুম
গোবিন্দলাল হালদার
প্রচ্ছদ: আল নোমান
প্রথম প্রকাশ: ফেব্রুয়ারি ২০২৪
প্রকাশক: হরিৎপত্র প্রকাশন, ঢাকা।
বিনিময় মূল্য: ২০০ টাকা
পৃষ্ঠা: ৬৪
ISBN : 978-984-98324-0-9
0 মন্তব্যসমূহ
মার্জিত মন্তব্য প্রত্যাশিত। নীতিমালা, স্বীকারোক্তি, ই-মেইল ফর্ম