কালীপুর/ইজ্জতনগর: সমৃদ্ধ অতীত - আনোয়ারুল ইসলাম চৌধুরী

কালীপুর/ইজ্জতনগর: সমৃদ্ধ অতীত - আনোয়ারুল ইসলাম চৌধুরী বইয়ের প্রচ্ছদ


কিছু কথা লিখে রাখতে হয়। ইতিহাসের কথা বলছি। সময় যদি হয় অনেক দূরের, স্মৃতির, সবটুকু হয়তো পাওয়া যায় না। তাই সময়ে সময়ে লিপিবদ্ধ হওয়া জরুরি। এই জনপদের পারিবারিক ইতিহাস ও পরিচয় যদি লিখে রাখা যায়, তাহলে মানুষের সামাজিক ইতিহাস সমৃদ্ধ হবে। গবেষকদের জন্য ধারণা মিলবে। অবারিত হবে নতুন ইতিহাস লেখায়।

দীর্ঘ প্রায় পাঁচ দশক ধরে আইনের কঠিন-জটিল ব্যাখ্যায় নিজেকে তিনি ব্যাপৃত রেখেছেন। পিছনে শৈশব-কৈশোরের ফেলে আসা গ্রাম কালীপুর/ইজ্জতনগরের সোঁদা গন্ধ তাকে অবচেতনে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। মায়াবী জনপদ কালীপুর/ইজ্জতনগরের ভোরের প্রভা, স্নিগ্ধ দুপুর মোহন সন্ধ্যার ছবি তার মনের ফ্ল্যাশব্যাকে ভেসেছে। কালীপুর/ইজ্জতনগরের অপ্রকাশিত ইতিহাস প্রকাশের অনাদি অপেক্ষা লেখকের কলমের খোঁচায় উদ্ভাসিত হয়েছে পাঠকের সামনে, লেখক আইনের মানুষ হয়েও এ বইয়ের পাতায় পাতায় ইতিহাসের এক মননশীল পথিক। তিনি আগামী প্রজন্মের কাছে একটি পথরেখা সৃষ্টির প্রয়াস পেয়েছেন।

লেখকের মতো পথরেখা সৃষ্টিতে আমাদের গ্রাম বাংলার যতবেশি মননশীল মানুষ ব্রতী হবেন- আমাদের আগামী প্রজন্ম ততবেশি ইতিহাস সমৃদ্ধ এক ঐতিহ্যবাহী জাতিসত্তার গর্বিত অংশীদার হবেন। এই বই নিবিষ্ট পাঠকদের গ্রাম-বাংলার এক মোহন সুরে আবেশিত করে রাখবে তা নিশ্চিত।
- মেজর (অব.) মুহাম্মদ এমদাদুল ইসলাম, কথাসাহিত্যিক


 ইতিহাস নয়, ঠিক ইতিহাসের মতো স্মৃতিময় এই গদ্যকথা।


একটি জনপদের কিংবা একটি গ্রামের এমন কথাই তো পরবর্তীকালের মানুষের জন্য লিখে রাখা, যা থেকে কিছু চিহ্ন ছড়িয়ে থাকবে। পৃথিবীর ইতিহাসে অথবা মানুষের ঐতিহ্যে এই ভাবনার মানদণ্ড বুঝে নেয়া যাবে। অনুসন্ধিৎসু মানুষের কাছে এই আকরখণ্ড শুধু বই নয় চরাচর ও পূর্ব-পুরুষদের ধারাবাহিক বসবাসরীতির বিস্তার। ঘটনার দিনপঞ্জি।

'কালীপুর' হয়তো 'ইজ্জতনগর' নয় যেখানে, সেখানে একই গ্রামের নামে দুটোই প্রচলিত হয়ে যায়। এই ইচ্ছা-অনিচ্ছার দোলাচলে সবই সম্ভব। মানুষই তো সভ্যতাকে নিজেদের মতো করে ভাবে। প্রভাব দিয়ে তাকে গড়ে তুলে। বিভক্তি হয়ে পড়ে মানুষে মানুষে। কেউ ভেবেছেন। কেউ নাম রেখেছেন। কেউ ভাসিয়ে গেছেন জীবন ভেলা। আমাদের সমৃদ্ধ হবার সময় অতীতের এই কলহাস্য নিরন্তর সুখ দিয়ে যায়।

বিপন্ন-বিস্ময়েরকালে আইনজীবী আনোয়ারুল ইসলাম চৌধুরীর নিখুঁত পর্যবেক্ষণ আমাদেরকে অতীতের এক সুরের কাছে নিয়ে যাবে। মোহিত হবার প্রয়াসে এই আয়োজন।
- মনিরুল মনির, কবি


প্রাক্-কথন

প্রবাদ বাক্য আছে, "A good beginning is half done". অথচ যেভাবেই শুরু করতে চাই না কেন, মনে হচ্ছে সব শুধুই হ-য-ব-র-ল। অবশ্য এর কারণটাও অত্যন্ত স্পষ্ট। আমার স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় পেরিয়ে ওকালতি জীবনে ৪৩ বছরে কখনোই লিখিনি- না দু'ছত্র পদ্য, না এক মুঠো গদ্য; স্রেফ মামলার আরজি, জবাব, দরখাস্ত বা আপত্তি ছাড়া। সুতরাং হঠাৎ ৭২ বছর বয়সে লেখার আগ্রহ দেখা দিলে শুরুতেই খানিকটা জট পাকিয়ে যাবে-এ আর বিচিত্র কী! কীভাবে যে শুরু করি! আর বিষয়বস্তুই বা কীভাবে নির্ধারণ করি!

প্রায় ৬/৭ মাস বা তারও কিছু আগে, প্রকৌশলী জনাব গোলাম সরোয়ার চৌধুরী আমার দিদার মার্কেটস্থ চেম্বারে এসে পরিচয় পর্ব শেষ করে জানান, তিনি বাঁশখালীর বিগ ভলিউম নামক গ্রন্থ প্রকাশনার প্রচেষ্টায় কাজ করছেন এবং এ ব্যাপারে আমার পক্ষে কোন তথ্য ভিত্তিক ঘটনা, সম্ভব হলে, তাঁকে দেয়ার জন্য অনুরোধ করেন। নিজ জন্মস্থানের এরূপ তথ্যলিপি নির্মাণে অনুপ্রাণিত করার জন্য তাঁকে জানাই, কোন লেখা দিতে না পারলেও আমার পক্ষে যতটুকু সম্ভব আর্থিক অনুদান দিয়ে হলেও তাঁকে উৎসাহিত করার চেষ্টা করব।

অল্প কিছুদিন পর ঐ গ্রন্থের প্রকাশনার উদ্যোগ হিসেবে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে তিনি আমাকেও দাওয়াত করেন। সেখানে বাঁশখালীর কৃতী ছাত্রদের পুরস্কৃত করা হয়। এরপর বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সম্পৃক্ততার বিষয়ে অবহিত করে তাঁর কাজের অগ্রগতির কথা জানিয়ে, আমার সাথে ইতোমধ্যে আলাপের ভিত্তিতে কিছু তথ্যভিত্তিক লেখা প্রদান করার জন্য পুনরায় অনুরোধ জানান। তখন ভেবেছিলাম, এত বছর ওকালতির জীবনে কোনদিন কোন কথা বলতে পিছপা হইনি। কিন্ত মহাশয় সন্ন্যাসীর আদেশক্রমে সবকিছু সংযোজন করে একটি রুদ্ধ ঘরে এক মাস ধরে এর নির্মাণ কাজ চালান। কোন বিশেষ কারণবশতঃ উক্ত স্থান হতে মায়ের প্রতিমূর্তি প্রায় ৪৫ বছর পূর্বে কালীপুর গ্রামের বর্তমান স্থানে স্থানান্তরিত করা হয় এবং পূর্ব স্থান প্রায় ধংস হয়ে যায়।” অরবিন্দু চৌধুরীর বংশধরেরা এক সময়ে এর দায়িত্ব পালন করেন।

উল্লেখিত কাহিনীর পুরোটাই কিংবদন্তী। আবার কাহিনীটি স্ব-বিরোধী বলেও প্রতীয়মান হয়। প্রথমে উল্লেখ করা হয়েছে ১৭১০ সালে কালীপুর গ্রামে মন্দিরটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ফলে প্রশ্ন আসে, মন্দির আগে, নাকি গ্রামের নাম আগে? কিংবা, মন্দির প্রতিষ্ঠার পূর্বে স্থানটির নামই বা কি ছিল? মন্দির প্রতিষ্ঠার সাথে সাথেই কি স্থানটির 'কালীপুর' নামকরণ করা হয়েছিল? আবার, কাহিনীর শেষাংশে দাবি করা হয়েছে, মন্দির প্রতিষ্ঠা নয়, বরং ৪৫ বছর পূর্বে কালী মন্দিরটি স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। তবে কখন থেকে ৪৫ বছর গণনা শুরু হয়েছে তা যেমন দূর্বোধ্য, তেমনি আবার মন্দির 'প্রতিষ্ঠা' নয় 'স্থানান্তরিত' বলা হয়েছে। সুতরাং কালীপুর নামকরণের পেছনে কিংবদন্তীর ভূমিকা নিয়ে প্রচুর সন্দেহের অবকাশ থেকেই যায়। অথচ প্রফেসর আব্দুল করিমের বইয়ে (পৃষ্ঠা ৪৪) সতের শতকেও 'ইজ্জতনগর' গ্রামের উল্লেখ পাওয়া যায়। গুল-ই-বাকাউলীর কবি নাওয়াজিশ খান বাঁশখালীর যে সকল গ্রামের তালিকা দেন, তাতে 'কালীপুর' এবং 'ইজ্জতনগর' উভয় গ্রামের নাম আছে। প্রফেসর আব্দুল করিম সাহেব মনে করেছেন 'কালীপুর' এবং 'ইজ্জতনগর' দুটি ভিন্ন গ্রাম ছিল। বর্তমান কালীপুর সদর রাস্তার পশ্চিমাংশ ছিল হিন্দু বসতি প্রধান এবং পূর্বাংশ মুসলমান বসতি প্রধান। তাই কালীপুরের তৎকালীন পূর্বাংশের নাম 'ইজ্জতনগর' এবং পশ্চিমাংশের নাম 'কালীপুর' ছিল।

পরে কোন এক সময় এক কারসাজিতে 'কালীপুর' নাম প্রাধান্য পেয়েছে। ইজ্জতনগরের বৈশিষ্ট্য বর্ণনায় তিনি বলেছেন, এই গ্রামে অনেক মুসলমান সূফি দরবেশ জন্মগ্রহণ করেন, যাঁদের মাজার এখনও দৃষ্ট হয়। যে প্রাচীন শিক্ষিত মুসলমানগণের নাম তিনি পেয়েছেন, তাঁরাও ইজ্জতনগরের অধিবাসী ছিলেন। যেমন মৌলানা আব্দুল হাকিম, তাঁর ভাইপো কাজী আব্দুল হামিদ, কাজী উল কুযযাত, মৌলানা আব্দুল বারী

এলাকা দুটো নয়, একটাই। লেখার ধারাবাহিকতা রক্ষায় অলি বুজুর্গগণের প্রসঙ্গটা যখন এসেই গেল, তখন তাঁদের দিয়েই কালীপুর/ইজ্জতনগরের তথ্য বিবরণী উপস্থাপনের সূচনা করা যেতে পারে।


আনোয়ারুল ইসলাম চৌধুরী

তার জন্ম ২৭ জুলাই ১৯৫০ সালে। পিতা- মরহুম মোহাং মোস্তাক আহমদ চৌধুরী, মাতা- মরহুম মমতাজ মহল বেগম।

কালীপুরে প্রাইমারি ও এজহারুল হক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ৮ম শ্রেণী পাশ করে ১৯৬৪ সালে চট্টগ্রাম সরকারি মুসলিম হাই স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৬৬ সালে এসএসসি, ১৯৬৮ সালে চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি, ১৯৬৮-৬৯ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ অনার্স (রাষ্ট্র বিজ্ঞান) করতে যান, কিন্তু গণ-আন্দোলনে কারফিউ জারির পর পিতার নির্দেশে চট্টগ্রাম প্রত্যাবর্তন। ১৯৭০ সালে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে বিএ এবং ১৯৭৪ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ (রাষ্ট্র বিজ্ঞান) পাশ করেন।

১৯৭৪ সাল থেকেই ওমর গণি এম ই এস কলেজে রাষ্ট্র বিজ্ঞান অধ্যাপনা শুরু করেন। ১৯৭৫ সালে চেকোস্লো ভাকিয়ান সাইনটিফিক এন্ড টেকনিক্যাল কনসালটেন্টে চাকুরী হয়ে যায়। ১৯৭৭ সালে চট্টগ্রাম আইন কলেজ থেকে এলএলবি সম্পন্ন করেন এবং ১৯৭৮ সালে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতিতে যোগদান করেন এবং ১৯৭৯ সালে সমিতিতে এডভোকেট হিসেবে তালিকা ভুক্তি হন। ১৯৮১ সালে ঢাকা হাইকোর্টে তালিকাভুক্তি হন এবং চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির কার্যকরী পরিষদে সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৩ সালে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির কার্যকরী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে সভাপতি নির্বাচিত হন। সদস্য চট্টগ্রাম কর আইনজীবী সমিতি, আজীবন সদস্য আছেন চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, মুসলিম এডুকেশন সোসাইটি, চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশন, চট্টগ্রাম কলেজ প্রাক্তন ছাত্র পরিষদ, সরকারি মুসলিম হাই স্কুল প্রাক্তন ছাত্র পরিষদ, বাঁশখালী ফাউন্ডেশন হজ্বযাত্রী কল্যাণ পরিষদ।

সুলতানুল আরেফিন হযরত সুলতান বায়েজীদ বোস্তামী (র.) দরগাহ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক (২০০৫-২০১৯), প্রতিষ্ঠাতা সহ-সভাপতি, 'উত্তরণ' ক্লাব, কালীপুর, আহ্বায়ক- ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী শাখা (১৯৯৩), প্রধান বিচারপতি- চট্টলবীর এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর উদ্যোগে আয়োজিত চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রতিষ্ঠিত জনতার আদালত (২০০৬), সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আলাউল হল, শাখা (১৯৭৩), চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্যদের হলঘর রক্ষায় সন্ত্রাস দমন আইনের মামলায় প্রধান আসামী (১৯৯৩) হন। বেকসুর খালাস ২০১২ সাল। সরকার ও ভেন্ডারদের বিরুদ্ধে মামলা করে দোতর্ফা ডিক্রি লাভে অর্জিত আদালত ভবনের পাহাড়ে নির্মিত দোয়েল ভবন, এনেক্স-১, এনেক্স-২ ও শাপলা ভবনের জায়গা তারই কীর্তি। মূখ্য নির্বাচনী কর্মকর্তা হিসাবে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতিকে স্মরণকালের শ্রেষ্ঠ নির্বাচন উপহার ২০১৯ সাল।

তাঁর সহধর্মিনী রৌশন আফরোজ বেগম, যাঁর অনুপ্রেরণায় এই বই লেখা। তাঁদের দু-সন্তানের মধ্যে প্রথমজন এমবিবিএস ডাক্তার, এমএস তৃতীয় পার্ট ইউরোলোজি, দ্বিতীয়জন- আইনজীবী, ঢাকা হাইকোর্টে আইনজীবী পেশায় নিয়োজিত।

ইজ্জতনগরের বাসিন্দা ছিলেন। তাঁদের পর আসেন বিখ্যাত জমিদার ও সরকারি উকিল মুনসী জাফর আলী, তাঁর জামাতা আনোয়ার আলী (সদর আলা বা সদর আমীন) এবং তাঁর দৌহিত্র স্বনামধন্য শাহ মোহাম্মদ বদিউল আলম। প্রফেসর করিম সাহেবের উপরোক্ত ব্যাখ্যার যথার্থতা, তথা রাস্তার পশ্চিমাংশ হিন্দু বসতি প্রধান এবং পূর্বাংশ মুসলমান বসতি প্রধান- এর সমর্থনে জোরালো প্রমাণ মেলে না। কেননা, কালীপুর গ্রামের রাস্তার পশ্চিম পাশে, কেবলমাত্র দিঘীর উত্তর পাশে খুবই ছোট 'শীল পাড়া' ও পশ্চিমাংশে একমাত্র হিন্দু পাড়া এবং সদর আমীন হাটের পশ্চিমাংশে 'জুই পাড়া' ব্যতীত বাদবাকী অংশে যেমন বিশাল মুসলমান বসতি যথা 'বাউগ্যা পাড়া' (বর্তমানে বাগোয়ান পাড়া), 'চৌধুরী বাড়ি' 'ছুইরগ্যা পাড়া' সহ আরও মুসলমান বসতি বিদ্যমান ছিল এবং আছে, তেমনি রাস্তার পূর্ব পাশে ও পশ্চিম পাশের চেয়ে হিন্দু বসতি কম নয়। যেমন, 'ধর পাড়া', 'কুলাল পাড়া' ইত্যাদি হিন্দু বসতি এই অংশে দেখা যায়। হ্যাঁ, তবে মুসলমান সংখ্যায় বেশী ছিল।

সুতরাং, বসতির ব্যাখ্যার চাইতে অলি বুজুর্গগণের যাঁরা ছিলেন বা আছেন তাঁদের প্রায় সবাই রাস্তার পূর্ব পাশে অবস্থিত বিধায় সেই দৃষ্টিকোণটাই অধিকতর গ্রহণযোগ্য মনে হয়। পরবর্তীতে যখন গ্রামটিতে ডাকঘর স্থাপিত হয়, তখন ডাকঘরের নামকরণ নিয়ে হিন্দু মুসলমানদের মধ্যে প্রবল বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। মুসলমানদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, পুরো বাঁশখালী থানায় যতজন অলি বুজুর্গের মাজার আছে, তার চেয়ে ঢের বেশী অলি বুজুর্গের আধ্যাত্মিক পদচারণায় গ্রামটি সমৃদ্ধ হয়েছে বিধায় তাঁদের সম্মানার্থে ডাকঘরের নামকরণ 'ইজ্জতনগর' হওয়ায় বাঞ্চনীয়।

অপরদিকে হিন্দুরা দাবি করেন, গ্রামের নাম কালীপুর রেখে ডাকঘর ভিন্ন নামে হলে মনে হবে গ্রামে কোন ডাকঘর নেই। পরিশেষে, গ্রামের পরিচিত আগে থেকেই 'কালীপুর' নামে প্রাধান্য পাওয়ায় তা অক্ষুণ্ণ রেখে ডাকঘরের নাম 'ইজ্জতনগর' মেনে নেয়া হয়।

ফলে, এখনও অনেকে গ্রাম ও ডাকঘরের নাম হিসেবে 'ইজ্জতনগর' ব্যবহার করেন, আবার অনেকে 'গ্রাম- কালীপুর, ডাকঘর- ইজ্জতনগর' লেখেন। সে যা-ই হোক, এটা ঠিক যে, যা কালীপুর তা-ই ইজ্জতনগর-এলাকা দুটো নয়, একটাই। লেখার ধারাবাহিকতা রক্ষায় অলি বুজুর্গগণের প্রসঙ্গটা যখন এসেই গেল, তখন তাঁদের দিয়েই কালীপুর/ইজ্জতনগরের তথ্য বিবরণী উপস্থাপনের সূচনা করা যেতে পারে।

::::::::::

কালীপুর/ইজ্জতনগর: সমৃদ্ধ অতীত
আনোয়ারুল ইসলাম চৌধুরী


প্রথম প্রকাশ : অক্টোবর ২০২১
প্রচ্ছদ : আল নোমান
প্রকাশক :  খড়িমাটি
বিনিময় : ২৫০ টাকা

মতামত:_

0 মন্তব্যসমূহ