লেখার শিল্প, লেখকের সংকল্প- প্রথমটি লক্ষ্য হলে, দ্বিতীয়টি পথ। সংকল্প কথাটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে পরিশ্রম, পরিকল্পনা, প্রত্যয়, দৃঢ়তা, বুদ্ধিমত্তাসহ অস্তিত্বকে অর্থবহ করার প্রেরণা। লেখকের সংকল্পের মানে লেখকের প্রকল্প। এর ধারাক্রম আছে পর্যায় আছে, পরম্পরা আছে। ধাপে ধাপে লেখক সেটি অর্জন করেন এবং কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে লিখনকর্মটিকে শিল্পের স্তরে সম্পন্নতা দান করেন। লেখার জন্য দেখাটাও লেখকের জীবন-যাপনের অংশ। এই দেখা কেবল চর্মচক্ষের ব্যাপার নয়, চাই অন্তর্দৃষ্টি।
অন্তর্দৃষ্টিতে সংবেদনশীলতা, তীক্ষ্ণতা ও তীব্রতার জন্যও চাই অনুশীলন, চাই মহৎ লেখকদের সঙ্গ, যে সঙ্গ আমরা তাঁদের লেখালেখি, জীবন-যাপন ও জীবন-চর্যা থেকে পেতে পারি।
লিখনক্রিয়ার সঙ্গে যে মানুষটি জড়িয়ে পড়েছেন বা জড়িয়ে পড়তে চাইছেন তাঁর জন্য এই বইয়ে বিন্যস্ত প্রতিটি প্রবন্ধের গুরুত্ব অসীম।
দ্বিতীয় সংস্করণের মুখপত্র
তোমরা যে সকল প্রস্তাব লিখিয়া থাক, তাহার পূর্বাপর ঐক্য থাকে না, ভাবের প্রগাঢ়তা থাকে না এবং রচনাও পরিপাটি শুদ্ধ হয় না। বিশেষতঃ যিনি যে বিষয়ে রচনা করেন, তিনি তাহা নিয়মিত রূপে শিক্ষা ও তদ্বিবিষয়ে সবিশেষ তত্ত্বানুসন্ধান না করিয়াই তাহাতে প্রবৃত্ত হন। -অক্ষয়কুমার দত্ত
খুব অল্প সময়ের মধ্যে বইটির প্রথম সংস্করণ শেষ হয়ে যায়। সম্ভবত বিষয়বস্তুর আকর্ষণ এর প্রধান কারণ। বইটি পড়ে অনেক পাঠক তাঁদের ভালো লাগার কথা আমাদের জানিয়েছেন। স্বযাচিতভাবে, পাঠকদের এই জানানোটা ছিল যেমন আন্তরিক, তেমনি উদ্দীপনায় স্নিগ্ধ। এজন্যে আমরা আনন্দিত। পাঠকদের কাছেও কৃতজ্ঞ। তরুণপ্রজন্মের মধ্যে যাঁরা লেখক হতে চান, সাহিত্যিক হবার স্বপ্ন দেখেন, মনস্বিতায় বড় হবার আকাঙ্ক্ষা লালন করেন এবং মনুষ্যত্বের মর্যাদা ও উচ্চমূল্যবোধ রক্ষায় প্রতিজ্ঞ- এমন বই তাঁদের জন্যে খুবই প্রয়োজন ছিল। এটা বোঝা গেল তাঁদের উষ্ণ অনুভূতি প্রকাশের মধ্যদিয়ে।
সত্য যে, সাহিত্য করবার আকাঙ্ক্ষা হচ্ছে মানুষের মহত্তম আকাঙ্ক্ষার একটি। তার জন্য মানুষকে ছাড়তে হয় অনেক কিছু। বাইরের অসংখ্য প্রলোভন, ভিতরের নানা চাহিদা, কামনার আর্তি, লালসার অতৃপ্তি-প্রতিমুহূর্তে আমাদের মনকে অভিভূত করে রাখে। আমরা কজন এমন অজস্র ভোগের, লোভের জীবন্ত উপকরণ পায়ে ঠেলতে পারি? মানুষ তার জীবনকে যে উচ্চতায় ও মহত্ত্বে অনুভব করতে চায়, সেই ভিত্তির ওপরই সৃষ্টি হয় সাহিত্য। সন্দেহ কী-জৈব প্রয়োজনের আকর্ষণ শুদ্ধ বুদ্ধির কর্ষণে মননের বিচার সেখানে বড় হয়ে ওঠে। শুধু তাই নয়, সেখানে মনের বহুবিধ চাওয়া, প্রতিদিনের অসংখ্য ক্ষুধা উপেক্ষা করতে হয় দৃঢ় প্রত্যয়ে। এটা একদিন-দুদিনের উপেক্ষায় নয়, সুদীর্ঘ কালের বিপুল ত্যাগের মধ্যদিয়ে, মানুষ তার প্রতিভায় সভ্যতার নানা উপকরণ থেকে মননের এই মুক্তি ঘটিয়েছে। কাজেই সাহিত্য হচ্ছে মানুষের বুদ্ধির সবচেয়ে বড় সংস্কৃতি। মানুষ যে আয়নার মধ্যে নিজেকে দেখতে ভালোবাসে, এই সংস্কৃতি তার প্রতিরূপ। এই সংস্কৃতির মূল্য না-দিয়ে সাহিত্য করা যায় না। সাহিত্যের এই একটা দিক, যাকে বলা যায় তার মানস-সম্পদ। সাহিত্যের অন্য একটা দিক আছে, যেটা তার শারীরিক সৌন্দর্য। প্রকরণগত সেই কলাকৌশলও বিশেষ সচেতনতার সঙ্গে মন দিয়ে শিখতে হয়। শুরুতে অক্ষয়কুমার দত্তের উদ্ধৃত বক্তব্যে পাওয়া যাচ্ছে এই দরকারি কথার ইঙ্গিত।
বলাবাহুল্য, তরুণ বন্ধুদের কথা ভেবেই আমরা বইটির পরিকল্পনা করেছিলাম।
কিন্তু সেটা গড়ে ওঠে সম্পূর্ণভাবে ইউরোপীয় লেখকদের রচনায়। এ ব্যাপারে আমাদের কোনো কোনো সহৃদয় বন্ধু পরামর্শ দেন যে, বাঙালি লেখকদের রচনা নিয়ে আমরা যেন এই বিষয়বস্তু ও পরিকল্পনায় এ বইয়ের দ্বিতীয় খণ্ড প্রকাশের উদ্যোগ নিই। খোলা মনে বলে নেওয়া ভালো, বাঙালি কোনো বড় লেখকের রচনায় এ দরের লেখা খুঁজে পাওয়া কঠিন। তবু আমাদের পরিকল্পিত বিষয়বস্তুর সঙ্গে অভিন্ন আত্মীয়তায় যুক্ত বাঙালি মনীষীদের কিছু লেখা আলাদাভাবে চিন্তা না-করে বইটির দ্বিতীয় সংস্করণে সংযোজন করা গেল। আশা করা যায়, পরিমাণে সামান্য হলেও পূর্ব- পশ্চিমের মুক্তমনের তন্নিষ্ঠ খবর এ সংকলন থেকে পাওয়া যাবে।
প্রথম সংস্করণে আমাদের অনিচ্ছাকৃত কিছু ভুল-ত্রুটি ছিল। 'সংবেদ'-এর প্রকাশক, আমাদের অগ্রজ বন্ধু এবং কথাসাহিত্যিক পারভেজ হোসেন এ বইয়ের দ্বিতীয় সংস্করণও যত্নের সঙ্গে প্রকাশ করছেন। এ জন্যে তাঁকে ধন্যবাদ।
--
মুহম্মদ সাইফুল ইসলাম
হামীম কামরুল হক
প্রথম সংস্করণের মুখপত্রে লেখকদ্বয় নিজেদের শিল্পভাবনার স্বরূপ ব্যাখ্যা করেছেন।
মুখপত্র
সমসাময়িক প্রত্যয় ও ধারণার আবরণ ভেদ করিয়াই চিরকাল সভ্যতার অগ্রগতি। যে সভ্যতা তাহা পারে না, তাহার ভবিষ্যৎ অন্ধকার। সেইরূপ সভ্যতা কিছুকাল অগ্রসর হইবার পর বন্ধ্যাত্বপ্রাপ্ত হয়। প্রত্যয়ের সঞ্চালনের জন্য প্রয়োজন একদল সক্রিয় দার্শনিকের। যেমন ইন্ধন-পরিচালিত যান-বাহন সঞ্চালনের জন্য একদল সক্রিয় যন্ত্রকুশলীর প্রয়োজন। -হোয়াইটহেড
জাঁ জ্যাক রুশো তাঁর রাষ্ট্রতত্ত্ব বিষয়ে বই লেখা নিয়ে পাঠকদের তরফ থেকে একটা সাওয়াল জবাব করেছিলেন। বলেছিলেন, কেউ যদি তাঁকে রাষ্ট্রতত্ত্ব বিষয়ে বই লেখার জন্য প্রশ্ন করেন যে, তিনি এ নিয়ে মাথা ঘামাতে চাইছেন কেন-তিনি তো রাষ্ট্রের শাসকশ্রেণীর কেউ নন। রুশো বলেছেন যে, যেহেতু তিনি এর বাইরের লোক-কাজেই এ বিষয়ে কথা বলা তাঁরই সাজে। কেননা রাষ্ট্র-শাসকদের পক্ষে কথা না-বলে কাজ করার সুযোগ রয়েছে শতভাগ-যেটা একজন লেখকের নেই।
রুশের এই বক্তব্যের ভিন্ন গূঢ়ার্থ থাকতে পারে। তবে একটা অর্থ সম্ভবত এই যে, মানুষের সমাজ নানা সমস্যায় আকীর্ণ। প্রতি মুহূর্তে তাকে সেইসব সমস্যার মোকাবেলা করতে হয়। সে-সবের সমাধানও করতে হয় নিজের চিন্তায় বিচার-বুদ্ধি খাটিয়ে। লেখক সমাজ-রাষ্ট্রের শাসক শ্রেণির কেউ না-হতে পারেন, কিন্তু তিনি এর সঙ্গে নিঃসম্পর্কিত নন। সমাজের সংকট, রাষ্ট্রের দুর্গতি তাঁকেও আঘাত করে। তিনিও সেই আঘাতে বেদনা অনুভব করেন। কাজেই তিনিও তার কর্তব্য স্থির করেন। সমাজের অসংগতি জীবননের আকাঙ্ক্ষা মানুষকে কর্মে প্রবৃত্ত করে। লেখকের পক্ষে চিন্তাভাবনা করাটাই তাঁর প্রধান কাজ। জীবনকে চিন্তারাজ্যে উন্নীত করাই তাঁর লেখকধর্ম। সমকালের অগণিত সমস্যার দু-একটির সুমীমাংসা করে যাওয়া লেখক মাত্রেরই মহৎ কর্তব্য।
এই কর্তব্য ছাড়া একজন লেখকের বড় কী সংকল্প থাকতে পারে আমরা জানি না। তবে কোনো লেখকের লেখা পড়েই কেউ মানুষ হয়েছেন কিংবা কোনো সমাজের বিরাট পরিবর্তন হয়েছেন- এমন কথা শোনা যায়নি। শুধু কোনো লেখকের লেখা পড়ে মানবসমাজে কোনোকালে কোনো অঘটনসংঘটন হয়েছে-এ কথাও কেউ বলতে পারবে না। বই পড়া প্রসঙ্গে যাঁরা বড় বড় কথা বলেন, তাঁদের কথা কান পেতে শোনা যেতে পারে। কিন্তু অতিরিক্ত করে যখন তাঁরা বলেন যে, ফরাসি বিপ্লবের মূলে ছিল রুশো-ভলতেয়ার, তখন তাঁদের কথা অত্যন্ত মামুলি ঠেকে। তাঁরা নিতান্ত পুঁথিপড়া লোক-মনুষ্যচরিত্র তাঁদের জানা নেই। ফরাসি বিপ্লবের মূলে ছিল বুরবোঁ শাসকশ্রেণির অত্যাচার-রুশো-ভলতেয়ারের গ্রন্থ নয়। আমেরিকার বিপ্লবের মূলে ছিল ব্রিটিশের নৃশংসতা-রুশবিপ্লব জারের চরম নিগ্রহের ফল-মার্কসের তত্ত্ব নয়। শেক্সপিয়র, গ্যেটে, তলস্তয়, রবীন্দ্রনাথ-মানুষের চরিত্র পাল্টাতে পারেননি অথচ লেখক হিসেবে পৃথিবীতে এঁরাই শ্রেষ্ঠ। সক্রেটিস প্লেটো অ্যারিস্টটলের পুঁথি পড়ে তার মর্ম বুঝতে পারা যে-কোনো বিদ্বানের পক্ষে বিশেষ শ্লাঘার বিষয়, কিন্তু সে বিদ্যা আমাদের মনোজগতের পরিবর্তনে কাজে লাগেনি। তবুও সারা পৃথিবীর মানুষ স্বীকার করেছে যে, এঁরাই মানব জাতির শ্রেষ্ঠ শিক্ষক।
সক্রেটিসের কালে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব-কোলাহল ছিল; তখনকার নাগরিকেরা প্রতিষ্ঠা লাভের জন্য সেই রাজনৈতিক দ্বন্দ্বসংঘাতে মেতে উঠত। কিন্তু সেই অন্ধ মত্ততা সক্রেটিসকে স্পর্শ করেনি। নিজেকে তিনি অনায়াসে দূরে সরিয়ে রাখতে পেরেছিলেন। কেননা রাজনীতি বিশ্লেষণে তাঁর লেখকসত্তার সঙ্গে যুক্ত ছিল ন্যায়, সত্য ও বিবেকনিষ্ঠা। ন্যায়ের প্রশ্নে তাঁর বিবেকী জিজ্ঞাসা ধারালো তরবারির মতো উঁচিয়ে থাকত। আজকের দিনেও আমরা অনেকে সক্রেটিসের চিন্তাভাবনার কথা বেশ গর্বের সঙ্গে বলতে পছন্দ করি, কিন্তু তাঁর মহৎচরিত্রের কথা উচ্চারণ করি না।
মহৎচরিত্রের মূলে থাকে ন্যায়, সত্য ও বিবেকের সমন্বয়। আবার লেখক হলে এর সঙ্গে যুক্ত হয় গভীর অধ্যয়ন আর মনননিষ্ঠা। প্রত্যেক লেখক-শিল্পীর জীবন- যাপনে, আচার-আচারণে, কথায় ও লেখায় এসবের প্রকাশ ঘটে চলে। সাধারণের সঙ্গে ওঠাবসায় আর চলাফেরায় তিনি বাধাহীন, কিন্তু আচরণে তাঁর স্বাতন্ত্র্য হয়ে ওঠে বিশেষভাবে লক্ষযোগ্য। সমাজ এই স্বাতন্ত্র্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। কেননা এমন ব্যক্তিত্ব সমাজের অলংকার।
আমরা আজ যে সমাজে বসবাস করছি-সেই সমাজে এই ব্যক্তিত্বসম্পন্ন লেখকের অভাব অত্যন্ত প্রত্যক্ষ। আমরা যে আজ সে-রকম লেখকের সাক্ষাৎ পাই না, তার এক প্রধান কারণ, আমাদের রাজনীতি। আমাদের রাজনীতির প্রধান কথা দলাদলি। এই দলীয় রাজনীতি যত ভয়ংকরই হোক-এর সঙ্গে যুক্ত না-হলে আজ আর কারো পক্ষে যেন প্রতিষ্ঠা লাভের আশা নেই। জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভের আকাঙ্ক্ষায় আমাদের লেখকেরা আজ এই রাজনীতির মাঠে নেমে পড়েছেন। এঁদের রাজনীতির রাঙা লাঠির জোর এঁদের প্রতিকথায় প্রতি আচরণে প্রকাশ পায়। শুধু তাই নয়, এখানে আমাদের লেখকেরা প্রায় সকলেই কপালে তিলক কেটে দলীয় রাজনীতির নামাবলী গায়ে জড়িয়ে, লম্বা টিকি নেড়ে, মিথ্যাকে সত্য, সত্যকে মিথ্যা বলে প্রচার করছেন। এই প্রচারে যিনি যত বেশি পারদর্শী, বিশ্বস্ত এবং নির্ভরযোগ্য, তিনি তত বেশি প্রভাবশালী, তিনি তত বেশি ক্ষমতাবান, তিনি তত বেশি প্রতিষ্ঠিত ও মর্যাদাবান।
লেখকের ব্যবসা যে ফেরিওয়ালার ব্যবসা নয়, সাহিত্য-যে এক হাটে কিনে অন্য হাটে বিক্রি করার জিনিস নয়-সাহিত্যের ফসল-যে আপন মনের জমিতে ফলাতে হয়-এই কথা আমাদের কে বোঝাবে? দলীয় রাজনীতির সুবিধা এই যে, কারো কোনো চিন্তা করতে হয় না-সেখানে সকলের সঙ্গে সকলের একমত হওয়াই নিয়ম।
কারো কোনো বিষয়ে দ্বিমত থাকলে চলবে না। দলপ্রধান যা বলছেন, সেটাই মান্য-সেটাই বেদবাক্য। যিনি দ্বিমত করবেন তিনি দলদ্রোহী হবেন। এই ঝুঁকি জ্ঞানত কেউ গ্রহণ করেন না। কেননা সেখানে সকলের স্বার্থ এক। দ্বিমত করলে তিনি- যে ঘি-মাখানোর জন্য প্রলুব্ধ হয়ে এরকম রাজনৈতিক দলে প্রবেশ করেছেন, তাতে বঞ্চিত হতে পারেন। তখন জীবন অসার্থক হবে! অতএব দলের কথা নীরবে শোনাই শ্রেয়। চিন্তামুক্তির জন্ম এইখানে। বলাবাহুল্য, চিন্তামুক্ত লেখক আর জলশূন্য কলস একই কথা। বললে অন্যায় হবে না যে, এই লেখকের সংখ্যাই আজ আমাদের সমাজে বিপুল। কাজেই সমকালীন সংকটে বিক্ষত, আগামীকালের চিন্তায় আশান্বিত, নতুন মূল্যবোধের সাধনায় তন্নিষ্ঠ এমন লেখকের দেখা আজ আর সহসা মিলছে না।
এই ঢাকা শহরে প্রতিদিন অজস্র সভাসমিতি আয়োজিত অজস্র বক্তৃতামালা ও কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। প্রতিটি সভায় থাকে সভাপতি, প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথি, মঞ্চে কত ভিড়! সেখানে কত লেখক-শিল্পী, কত কবি-বুদ্ধিজীবী। তাঁদের বক্তৃতায় মঞ্চ কম্পিত হয়ে ওঠে। কিন্তু এসবের যোগফল কী? যোগফল শূন্য। কেননা এখানে কেউই নিজের কথা প্রাণ খুলে বলেন না। নিজের কথা না বললে সারবান চিন্তার প্রকাশ হয় না। ফলে তাঁদের কথায় কারো হৃদয় স্পর্শ করে না। বিকৃত মনের কথা অমৃত সমান-মানবসভ্যতায় এমনটা শোনা যায়নি। উনিশ শতকে অক্ষয় দত্ত-বঙ্কিমচন্দ্র চিত্তশুদ্ধির কথা বলেছিলেন। আজ আর আমাদের কেউ তেমন কথা শোনাতে পারেন না।
ঠিক এই কারণে আমাদের সমকালের কোনো সমস্যাই আজ আমাদের সাহিত্যে চিরকালের হয়ে ফুটতে দেখা যায় না। এক ঢাকা শহর থেকেই দৈনিক, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক, ত্রৈমাসিক অজস্র পত্রপত্রিকা প্রকাশিত হয়। এইসব পত্রপত্রিকায় প্রতিদিনের বৈষয়িক মানুষের ঝগড়াঝাটি, মারামারি, কাটাকাটি, খুনাখুনি, দুর্নীতি সমেত একান্ত ব্যক্তিগত অন্ধস্বার্থের জন্য হাজারো অপকর্মের সংবাদ ভিন্ন অন্য কিছু পাওয়া যায় না। আজ আমাদের সাহিত্যে আমাদের যুগধর্মের বৈশিষ্ট্য ও সমস্যার প্রতিফলন দেখা যায় না। আজ আমরা সকলেই যেন নীতিধর্ষক!
প্রত্যেক কালের মৌল সমস্যার প্রকৃতি ভিন্ন রকম। উনিশ শতকে আমরা কতকগুলি মৌল সমস্যা লক্ষ করি। সতীদাহ, বিধবাবিবাহ, স্ত্রীশিক্ষা, পরাধীনতা, মধ্যবিত্তের সঙ্কট ইত্যাদি। বিশ শতকের সমস্যা আরো প্রকট। হিন্দু-মুসলমান বিরোধ, সাম্প্রদায়িকতা, ফ্যাসিবাদ, জাতীয়তাবাদ, সাম্যবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, নারীমুক্তি প্রভৃতি সমস্যা উক্ত দুই শতকের সাহিত্যে প্রত্যক্ষ। বিশ শতকের শেষে মৌলবাদ, বিশ্বায়ন, উত্তরাধুনিকতা, নয়া উপনিবেশবাদ প্রভৃতি আমাদের চিন্তাজগতে নতুন উপসর্গ হয়ে দেখা দেয়। বস্তুত, আমরা সুচিন্তা থেকে মুক্ত হতে পারি কিন্তু দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত হওয়া অসম্ভব। তাই দেখা যায়, দুর্নীতির মতো অনির্বাণ ব্যাধি আজ আমাদের প্রতিদিনের সঙ্গী। আমাদের রোগজীর্ণ অসুস্থ রাজনীতি এসবের প্রতিকারে অক্ষম। আমাদের আজকের সাহিত্যে এইসব সমস্যার প্রতিফলন নেই বললেই চলে। ব্রিটিশ আমলে, এমনকি পাকিস্তানপর্বেও আমাদের সাহিত্যে যে মহৎসৃষ্টির প্রয়াস দেখা যায় নাটকে, কবিতায়, সঙ্গীতে, উপন্যাসে, গল্পে এবং চিন্তাধর্মী রচনায়ও যে সমস্যার হৃদয়স্পর্শী কথা শোনা যায়, স্বাধীন বাংলাদেশের সাহিত্য সে তুলনায় আজ যেন মরা নদীর মতো নিষ্প্রাণ। আজ নানা বিষয় নিয়ে অজস্র গবেষণা হচ্ছে, কিন্তু গবেষণাপত্রগুলি পড়ে দেখলে বোঝা যায়, এগুলি কেবল ডিগ্রির জন্য লিখিত হয়েছে। চাকরিতে পদ-উন্নতির জন্য রচিত হয়েছে। বড় চাকরির লোভে, প্রতিষ্ঠা পাবার ঐকান্তিক আগ্রহে ডিগ্রির বাজার আজ পণ্যের বাজারে পরিণত হয়েছে। সত্য-সন্ধান আজ কেথাও চোখে পড়ে না। সমকালের সমস্যা ও সম্ভাবনার কথা যে সাহিত্যে নেই তা চিরকালের সাহিত্য হতে পারে না। কেননা কালের প্রভাব ও প্রত্যয়ই সাহিত্যের আলোকিত প্রাণ। সমকালের প্রত্যয় ও ধারণা উপক্ষো করা লেখকের ধর্ম নয়। সমকাল লেখকের মনের ওপর যে প্রভাব বিস্তার করে তারই সমুন্নত রূপ প্রতিফলিত হয় সাহিত্যে। এমন সাহিত্যে লেখকের চিন্তাভাবনা, সত্যনিষ্ঠা, গভীর অধ্যয়ন, অনুসন্ধিৎসা, উৎকণ্ঠা ও আবেগের যে বিস্তার থাকে, তাতেই আমরা লেখকের ব্যক্তিত্বের উত্তাপ অনুভব করি এবং তাঁরই ব্যক্তিত্ব ও দৃষ্টি দিয়ে আমরা সমকালীন জগতকে দেখতে পাই।
আজকের বাংলাদেশে আমরা দেখছি-লেখকেরা পুরস্কারের পেছনে ছুটছেন। টাকা ধরার জন্য অন্ধ হয়ে নিজেকে বিক্রি করে দিচ্ছেন। তাঁরা কোনো কমিটির চেয়ারম্যান হওযার জন্য, কোনো কমিটির সদস্য হওয়ার জন্য, কোনো বড় প্রতিষ্ঠানের প্রধান হওয়ার জন্য একেবারে নিজের সর্বস্ব ধ্বংশ করে দিয়ে মাথা নত করে সরকারের চরণধুলায় লুটিয়ে পড়ছেন। আজ আমাদের এক-একজন লেখক-বুদ্ধিজীবী যেন এক- একটা কমেডির চরিত্র। এইসব চরিত্র নিয়ে রচিত হচ্ছে এক-একটি নাটক-অদৃশ্য নয়-বাস্তব-যার প্রত্যেকটি দৃশ্য দেখে হাসি পায়, আবার একই সঙ্গে মানুসের অধঃপতনে হৃদয় রক্তাক্ত হয়। রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, কর্ম যখন প্রবল আকার গরজি উঠিয়া ঢাকে চারিধার বাসনা যখন বিপুল ধুলায় অন্ধ করিয়া অবোধে ভুলায়।
রবীন্দ্রনাথের সার্ধশততম জন্মবার্ষিকীতে আমাদের এ কথা কে শোনাবে যে, আমাদের অন্ধ-প্রলুব্ধ বাসনা নানা পদের মোহে আচ্ছন্ন হয়ে গেছে!
রবীন্দ্রনাথের অমর বাণী আমাদের অন্তরকে পরিষ্কার করতে পারেনি। তাঁর গান, তাঁর কবিতা, তাঁর একজীবনে সৃষ্ট দুই জীবনের পরিশ্রম ও প্রতিভালব্ধ সাহিত্যকর্ম আমাদের মনুষ্যত্ব অর্জনে সহায়ক হতে পারেনি। রবীন্দ্রনাথকে বিশ্বমুখী করেছিল তাঁর আপন গৌরবময় ঐতিহ্য এবং ভবিষ্যৎ-অমুখী নিষ্পত্রতা। তিনি কোনো রাজনীতির ধ্বজা ধরে জীবনের বৈষয়িক লোলুপতায় নিজেকে বিলিয়ে দেননি। অথচ তিনিও যে প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন, তার আর্থিক সংকট নিরসনের জন্য তাঁকে দেশে-দেশে বক্তৃতা করে বেড়াতে হয়েছিল। রবীন্দ্রনাথের কথা আজ আমরা চিৎকার করে বলছি, কিন্তু তাঁর চরিত্রের দৃঢ়তা সৌন্দর্য, তাঁর সাহিত্যের সত্যপ্রত্যয় আমরা নিজেরা গ্রহণ করিনি। আমরা গ্রহণ করিনি তাঁর নৈতিক চরিত্রের মাধুর্য। তাঁর অমৃতময় গান আমরা প্রতিদিন গাইছি কিন্তু সে গানের অর্থ জানি না-জানলেও তা মানি না। তাঁর 'আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি' - প্রতিদিন গাইছি কিন্তু সেটা কণ্ঠে-আমাদের অন্তরে এ গানের কোনো আবেদন নেই। অর্থাৎ ও-গান গেয়ে আমরা যেন পক্ষান্তরে বাস্তবত, এই কথা বলছি যে, এদেশের মানুষের প্রতি আমাদের কোনো ভালোবাসা নেই, কর্তব্য নেই। সত্য যে, রবীন্দ্রনাথের আলোকিত চেতনা আমাদের মানুষ করেনি। এইসব কারণে, আজ আমরা তাঁর কথা যত চিৎকার করেই বলি না কেন-তাঁর সার্ধশততম জন্মবার্ষিকী নিষ্ফল হতে বাধ্য!
এই অল্প কিছু দিন আগেও বাংলা একাডেমীতে পুরস্কার নিতে এসে আমাদের একজন সুপরিচিত কবি বললেন যে, তিনি পুরস্কারের জন্য লেখেন! তাঁর এই কথাটির প্রতিবাদ কিংবা সমালোচনা কেউ করেননি। এর থেকে বোঝা যায়, কথাটি তিনি ঠিকই বলেছেন। কেননা তাঁর কথাটি ছিল একালের লেখক-সাহিত্যিকদের মনের কথা। এটাই একালের সাহিত্য ও সাহিত্যিকদের পরিণতি। সমাজে কার কত টাকা, কে কত বিত্তশালী, কার বাড়ি-গাড়ি কয়টা, কার মাসিক বেতন কত, বেতন বৃদ্ধির হার কত-মাসে উপরি আয় কি-রকম, কে কোন্ পদে চাকরি করে-এইসব হিসেব- নিকেশ দিয়েই আমরা মানুষের মূল্য নির্ণয় করতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছি। লেখকরাও সামাজিক জীব। তাই কি সমাজের এই অভ্যস্ত রীতি তাঁর নিয়তি? ব্র্যাডলে বলেছিলেন, সে মানুষ মানুষই নয় যে সামাজিক নয়-সে মানুষ পশুর চেয়েও অধম সামাজিকের চেয়ে যে অধিক নয়।
রবীন্দ্রনাথের কালেই টাকার মূল্যে মানুষকে বোঝার অভ্যাস তৈরি হয়েছিল। তিনি ব্যাপারটা লক্ষ করে সখেদে বলেছিলেন-
এখন মানুষ আপনার সকল জিনিসেরই মূল্যের পরিমাণ টাকা দিয়ে বিচার করতে লজ্জা করে না। এতে করে সমস্ত মানুষের প্রকৃতি বদল হয়ে আসছে-জীবনের লক্ষ্য এবং গৌরব অন্তর থেকে বাইরের দিকে, আনন্দ থেকে প্রয়োজনের দিকে অত্যন্ত ঝুঁকে পড়ছে। মানুষ ক্রমাগত নিজেকে বিক্রি করতে কিছুমাত্র সংকোচবোধ করছে না। ক্রমশই সমাজের এমন একটা বদল হয়ে আসছে যে, টাকাই মানুষের যোগ্যতারূপে প্রকাশ পাচ্ছে। অথচ, এটা কেবল দায়ে পড়ে ঘটছে, প্রকৃতপক্ষে এটা সত্য নয়। তাই, এক সময়ে যে মানুষ মনুষ্যত্বের খাতিরে টাকাকে অবজ্ঞা করতে জানত এখন সে টাকার খাতিরে মনুষ্যত্বকে অবজ্ঞা করছে। রাজ্যতন্ত্রে, সমাজতন্ত্রে, ঘরে বাইরে, সর্বত্রই তার পরিচয় কুৎসিত হয়ে উঠেছে, কিন্তু বীভৎসতাকে দেখতে পাচ্ছি নে, কেননা লোভে দুই চোখ আচ্ছন্ন।
এ প্রসঙ্গে একটা কথা বলার আছে। আর্থিক ভিত্তি ছাড়া আত্মিক ভিত্তি দাঁড়াবার পথ পায় না। কথাটা মিথ্যে নয়, কিন্তু আজ আমরা আত্মিক বিকাশের জন্য আর্থিকতাকে মূল্য দিই না-আত্মবিক্রয় করেই আর্থিকতার পেছনে মরিয়া হয়ে উঠছি!
আজ আমাদের সাহিত্যে এক গভীর চিন্তার সংকট দেখা দিয়েছে। সোভিয়েত রাশিয়ার পতনের পর সারা পৃথিবী জুড়ে সম্ভবত এই সংকটের সূচনা হয়। এই সংকট-উত্তরণের জন্য নতুন মার্কসের জন্ম আবশ্যক। রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন যে,
বারে বারে তোরে
ফিরে পেতে হবে
বিশ্বের অধিকার।
কিন্তু কিভাবে? এই অধিকার ফিরে পেতে শোষকশ্রেণীর প্রতিনিধি রাষ্ট্রনেতাদের দিয়ে হবে না-যাঁদের মাথা এই রাষ্ট্রনেতাদের চরণতলে নত হয়েছে তাঁদের দিকে তাকালেও চলবে না। ইস্পাত কঠিন আত্মপ্রত্যয়ের মধ্য দিয়ে লেখক সমাজকেই এই সংকট কাটাতে এগিয়ে আসতে হবে।
কেননা এটা পুরো জীবনের সংগ্রাম। মনীষীশ্রেষ্ঠ আবু সয়ীদ আইয়ুব এ-রকম একটি প্রসঙ্গে লিখেছেন যে-
এই সংগ্রামে কর্মীর চেয়ে ভাবুক, রাষ্ট্রনেতার চেয়ে শিল্প রচয়িতার দায়িত্ব কোনো অংশ কম নয়। বস্তুতপক্ষে আরো বেশি, কারণ শিল্পী-সাহিত্যিকের মন হচ্ছে সমাজের সূক্ষ্মতম বীণাতন্ত্র। সামাজিক দুঃখের আওয়াজ সর্বাগ্রে ধ্বনিত হবে সেই বীণার তারে, এবং তারই ঝংকারে সাড়া জাগবে দেশজোড়া মানুষের চিত্তে। দুঃখ থেকে পরিত্রাণের পথও তাঁকেই সকলের আগে দেখতে হবে এবং সকলকে দেখাতে হবে।
এক্ষেত্রে 'শিল্পী-সাহিত্যিকদের' সঙ্গে রাষ্ট্রনেতাদের সহযোগ কল্যাণকর হতে পারে, কিন্তু রাষ্ট্রনেতাদের কাছে সাহিত্যিকের আত্মবিলোপ হবে আত্মঘাতী। বাংলাদেশে আজ আমরা এই আত্মঘাতী পথ বেছে নিয়েছি কিনা-এই জিজ্ঞাসা জরুরি। এমন জিজ্ঞাসা থেকে এই সংকলনটির উদ্ভব। আমরা গভীরভাবে বিশ্বাস করি যে, আকাঙ্ক্ষা মহৎ হলে জীবন সরল হয়ে আসে। এই সরল জীবনের প্রতি যাঁর শ্রদ্ধা নেই, তিনি আর যাই হোন, লেখক নন। মহৎ আকাঙ্ক্ষায় সমুজ্জ্বল সরল জীবনই কাম্য হোক একজন লেখকের-একজন শিল্পী-একজন সাহিত্যস্রষ্টার।
যাঁরা এই রচনাগুলোর স্রষ্টা, তাঁরা প্রত্যেকেই ছিলেন উন্নতচিন্তার ও মহৎ জীবনের অধিকারী। সরল জীবনই ছিল তাঁদের আরব্ধ। ইউরোপে এই সাহিত্য স্রষ্টাদের জন্ম হয়েছিল বলেই ইউরোপীয় সাহিত্য এত সমৃদ্ধ। এই সমৃদ্ধ সাহিত্যের শিক্ষাই মানব জাতির মহৎ শিক্ষা। এই শিক্ষার অতি কণাতুল্য অংশ নিয়ে আমাদের মতো সমান বয়সী বন্ধুদের উদ্দেশ্যে এই সংকলনটি গ্রন্থিত হলো। প্রবন্ধগুলো বার বার পড়তে হয়। যতবারই পড়া যায় প্রত্যেকবারই নতুন অর্থ নিয়ে নতুন চিন্তায় পাঠকমনকে নতুন করে ভাবতে শেখায়। বাংলা ভাষায় তরজমা করে যাঁরা আমাদের সঙ্গে এই ভাস্বর রচনাগুলির পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন, তাঁদের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ ও ঋণী। সংকলনটিতে অনুবাদকদের বানানরীতি যথাসম্ভব অক্ষুণ্ণ রাখার চেষ্টা করা হয়েছে।
এই সংকলনটি আমাদের ব্যাখ্যাত সরল জীবনের প্রতি কারো যদি কিছু মহৎ আকাঙ্ক্ষা জাগ্রত করতে সহায়ক হয়, তবেই এর সার্থকতা।
-মুহম্মদ সাইফুল ইসলাম, হামীম কামরুল হক
সূচিপত্র
- বিদেশি লেখক
- ক্লাসিক কি?
- চার্লস-অগাস্টিন সাঁত বভ।
- তরজমা: আবুল কাসেম ফজলুল হক
- শিল্পী ও সমালোচক- অসকার ওয়াইল্ড। তরজমা: মোহিতলাল মজুমদার
- কথাসাহিত্যে প্রকৃতি-পন্থা - এমিল জোলা ॥ তরজমা: মোহিতলাল মজুমদার
- গ্রন্থরচনা ও রচনা-রীতি' - আর্থার শোপেনহাওয়ার ॥ তরজমা: মোহিতলাল মজুমদার
- শিল্প প্রসঙ্গে- লিও টলস্টয় ॥ তরজমা: আবুল কাশেম ফজলুল হক
- লেখকের শিল্পকৌশল - আঁদ্রে মোরোয়া ॥ তরজমা: আবু জাফর শাসুদ্দীন
- নিহিত লেখক - ওরহান পামুক। তরজমা: কবীর চৌধুরী
- সাহিত্যে প্রভাব - অঁদ্রে জিদ'। তরজমা: মোহাম্মদ হারুন-উর-রশিদ
- পৃথিবী দেখার শিল্প - কনস্তান্তিন পাউস্তোঙ্কি'। তরজমা: আবুল মোমেন
- বাঙালি লেখক - স্বপ্নদর্শন-কীর্তিবিষয়ক অক্ষয়কুমার দত্ত
- বাঙ্গালার নব্য লেখকদিগের প্রতি দিবেদন - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- সৌন্দর্য সম্বন্ধে সন্তোষ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
- অলঙ্কারের সূত্রপাত - প্রমথ চৌধুরী
- সাহিত্যিকের ব্রত - রাজশেখর বসু
- একালে আমাদের কাল - নীহাররঞ্জন রায়
- লেখার ইস্কুল - বুদ্ধদেব বসু
- সাহিত্যিকের সমাজচেতনা - আবু সয়ীদ আইয়ুব
- সাহিত্যিকের 'দায়বদ্ধতা' বা দায়িত্ব - শিবনারায়ণ রায়
- কবির কর্তব্য - শামসুর রাহমান
- জীবনের জঙ্গমতা: লেখকের দায় - হাসান আজিজুল হক
শিল্পের সবুজ ভূমিতে পদচারণার আগে প্রত্যেক তরুণ লেখকের এই বইটি একবার পাঠ করা দরকার। তাহলে অন্যদের পাশাপাশি নিজের সামর্থ ও সীমানার আয়তন বুঝতে খুব বেশি কষ্ট হবে না।
::::::::::
লেখার শিল্প লেখকের সংকল্প
সম্পাদনা:
মুহম্মদ সাইফুল ইসলাম
হামীম কামরুল হক
প্রথম প্রকাশ : ফেব্রুয়ারি ২০১১
পরিবর্ধিত ও পরিমার্জিত নতুন সংস্করণ : ফেব্রুয়ারি ২০১৭
প্রকাশক : সংবেদ
প্রচ্ছদ : মোস্তাফিজ কারিগর
মূল্য : ৪০০ টাকা
0 মন্তব্যসমূহ
মার্জিত মন্তব্য প্রত্যাশিত। নীতিমালা, স্বীকারোক্তি, ই-মেইল ফর্ম