‘বই’ এর সংজ্ঞা, বৈশিষ্ট্য, বিভিন্ন অংশ, প্রকারভেদ সম্পর্কে বিস্তৃত বর্ণনা

‘বই’ এর সংজ্ঞা, বৈশিষ্ট্য, বিভিন্ন অংশ, প্রকারভেদ সম্পর্কে বিস্তৃত বর্ণনা


‘বই’ শব্দের সমার্থক শব্দ হল গ্রন্থ, পুস্তক, কেতাব, পুঁথি, বহি, পাণ্ডুলিপি ইত্যাদি। ইংরেজিতে Book বলা হয়। মানুষের চিন্তাধারাকে পরবর্তী প্রজন্মের নিকট পৌঁছে দেয় বই। মানুষ তার মনের ভাব, অনুভূতি, জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতার বিবরণ বইয়ের মাধ্যমে সংরক্ষণ করে। বই হল সংস্কৃতি, সভ্যতা ও যোগাযোগের অন্যতম বাহন। বই এক শতাব্দী থেকে পরবর্তী শতাব্দীগুলোতে জ্ঞানকে বহন করে নিয়ে যায়। মানুষের সঙ্গে মানুষের, প্রবীণের সঙ্গে নবীনের, সমাজের সঙ্গে সমাজের, অতীতের সঙ্গে বর্তমানের, বর্তমানের সঙ্গে ভবিষ্যতের যোগসূত্র রচনা করতে পারে বই। প্রাচীন কালে পাথর, মাটির ফলক, চামড়া, গাছের পাতা, কাঠের টুকরো, ধাতুর পাত ইত্যাদি বস্তু বই হিসেবে ব্যবহৃত হতো। এ বিষয়ে জানতে আমাদের পূর্ববর্তী রচনা পড়ুন “বিভিন্নরকম লিখন উপাদানের কথা”। আধুনিক যুগে কাগজ হল বই প্রকাশ করার প্রধান মাধ্যম। তাই বলা যায় কয়েকটি থেকে কয়েকশত লিখিত উপাদানকে একত্রে বাঁধাই করে বই হিসেবে নামকরণ করা যায়। ইউনেস্কোর মতে-


প্রচ্ছদপৃষ্ঠা ছাড়া কমপক্ষে ৪৯ পৃষ্ঠার প্রকাশনা যা সাময়িকী নয়, তাকে বই বলা হয়।

 

বইয়ের বৈশিষ্ট্যঃ
ক। বই মুদ্রিত বা হস্তাক্ষরে লিখিত হতে হবে।
খ। বই অবশ্যই বহনযোগ্য হতে হবে।
গ। উপরে ও নীচে দুইটি মলাটসহ বাঁধাইকৃত হতে হবে।
ঘ। বাঁধাইকৃত পৃষ্ঠাগুলি সহজে উল্টানোর ব্যবস্থা থাকতে হবে।
ঙ। প্রতিটি বইয়ের সাধারণভাবে তিনটি অংশ থাকতে হবে। যেমনঃ প্রাথমিক অংশ, মূল অংশ এবং সহকারী অংশ।

বইয়ের বিভিন্ন অংশঃ
প্রাচীনকালের বইতে আধুনিক যুগের মত বিভিন্ন অংশ থাকতো না। তবে আধুনিককালে একটি বইয়ের সাধারণত তিনটি অংশ থাকে। তবে সবধরণের বইতে কমপক্ষে দুইটি অংশ অবশ্যই থাকতে হবে।

  • ১। প্রাথমিক অংশ বা পূর্বভাগ (Preliminaries)
  • ২। মূল অংশ বা পাঠ্যবিষয় (Text)
  • ৩। সহকারী বিষয় (Subsidiaries)

১।। প্রাথমিক অংশ বা পূর্বভাগ (Preliminaries):
একটি বইয়ের মূল অংশ বাদ দিয়ে যা কিছু থাকে তার সবগুলোই প্রাথমিক অংশ বা পূর্বভাগ। কোন বই সম্পর্কে প্রাথমিক তথ্য এই অংশ থেকেই জানা যায়। তাই বইয়ের মূল পাঠ্য অংশে যাওয়ার পূর্বে এই প্রাথমিক অংশে উল্লিখিত বিষয়গুলো ভালভাবে দেখে নেয়া প্রয়োজন। বইয়ের প্রাথমিক পরিচিতি পাওয়া যায় এই অংশ থেকেই। এই অংশটি বেশ কয়েকভাগে বিভক্ত। সেগুলো হলঃ

ক) প্রচ্ছদ বা বুক জ্যাকেট (Book Jacket)
বইকে ঢেকে রাখে প্রচ্ছদ। এই প্রচ্ছদ হল বইয়ের মুখের মত। এটা যেমন বইকে সৌন্দর্য দান করে, তেমন প্রথম দৃষ্টিতে বইটি সম্পর্কে একটি ধারণা তৈরিতে সাহায্য করে। প্রচ্ছদ একটি বইয়ের এত বেশি গুরুত্বপূর্ণ অংশ যে বর্তমানে এটি একটি সৃষ্টিশীল শিল্পকর্মে পরিণত হয়েছে। বইকে আকর্ষণীয় করে পাঠকের কাছে উপস্থাপন করতে এর ভূমিকা অপরিসীম। প্রথম প্রচ্ছদে বইয়ের নাম, লেখকের নাম লেখা থাকে। কখনও কখনও অবশ্য প্রকাশনীর নামও থাকতে পারে। শেষ প্রচ্ছদে বইয়ের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি, প্রকাশক সম্পর্কিত সংক্ষিপ্ত তথ্য বা লেখকের পরিচিতিও ইদানীং চোখে পড়ছে।

খ) মলাট (Cover)
মলাট সাধারণত শক্ত কাগজের বোর্ড, হার্ডবোর্ড বা চামড়া দিয়ে তৈরি হয়ে থাকে। মলাটের সঙ্গে পাতলা কাপড় বা কাগজ আঠা দিয়ে লাগানো থাকে। মলাটের কারণে একটি বই দীর্ঘস্থায়ী হয়ে থাকে।

গ) স্পাইন (Spine)
বইয়ের তিনদিক খোলা রেখে যে দিকে বইয়ের পাতাগুলো আটকিয়ে রাখা হয়, সেই দিকটিকে স্পাইন বলে। স্পাইনকে বইয়ের মেরুদণ্ড বলা যেতে পারে। স্পাইনে বইয়ের নাম, উপশিরোনাম, লেখক, প্রকাশকের নাম বা প্রতীক ইত্যাদি থাকতে পারে। লাইব্রেরিতে শেলফের তাকে সাজানো বই বের করার জন্য স্পাইন প্রয়োজনীয় ভূমিকা রাখে।

এই অংশটিতে বই এবং লেখকের নাম লেখা থাকে বলে একে দপ্তরীর শিরোনাম (Binders Title) বলেও ডাকা হয়।

ঘ) শেষ পৃষ্ঠা (End Paper)
বইয়ের মলাটের সাথে যে সাদা কাগজ আঠা দিয়ে লাগানো থাকে তাকে শেষ পৃষ্ঠা বলে। মলাট এবং মূল বইয়ের মধ্যে বন্ধনীর কাজ করে এই শেষ পৃষ্ঠা।

ঙ) ফ্লাইলিপ (Flyleaf)
বইয়ের শুরু ও শেষে মলাটের পরপরই যে সাদা কাগজ থাকে তাকে ফ্লাইলিফ বলে। ইদানীং এই অংশে বইয়ের সারাংশ ও লেখকের ছবিসহ সংক্ষিপ্ত পরিচিতি ছাপানোর রীতি শুরু হয়েছে।

চ) অর্ধশিরোনাম পৃষ্ঠা (Half- Title Page)
বইয়ের শিরোনাম পৃষ্ঠার পূর্বে শুরুমাত্র বইয়ের নাম লেখা যে কাগজটি থাকে তাকে অর্ধশিরোনাম পৃষ্ঠা বলে। এই পৃষ্ঠায় কখনও কখনও লেখকের নাম থাকতে পারে। একে বাস্টার্ড টাইটেলও (Bustered Title) বলা হয়।

ছ) শিরোনাম পৃষ্ঠা (Title Page)
বইয়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশ এই পৃষ্ঠাটি। মূলতঃ এই পৃষ্ঠা থেকেই একটি বই শুরু হয়। এটা সবসময় বইয়ের ডানদিকে থাকে। এতে বইয়ের নাম, উপ শিরোনাম (যদি থাকে), লেখক, সম্পাদক, সংকলক, অনুবাদকের নাম, শিক্ষাগত যোগ্যতা, পেশা ও পদমর্যাদা ইত্যাদি উল্লেখ থাকে। এছাড়াও প্রকাশকের নাম, ঠিকানাও এই পৃষ্ঠায় থাকে। এই পৃষ্ঠাটিকে অফিসিয়াল পেইজও (Official Page) বলা হয়।

জ) শিরোনাম পৃষ্ঠার পরের পৃষ্ঠা (Back of the Title Page)
এই পৃষ্ঠায় প্রকাশকের নাম ও ঠিকানা, প্রকাশকাল, প্রচ্ছদশিল্পীর নাম, সংস্করণ, গ্রন্থস্বত্ব, মু্দ্রণকারী প্রতিষ্ঠানের নাম, পরিবেশকের নাম, আইএসবিএন, মূল্য ইত্যাদি তথ্য থাকে।

ঝ) উৎসর্গ (Dedication)
বইটি যাঁকে উৎসর্গ করা হয় তাঁর নাম এই পৃষ্ঠায় থাকে।

ঞ) মুখবন্ধ (Preface)
বই লেখাকালীন বিভিন্ন ঘটনা, অনুভূতি, বই লেখার উদ্দেশ্য, বইয়ের বিষয়বস্তু ইত্যাদি তথ্য এখানে থাকে। লেখক যাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে চান, তাদের নাম এখানে লিখে থাকেন। মুখবন্ধ থেকে বইয়ের আলোচ্য বিষয় সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা পাওয়া যায়।

ট) প্রাককথন (Foreward)
লেখকের অনুরোধে বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব বা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞ এই অংশটি লিখে থাকেন। একে শুভেচ্ছা বক্তব্যও বলা যেতে পারে। এখানে বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিত্ব কর্তৃক লেখককে উৎসাহিত করা হয়। বইয়ের মূলভাব, বিষয় এসব সম্পর্কেও এখানে আলোকপাত করা হয়ে থাকে। কল্পসাহিত্য জাতীয় রচনায় সাধারণত প্রাককথন থাকে না।

ঠ) ভূমিকা (Introduction)
লেখক পাঠকের উদ্দেশ্যে নিজের বক্তব্য এই অংশে নিবেদন করেন। এখানে বইয়ের আলোচ্য প্রসঙ্গ, বই রচনার পদ্ধতি, বৈশিষ্ট্য ইত্যাদি থাকে। ভূমিকা থেকে বইয়ের প্রাথমিক পরিচিতি পাওয়া যায়। প্রায় একইরকম হবার কারণে মুখবন্ধ থাকলে ভূমিকা নাও থাকতে পারে। কল্পসাহিত্য জাতীয় রচনাগুলোতে ভূমিকার ব্যবহার খুবই কম। এই অংশটিকে অনেকে গৌরচন্দ্রিকা, অনুক্রমণিকা, প্রারম্ভিকা ইত্যাদি নামে অভিহিত করে থাকেন।

ড) সূচীপত্র (Contents)
বইয়ের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ সূচীপত্র। আলোচিত বিষয় কীভাবে সাজানো হয়েছে সে সম্পর্কে স্পষ্ট বিবৃতি থাকে এই অংশে। বইয়ের অধ্যায় বা পর্বগুলো পৃষ্ঠাসংখ্যা উল্লেখ করে ধারাবাহিক ভাবে এই পৃষ্ঠায় সাজানো থাকে। সূচীপত্র থেকে বইয়ের আলোচ্য বিষয় সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়। কল্পসাহিত্য জাতীয় রচনায় সূচীপত্রের প্রয়োজন না থাকাই স্বাভাবিক।

ঢ) চিত্র বা নকশার তালিকা (List of Illustration)
বইয়ের বিষয়বস্তু বোধগম্য করতে যদি কোন চিত্র, নকশা, মানচিত্র, ছক ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়, তাহলে সেগুলোর একটি তালিকা এই পৃষ্ঠাতে থাকে।

২।। মূল অংশ বা পাঠ্যবিষয় (Text)
বইয়ের মূল আলোচ্য যে অংশে থাকে তাই মূল অংশ বা পাঠ্য বিষয়। লেখকের ভাবনা, বক্তব্য নিয়েই এই অংশটি গঠিত হয়। এটা একাধিক অধ্যায়ে বিভক্ত থাকতে পারে। পাঠক বই বলতে এই অংশটুকুকেই বুঝে থাকেন। একাধিক অধ্যায় থাকলে অধ্যায়ের শিরোনাম এবং বইয়ের মূল শিরোনাম প্রতিটি পৃষ্ঠার উপরে লেখা থাকে। একে রানিং টাইটেল (Running Title) বলা হয়। এই অংশে লেখক তার কল্পনা, বক্তব্য পাঠকের উদ্দেশ্যে উপস্থাপন করেন। প্রয়োজনে চিত্র, ম্যাপ, নকশা ইত্যাদি ব্যবহার করে নিজের চিন্তাকে সহজবোধ্য করার চেষ্টা করেন। পাঠক এই অংশের ভিত্তিতেই লেখকের সৃষ্টিশীলতা ও রচনাশৈলীর মূল্যায়ন করে থাকেন।

৩।। সহকারী বিষয় (Subsidiaries)
বইয়ের মূল অংশ শেষ হওয়ার পর এই সহকারী বিষয় অংশের শুরু হয়। এখানেও বেশ কয়েকটি প্রসঙ্গ উপস্থাপিত হতে পারে।

ক) পরিশিষ্ট (Appendix)
পরিশিষ্ট পাঠ্য অংশের পরিপূরক হিসেবে উপস্থাপিত হয়। পাঠকের বোঝার সুবিধার জন্য এখানে একাধিক ছক, সারণী, তালিকা ইত্যাদি স্থান পায়। পাঠক এর ব্যবহার করে মূল বিষয়ের গভীরে প্রবেশ করতে সক্ষম হন।

খ) টীকা (Notes)
বইয়ের আলোচ্য বিষয়ের কিছু কিছু অংশকে আরও পরিস্কারভাবে অনুধাবন করার লক্ষ্যে টীকা ব্যবহার করা হয়। টীকা পৃষ্ঠার নিচে বা অধ্যায়ের শেষে থাকতে পারে।

গ) শব্দ তালিকা (Glossary)
মূল পাঠ্য অংশে ব্যবহৃত গুরুত্বপূর্ণ শব্দের অর্থ ও সংজ্ঞা শব্দতালিকায় বর্ণানুক্রমিকভাবে সাজানো হয়। গবেষণামূলক বইয়ের ক্ষেত্রে শব্দ তালিকা খুবই প্রয়োজনীয় একটি অংশ।

ঘ) পরিপূরক অংশ (Supplement)
কোন বই প্রকাশের পরবর্তী সময়ে প্রদত্ত তথ্যের আধুনিকায়ন প্রয়োজন হলে পরিপূরক অংশ ব্যবহার করা হয়। প্রদত্ত তথ্যে যে অংশ সংশোধন, পরিবর্তন, পরিমার্জন, পরিবর্ধন করা প্রয়োজন তা পরিপূরক অংশে সংযোজন করা হয়। এর ফলে মূল বইয়ের কোন সংস্করণ প্রকাশ না করে পুনঃমুদ্রণ করে শুধু পরিপূরক অংশ যোগ করলেই চলে।

ঙ) গ্রন্থপঞ্জী (Bibliography)
মূল বইটি রচনা করতে গিয়ে লেখক যে সকল বই, সাময়িকী বা পত্রিকার সাহায্য নিয়েছেন, যেখান থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছেন তার তালিকা গ্রন্থপঞ্জী আকারে বইয়ের শেষে সংযোজন করা হয়। অনেক সময় সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ জ্ঞান আহরণ করতে হলে যে সকল বই বা পাঠোপকরণ পাঠ করা প্রয়োজন তার তালিকাও লেখক গ্রন্থপঞ্জী হিসেবে দিয়ে থাকেন। অনেক সময় প্রতিটি অধ্যায়ের শেষেও টীকার সাথে গ্রন্থপঞ্জীর উল্লেখ করা হয়ে থাকে। (গ্রন্থপঞ্জী সম্পর্কে আরও জানতে পড়ুন “গ্রন্থপঞ্জীঃ সংজ্ঞা, উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য, প্রকারভেদ, প্রয়োজনীয়তা”)

চ) নির্ঘন্ট (Index)
বইয়ে উল্লেখিত ব্যক্তি, স্থান, বিশেষ শব্দ, বিষয়, ঐতিহাসিক ঘটনা ইত্যাদির পৃষ্ঠা সংখ্যাসহ যে সূচী বইয়ের শেষে থাকে তাকে নির্ঘন্ট বলে। নির্ঘন্ট বর্ণানুক্রমে সাজানো হয়ে থাকে। নির্ঘন্টের মাধ্যমে পাঠক বইয়ে আলোচ্য বিষয় সহজে খুঁজে নিতে পারেন।

ছ) শুদ্ধিপত্র (Correction)
বই মূদ্রণ শেষে কোন ভুলত্রুটি চোখে পড়লে শেষের দিকে একটি অতিরিক্ত পাতা যোগ করা হয়। এই পাতায় বইতে থেকে যাওয়া ভুলত্রুটিগুলোর শুদ্ধরূপ দেয়া হয়। একটি ছক তৈরি করে তাতে পৃষ্ঠা নম্বর উল্লেখ করে ভুল শব্দ বা বাক্য লিখে তার পাশে সঠিক শব্দ বা বাক্যটি ছাপানো হয়। আত্মসমালোচনাপ্রবণ লেখকগণ বিনয়বশত এই কাজ করে থাকেন।

বইয়ের শ্রেণীবিভাগ বা প্রকারভেদঃ

তথ্যের প্রকৃতি অনুযায়ী বই দুই ভাগে ভাগ করা হয়। যেমনঃ

  • ১। সাধারণ বই (General Book)
  • ২। রেফারেন্স বই (Reference Book)

সাধারণ বই আবার নিম্নোক্তভাবে বিভক্ত করা হয়ে থাকে।

  • ক) অনুপ্রেরণামূলক বই (Books of Inspiration)
  • খ) তথ্যমূলক বই (Books of Information)
  • গ) বিনোদনমূলক বই (Books of Recreation)

রেফারেন্স বইকেও কয়েকভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। যেমনঃ

  • ক) বিশ্বকোষ (Encyclopedia)
  • খ) অভিধান (Dictionary)
  • গ) বর্ষপঞ্জী এবং আলমানাক (Yearbook and Almanac)
  • ঘ) জীবনীমূলক বই (Biography)
  • ঙ) হাত বই এবং ম্যানুয়াল (Hand book and Manual)
  • চ) গ্রন্থপঞ্জী (Bibliography)
  • ছ) ভৌগলিক অভিধান, যেমনঃ গেজেটিয়ার, গাইডবুক, এটলাস, মাসচিত্র এবং গ্লোব
  • জ) শ্রব্য এবং দর্শন উপকরণ (Audio – Video Material)
  • ঝ) ডাইরেক্টরি (Directory)


আধুনিক জ্ঞানভিত্তিক সমাজে বইয়ের প্রকারভেদ সংক্ষেপে উল্লেখ করা সম্ভব নয়। DDC (Dewey Decimal Classification) অনুযায়ী বইয়ের প্রকারভেদ লক্ষাধিক হতে পারে। তারপরও বিশ্বে যত প্রকারের বই প্রকাশিত হয়, তার সবগুলোকে সঠিকভাবে শ্রেণীকরণ করা অনেক সময় কঠিন হয়ে পরে। আর তাই উদ্ভাবন ঘটেছে UDC (Universal Decimal Classification) এর। এই পদ্ধতিতে দশ লক্ষেরও বেশি শ্রেণী/প্রকারের বইকে তালিকাভুক্ত করা যেতে পারে।

প্রাচীনকালকে বিদায় দিয়ে আধুনিক সভ্যতা তৈরিতে গ্রন্থের ভূমিকাই প্রধান। অতীতের জ্ঞানচর্চার ইতিহাস ও ফলাফলকে সমকালে বয়ে নিয়ে আসে বই। প্রবীণের সীমাবদ্ধতাকে তরুণের নিকট অতিক্রমণীয় করতে সাহায্য করে বই। বই এর সহযোগীতা না থাকলে মানব সমাজকে প্রতিটি যুগে নতুন করে জ্ঞান উদ্ভাবন করতে হত। ফলে সমাজের কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি হত ব্যাহত। মানুষ তার আদিম প্রাগৈতিহাসিক অবস্থার পরিবর্তন বা উন্নয়ন ঘটাতে পারতো না। তাই যে সমাজে বইয়ের প্রতি মানুষের আগ্রহ বেশি সেই সমাজ অন্যদের তুলনায় অপেক্ষাকৃত অগ্রসর থাকে। এটা কোন ধারণা নয়, এটাই বাস্তব। জ্ঞানে, বিজ্ঞানে, প্রযুক্তিতে, মানবতায়, উদ্ভাবনে উন্নত সমাজগুলো বইপাঠের অভ্যাসকে আশ্রয় করে এগিয়ে চলেছে। বিপরীতে অনগ্রসর, পরনির্ভর সমাজে বই এবং বই সম্পর্কিত অন্যান্য সামাজিক অনুষঙ্গ যেমন পাঠাগার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইত্যাদি ততোটা মূল্যায়িত হয় না। ফলাফলস্বরূপ তারা থেকে যায় হিংসাপ্রবণ, অমানবিক, আদিম মানসিকতার অন্ধকার প্রকোষ্ঠে। বইকে ভালো না বেসে তাদের না হয় কোন উন্নয়ন, না ঘটে কোন উত্তরণ।

====================
ঋণস্বীকারঃ উপর্যুক্ত রচনায় ব্যবহৃত তথ্যগুলি নিম্নোক্ত বই থেকে নেয়া হয়েছে।
* বিবলিওগ্রাফী, রেফারেন্স এন্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস – এ. ডি. এম. আলী আহাম্মদ, ২০১৪, কৃষ্ণচূড়া প্রকাশনী, ঢাকা।

মতামত:_

11 মন্তব্যসমূহ

  1. বই সম্পর্কে অনেক কিছু জানলাম। আপনাকে ধন্যবাদ।

    উত্তরমুছুন
  2. এই মন্তব্যটি লেখক দ্বারা সরানো হয়েছে।

    উত্তরমুছুন
  3. শঙ্কর রায়৮/৩/১৯, ৪:৩৯ PM

    মূল্যবান রচনা। বই নিয়ে এতকিছু লেখা যায় , বইতে এতকিছু যে আছে তাইই তো জানতাম না।

    উত্তরমুছুন
  4. অনেক তথ্য জানা হল৷ ভালো পোষ্ট৷

    উত্তরমুছুন
  5. বইয়ের পুট কাকে বলে

    উত্তরমুছুন
  6. চমৎকার অলোচনা। সত্যি মুগ্ধ হলাম, জানলাম অনেক কিছু। সবসময় কাজে লাগবে বলে মনে করি।

    উত্তরমুছুন

মার্জিত মন্তব্য প্রত্যাশিত। নীতিমালা, স্বীকারোক্তি, ই-মেইল ফর্ম