নতুন প্রকাশিত বই নিয়ে সারওয়ার চৌধুরীর সাথে আলাপ

নতুন প্রকাশিত বই নিয়ে সারওয়ার চৌধুরীর সাথে আলাপ
অমর একুশে বইমেলা ২০২০ এ প্রকাশিত হয়েছে সারওয়ার চৌধুরীর দুইটি বই। একটি কাহিনী কাব্য "অক্টোপাসের বউ" ও অপরটি প্রবন্ধের বই "তলস্তয় ও সোফিয়ার সম্পর্কের সৌন্দর্য উদ্ধার ও অন্যান্য"। লেখক তার বইদুটি সম্পর্কে বিভিন্ন মাত্রার ভাবনা গ্রন্থগত.কম এর কাছে প্রকাশ করেছেন।
===============

❑  সম্প্রতি আপনার দুটি বই প্রকাশিত হলো৷ বই দুটি কী কী? বই প্রকাশের অনুভূতি জানতে চাই৷

একটি কবিতার  'অক্টোপাসের বউ'। বইটি ইংরেজী অনুবাদ সংবলিত। অনুবাদ করেছেন কবি নাঈম ফিরোজ। অন্যটি গদ্যের। 'তলস্তয় ও সোফিয়ার সম্পর্কের সৌন্দর্য ও অন্যান্য' একটি গবেষণামূলক বড় প্রবন্ধ আছে এবং বারোটি বিভিন্ন বিষয়ের ছোট গদ্য। আর বই প্রকাশ আনন্দের, এই আনন্দ নিজের চিন্তা অনুভূতি শেয়ার করতে পারার। শেয়ার করা অন্যতম প্রধান কাজ প্রাণীজগতে। সবাই শেয়ার করছে প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে। পথের পাশে শুকিয়ে থাকা ঘাসটিও শেয়ার করছে।

❑ অক্টোপাসের বউ' এবং 'তলস্তয় ও সোফিয়ার সম্পর্কের সৌন্দর্য উদ্ধার ও অন্যান্য' নিয়ে জানতে চাই।

চট্টগ্রামের এক বন্ধুর ছবি দেখতে দেখতে হঠাৎ পপ আপ হয়েছিল 'অক্টোপাসের বউ' কাহিনী কাব্যের ধারনা। তারপর দুই সপ্তাহ ঘোরের মাঝে লিখতে থাকি, লেখা হয়ে যায় 'অক্টোপাসের বউ'। কাব্যগল্পটিতে মিথিক্যাল প্রকাশ যেভাবে ফুটেছে তা নতুন স্বাদের কিছু। মানে, মৎসকন্যা নিয়ে বহু গল্প হয়েছে নানা ভাষায়। অক্টোপাসের বউ ধারনাটি নতুন, একটা ফ্যান্টাস্টিক অভিযান মিথ রুপে বা সমুদ্রগভীরে বিয়ের আসর, অক্টোপাসের বউয়ের বিয়ে হওয়া মানুষের সাথে....এমন কাহিনীকাব্য নির্মাণের ব্যাপারটি সাহিত্যে নতুন। পুরোটিতে রয়েছে অক্ষরবৃত্ত ছন্দের হিসাব। বহুবার কাটছাট করে অক্টোপাসের বউয়ের বিয়ের আয়োজন করেছি ।

একদিন আলেকজান্দ্রা পপ'র ৩৪১ পৃষ্ঠার 'সোফিয়া তলস্তয়' বইটির উপর একটি রিভিউ নজরে পড়ে। ওটা পড়ার পর বইটি পড়তে আগ্রহী হলাম। খুঁজে বের করি অনলাইন ভার্শন এবং পড়তে থাকি। পড়তে পড়তে আগ্রহী হলাম তলস্তয় ও সোফিয়ার সম্পর্কের উপর নতুন তথ্যভিত্তিক একটা লেখা লিখবার, যেখানে তলস্তয় সম্পর্কেও গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য থাকবে। লিখতে লিখতে দেখি নানা শাখা প্রশাখা গজাচ্ছে। ঘাঁটছি লিখছি, এক পর্যায়ে 'তলস্তয় ও সোফিয়ার সম্পর্কের সৌন্দর্য উদ্ধার' রচনাটি লেখা হয়।

❑  বই প্রকাশের সিদ্ধান্তে উপনীত হলেন কীভাবে?

এই তো কিছু লেখা জমা হল, ভাবলাম বই করা যায়। কথা বললাম প্রকাশকের সাথে। বললেন 'পাঠিয়ে দিন'। পাঠালাম, প্রকাশক বললেন বইটি করবেন, এই আরকি।

❑  বই দুটি প্রকাশ করতে প্রকাশক নিয়ে জটিলতায় পড়তে হয়েছিলো কি?

নাহ্ ঠিক জটিলতা না, ভাল প্রকাশক যাদেরকে মনে করেছি, তাদেরকে গত চৌদ্দ বছর ধরে দিয়ে আসছি, মানে চৌদ্দ বছর ধরেই নির্দিষ্ট কয়েক জনকে দিচ্ছি এমন না। এবার ও গতবার, তার আগেরবার নতুন প্রকাশককে দিয়েছি।

❑  নিজের লেখার প্রতি আত্মবিশ্বাস কতটুকু?

হ্যাঁ ভাল কিছু লিখছি এই আত্মবিশ্বাস আছে।

❑  অনেকে বলেন লেখার ক্ষেত্রে প্রস্তুতির প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে আপনারা প্রস্তুতির কথা জানতে চাই।

আমার গদ্য পদ্য লেখার প্রস্তুতি ঠিক থাকে না। কিছু-একটা আমাকে টাচ করল, এখন ওটা কোনোভাবে ভাষায় প্রকাশ করবার একটা সুন্দর উন্মাদনা তৈরী হয় আমার ভিতর। গদ্যে বা কবিতার আঙ্গিকে কিছু না লিখলে যেন নিস্তার নাই। দুই চার পাঁচ দশ পনর বিশ দিন আমি যেন অন্য ভূবনের কেউ হই। একদিকে দেখি সুন্দর উন্মাদনা, অন্যদিকে নিজেকে দেখি শান্ত—গম্ভীর—ট্রাঙ্কুইল। এই যুৎবদ্ধ অবস্থা এনজয়য়-ও করি।

❑  পাণ্ডুলিপি গোছানোর ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েছেন?

এই তো যা দিয়ে একটা বই করা যায়, তা জড়ো করে পাণ্ডুলিপি করা।

❑  শিল্প না কি পাঠক, আপনার দায়বদ্ধতা কার কাছে?

সে তো ক্রমাগত রিএক্টরের ভূমিকায়
শিল্প, পাঠক, দায়, এসব নিয়ে মাথা ঘামাই না। যা লেখার জন্যে মনে সুন্দর উন্মাদনা এলো তা লিখলাম। কোনো লেখক তার নিজের লেখাটি নিজেই লিখছেন কিনা এ প্রশ্নও ইনভেলিড না। কারণ মানুষের মনের ইচ্ছা জাগার ব্যাপারটিও তার নিয়ন্ত্রণে আছে বলে মনে হয় না। সে তো ক্রমাগত রিএক্টরের ভূমিকায়। তার মাঝে প্রতিক্রিয়া হচ্ছে, প্রতিধ্বনি হচ্ছে। অন্য ছাড়া তার নিজ নাই। সে তো একটা গ্রান্ড মিকানিজমের অংশ। তার এক্টিভিটি তার নিয়ন্ত্রণে থাকলে তার দায় নিয়ে ভাবা যাবে।

❑  একজন পাঠক হিসেবে যখন আপনার বই দেখছেন/পড়ছেন, তখন বইটিকে কেমন মনে হচ্ছে?

ভাল মনে হচ্ছে।

❑  অধিকাংশ লেখক বইমেলাকে কেন্দ্র করে বই প্রকাশ করে, বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখেন?

যেকোনো উপলক্ষে বই প্রকাশ হতে পারে। মৌসুমের ব্যাপারটা প্রকৃতিতে আছে। বই প্রকাশের মৌসুমে বই প্রকাশ হয়। নকলামি বান্দরামিও প্রকৃতিতে আছে। যার যার কর্মফল তার তার। যে ফুলে ঘ্রাণ নাই সেও তো ফোটে ঝরে। এতে বিচলিত হওয়ার কিছু নাই। খারাপ সমালোচক ভাল সমালোচক আছে। ধীরে লেখেন বা জলদি লেখেন, মৌসুমে লেখেন বা দশ বছরে একটা লেখেন, সবই এক সময় বিস্মৃত হওয়ার। মোহানজোদাড়ো-হরপ্পা, ব্যবিলনীয় বা মায়া সভ্যতার ছিটেফোঁটা আছে কেবল এই সময়ের মানুষের মেমরিতে। মনুমেন্ট — স্মৃতিস্তম্ভ কয়দিন — কয় হাজার বছর টিকবে? অমুক তমুকের ইতিহাস কয় হাজার বছর টিকবে? লাখো বছর আগে এই উপমহাদেশ ছিল না, ছিল মহাসাগরের একটা অংশ। ভবিষ্যতে ফের জলভাগ হতে পারে। সুতরাং অতিমাত্রার মাস্টারি কথাবার্তা গুরুত্বহীন। সব মিলিয়েই জগত-সংসার। কেউ ক্লাসিক লিখে ফেলবে এক সপ্তাহে, কেউ এক বছরে হালকা ধাঁচের কিছু লিখবে।

===============
অক্টোপাসের বউ
ধরণ: কাহিনিকাব্য
প্রচ্ছদ: কাজী যুবায়ের মাহমুদ
প্রকাশনা: চন্দ্রবিন্দু প্রকাশন
মূল্য: ১২০
পৃষ্ঠা: ৪৮
----------
তলস্তয় ও সোফিয়ার সম্পর্কের সৌন্দর্য উদ্ধার ও অন্যান্য
ধরণ: প্রবন্ধ
প্রচ্ছদ: রাহুল বিশ্বাস
প্রকাশনা: অগ্রদূত এন্ড কোম্পানি
মূল্য: ২০০
পৃষ্ঠা: ৮৬

মতামত:_

0 মন্তব্যসমূহ