বর্তমান সমাজের প্রতিচ্ছবি আব্দুল খালেক ফারুক রচিত 'সন্দেহভাজন' উপন্যাস

বর্তমান সমাজের প্রতিচ্ছবি আব্দুল খালেক ফারুক রচিত 'সন্দেহভাজন' উপন্যাস



সন্দেহ কে না করে? স্বামী স্ত্রীকে, প্রেমিক প্রেমিকাকে কিংবা রাষ্ট্রের জনগণ রাষ্ট্রযন্ত্রকে। আর আমার সন্দেহ জুড়ে যখন এই- আইন জনগণের জন্য না কি জনগণ আইনের জন্য ঠিক এমন সব সন্দেহভরা সময়ে লেখক ও সাংবাদিক আব্দুল খালেক ফারুক উপহার দিয়েছেন সন্দেহভাজন উপন্যাসটি। আগ্রহ নিয়ে পড়া শুরু করলাম।

উপন্যাসের নায়ক ইলতুৎমিশ। ডাক নাম ইতু। উপন্যাসের শুরুতেই লেখক শুরু করেন এভাবে-

চোখ দুটো বাধা ছিল। কালো কাপড়ের শক্ত বাঁধন খুলে দিতেই ইতু চারপাশটা পরখ করে নেয়, বুঝার চেষ্টা করে সে কোথায়। চারপাশটা দেখে বুঝতে অসুবিধা হয় না যে সে ডিবি কার্যালয়ে আছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনা হয়েছে। ভাগ্য ভাল হলে মুক্তি মিলবে আর কথায় গিট্টু লেগে গেলে হাজতবাস কিংবা বন্দুকযুদ্ধের নামে ক্রসফায়ার।

পুলিশদের সম্পর্কে আমাদের গল্পের নায়ক ইতুর লোকমুখে শোনা অনেক অভিজ্ঞতা আছে। তাদের ভাষা হয় অশালীন। আর তাদের কথা মতো কাজ না করলে পরতে হয় ক্রসফায়ারের তালিকায়। ইতুর এসব ভাবনার মাঝেই প্রশ্ন ছুড়ে আসে ইতুর দিকে, অন্ধকারে পার্কে বসে কি করছিলে? প্রথম পরিচয় যখন তুমি দিয়ে শুরু করেছে তখন শুয়ারের বাচ্ছা বা তার থেকে নোংরা ভাষা আসতে পারে সেটা ইতু আন্দাজ করতে পারে।

ইতু কি জবাব দিবে ভাবতে থাকে এমন সময় পুলিশের ওসি ধমকের সুরে বলে কথা কানে যায় না....। পুলিশের রাষ্ট্রিয় দায়িত্বের কথাও বলেন ওসি। জিজ্ঞাসাবাদে ইতুর কাছে আশানুরূপ ফলাফল না পাওয়ায় বন্দি করা হয় হাজতবাসে। চারদিকে জঙ্গি ধরার আমেজে মেতে উঠে ওসি। ইতুর মতো একজন দুধর্ষ জঙ্গিকে কোর্টে চালান করে উপরে উঠবার জন্য তিনি অনেক কায়দা কানুন খোঁজেন। কিন্তু এই বেটা ইতু তেমন সুবিধার নয়। সোজা উত্তর দিচ্ছে না। তাই কনস্টেবল জালালকে ইতুর দিকে এক্সট্রা নজর দিতে বলে। এদিকে ইতুকে না পেয়ে তার বাবা মা অস্থির হয়ে উঠে এবং থানা পুলিশ খোঁজা শেষ করে। সর্বশেষ আশ্রয় নেন কবিরাজ ফকিরের। লেখক এখানে সুকৌশলে ঘোড়া ফকিরের মাধ্যমে তুলে ধরেন অন্ধ এক জগতের চিত্র। এই একবিংশ শতাব্দীতে এসে আমরা ফকিরের উপর সন্দেহভাজন হয়েছি ঠিকই কিন্তু আমরা ফকিরের উপর নির্ভরতা ছাড়িনি। ভোটে দাড়ানোর আগে আমাদের রাষ্ট্র নায়কদের অনেকেই এরকম ফকিরের আশীর্বাদ নিয়ে থাকেন। লেখক সুন্দরভাবে আধুনিক সমাজের ফকির নির্ভরতা তুলে ধরেছেন। বরাবরের মতো ফকিরের ভূয়াবাজিতে ধোকা খেয়ে ইতুর বাবা যান এক সাংবাদিকের কাছে, সেখানেও আমাদের বর্তমান সময়ের হলুদ সাংবাদিকতার একটি বাস্তব চিত্র ফুটে। উঠে আসে সাংবাদিকতার এক কালো জগতের লেনাদেনার হিসাব। সন্দেহভাজন এই উপন্যাসে ফুটে উঠে বর্তমান সমাজচিত্র।

উপন্যাসের নায়িকা তরী। সে পড়ালেখা শেষ করা বেকার যুবক ইতুর প্রেমিকা। তরী ও ইতুর ভালবাসার একটি সুন্দর চরিত্রায়ন ফুটে উঠে উপন্যাসের মধ্যপ্রান্তে। সে চিত্র চিরাচরিত প্রেমের আদলে হলেও ফুটে উঠেছে লেখকের দক্ষতা। পাঠকের আগ্রহের কথা ভেবেই তা বর্ণনায় বিরত থাকলাম।

সন্দেহভাজন উপন্যাসে লেখক থানা পুলিশের ব্যপারে অত্যন্ত কৌশল অবলম্বন করেছেন। তবে আমাদের পুলিশের অবস্থা ও সমাজ চিত্র তুলে ধরতে কার্পণ্যতা করেননি। কিভাবে একজন সাধারন মানুষকে সন্দেহভাজন ভাবে সমাজের শত্রু প্রমাণ করে ক্রস ফায়ার দিয়ে দেয় আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্র। আর লজ্জা ভয় ও ঘৃণায়, মাঝে মাঝে পরিবার লাশ গ্রহণে অনাগ্রহ প্রকাশ করে তা ফুটে উঠে সন্দেহভাজনে। সন্দেহভাজন উপন্যাসটিতে বর্তমান সমাজের প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে। শব্দশৈলী প্রকাশনীর প্রকাশিত ৭২ পৃষ্টার এই বইটির মূল্য মাত্র ১৫০ টাকা।

মতামত:_

0 মন্তব্যসমূহ