'সেলফ পোর্ট্রেইট' কাব্যগ্রন্থ নিয়ে সুপ্রিয় সাহার সাক্ষাৎকার

'সেলফ পোর্ট্রেইট' কাব্যগ্রন্থ নিয়ে সুপ্রিয় সাহার সাক্ষাৎকার

অমর একুশে বইমেলায় (২০২২) প্রকাশ হয়েছে সুপ্রিয় সাহা রচিত কাব্য 'সেলফ পোর্ট্রেইট'। বইমেলাতে নতুন বই প্রকাশকালের অনুভূতি এবং নিজের শিল্পভাবনার বহুবিধ দিক নিয়ে কবি সুপ্রিয় সাহা কথা বলেছেন  'গ্রন্থগত' এর সঙ্গে।


❑  সম্প্রতি আপনার কবিতার বই প্রকাশিত হলো। আপনার অনুভূতি জানতে চাই।

সুপ্রিয় সাহা: অনুভূতি খুবই ভালো। বই প্রকাশিত হবার সময় একটা এক্সাইটমেন্ট কাজ করে। সাথে শারীরিক, মানসিক ক্লান্তিও আসে। কিন্তু পাঠকের ভালোবাসা পেলে সেসব ধুয়ে যায়।

❑  বই প্রকাশের সিদ্ধান্তে উপনীত হলেন কীভাবে?

সুপ্রিয় সাহা: মানুষ সবসময়ই তার অনুভূতি প্রকাশ করতে চায়। আমি কবিতাকে বেছে নিয়েছি মাধ্যম হিসেবে। তবে কবিতা লেখা আর বই প্রকাশ করার মধ্যে বিস্তর ফারাক। আমার কাছে বই প্রকাশ করা মানে হলো, অনুভূতিগুলো একপ্রকার কবর দিয়ে নতুন বাস্তবতার দিকে এগিয়ে যাওয়া।

❑  বইটি প্রকাশ করতে প্রকাশক নিয়ে জটিলতায় পড়তে হয়েছিলো কি?

সুপ্রিয় সাহা: জটিলতা একদমই হয়নি। ২০২১ সালে আমার প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'ব্ল্যাকহোল' প্রকাশিত হয় ঘাসফুল প্রকাশনা থেকে। প্রকাশক মাহদী আনাম ভাই নিজেই আমাকে ২০২২ এর বইমেলার জন্য আরেকটি পাণ্ডুলিপি তৈরি করতে বলেন।

❑  নিজের লেখার প্রতি আত্মবিশ্বাস কতটুকু?

সুপ্রিয় সাহা: আত্মবিশ্বাস ভালোই। সভ্যতা এমন এক জায়গায় পৌঁছেছে যেখানে আমরা কেউই শতভাগ মৌলিক লেখা উৎপাদন করতে পারিনা৷ আমরা যা পড়ি, দেখি তা লেখায় চলে আসে এবং এটাই স্বাভাবিক। সমস্যাটা হয় তখন যখন কেউ সরাসরি কপি করে। আমার আত্মবিশ্বাসের একটা শক্ত ভিত্তি হচ্ছে, আমি কপি করিনা। তাই, পাঠকরা 'নতুন কিছু' পাবেন বলে আশা করি।

❑  কবিতাই কেন লিখলেন? ভাব প্রকাশের জন্য শিল্পের আরও তো মাধ্যম আছে।

সুপ্রিয় সাহা: শিল্পের সব মাধ্যমেই আমার আগ্রহ আছে। কিন্তু কবিতা আমার বিশেষ পছন্দের ক্ষেত্র। একটি ভালো কবিতা পড়ে গল্প বা উপন্যাস পড়ার সমান কিংবা তার চেয়েও বেশি স্বাদ পাওয়া যেতে পারে। তাছাড়া, প্রবন্ধ, উপন্যাস, ছোটগল্প এগুলোকে অনেক বেশি কাঠামোবদ্ধ মনে হয় আমার কাছে। আমি এক শব্দের কবিতাও লিখেছি। তো, কবিতা ছাড়া এই স্বাধীনতা আর কোথায় পেতাম!

❑  অনেকে বলেন লেখার ক্ষেত্রে প্রস্তুতির প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে আপনারা প্রস্তুতির কথা জানতে চাই।

সুপ্রিয় সাহা: যেহেতু আমি শুধু কবিতা লিখি, আমার কাছে প্রস্তুতি বলতে পড়া। আমি যদি কোনো নিবন্ধ বা ডকু-ফিকশন লিখতাম তাহলে আমাকে রীতিমতো গবেষণা করতে হতো। কবিতায় সেধরনের গবেষণা নিষ্প্রয়োজন।

ভালো লেখার জন্য পড়ার কোনো বিকল্প নেই। যত বেশি পড়া যাবে ততই নতুন নতুন প্রকাশভঙ্গি, প্যাটার্ন সম্পর্কে জানা যাবে। আমি মনে করি ভালো লেখার জন্য সমকালীন সমাজ, রাজনীতি সম্পর্কে জানতে হবে।

আমি ক্লাসিকের চেয়ে কন্টেম্পোরারি লেখা বেশি পড়ি। শুধু কবিতা নয়, প্রবন্ধ, নিবন্ধ, গল্পও পড়ি। নিজেকে কবির চাইতে পাঠক ভাবতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। আনন্দের জন্য পড়ি এবং তাতেই লেখার প্রস্তুতি হয়ে যায়।

❑  পাণ্ডুলিপি গোছানোর ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েছেন?

সুপ্রিয় সাহা: একটি বইয়ের প্রত্যেকটি কবিতা শক্তিশালী হবে না-- এটা মেনে নিয়েই পাণ্ডুলিপি তৈরি করেছি। তবে বেশিরভাগ কবিতা যাতে 'ভালো' হয়, তার প্রতি নজর ছিলো। বইয়ে কবিতার সিকোয়েন্স সময়ক্রম অনুযায়ী সাজাই না। খেয়াল রাখি, কোনো জনরার কবিতাসমূহ যাতে এক জায়গায় ভিড় না করে৷ থিমগুলোকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখতে পছন্দ করি; যাতে পাঠক ডটগুলো মিলিয়ে কোনো একটা চিত্র সাজাতে পারে।

❑  শিল্প না কি পাঠক, আপনার দায়বদ্ধতা কার কাছে?

সুপ্রিয় সাহা: শিল্প বা পাঠক কারোর প্রতিই আমার দায় নেই। আমার লেখাগুলো 'কবিতা' হয়ে উঠলো কিনা তা নিয়েও আমার মাথাব্যথা নেই। আমি লিখি আমার ভালো লাগে বলে। ভালো না লাগলে লিখবো না।

তবে দায় আছে আমার নিজের কাছে। আমি এমন কিছুই লিখিনা, যা আমি সত্য বলে মনে করিনা। আমি এমন কিছুই লিখিনা, যা আমার যাপনের সাথে যায় না। এগুলোর ব্যত্যয় ঘটলে নিজের সাথে অসততা করা হবে যেটা আমার দ্বারা সম্ভব না। এটা আমার দম্ভের জায়গা৷

❑  একজন পাঠক হিসেবে যখন বইটি দেখছেন/পড়ছেন, তখন বইটিকে কেমন মনে হচ্ছে?

সুপ্রিয় সাহা: পান্ডুলিপি সাজানোর পরে অনেকবার পড়ি। নিজের যদি ভালো না লাগে তাহলে ছাপানোর কোনো যৌক্তিকতা নেই। বারকয়েক পরীক্ষায় পাশ করে তবেই তা ছাপা হয়।

দ্বিতীয় বই 'সেলফ পোর্ট্রেইট'-এর ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। যখন সেটা বইয়ে পরিণত হলো তখন আবার পড়লাম। পাঠকের দৃষ্টিভঙ্গিতে বইটিকে গতানুগতিক ধারার বাইরের কিছু মনে হচ্ছে। যদি কখনো নিজেকে হারানোর অনুভূতি হয়, প্রণোদনার দরকার পড়ে, তখন আবারও 'সেলফ পোর্ট্রেইট' পড়বো, এটা নিশ্চিত।

❑  অধিকাংশ লেখক বইমেলাকে কেন্দ্র করে বই প্রকাশ করে, বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখেন?

সুপ্রিয় সাহা: আমি বইমেলার বিরুদ্ধে না; বইমেলাকে কেন্দ্র করে বই প্রকাশের বিরুদ্ধেও না। তবে একটা দেশের বেশিরভাগ লেখক-কবি যখন শুধুই বইমেলাকে কেন্দ্র করে বই প্রকাশ করে, তা অবশ্যই সংকটের ব্যাপার। তবে এখানে প্রকাশকের ভূমিকা আছে। প্রকাশকেরাও চায় বইমেলায় বই প্রকাশ করতে। অনেক আগে পান্ডুলিপি পেয়ে গেলেও তারা বইমেলা পর্যন্ত অপেক্ষা করে। এই ট্রেন্ড থেকে বের হয়ে আসতে হবে। বইকে শুধু একটা মাসে সীমাবদ্ধ করা যাবে না। সারাবছর বিভিন্ন বই প্রকাশিত হবে এবং প্রকাশকেরা দায়িত্ব নিয়ে তা বিপণন করবেন-- এমনটাই হওয়া উচিৎ বলে মনে করি।

মতামত:_

0 মন্তব্যসমূহ