'মেঘজমা দিন' - শামসুল কিবরিয়া'র মুক্তগদ্য সম্পর্কে কবি নাহার আলমের আলোচনা

'মেঘজমা দিন' - শামসুল কিবরিয়া'র মুক্তগদ্য সম্পর্কে নাহার আলম


 
সাহিত্যের ছোটকাগজ বইকথার সম্পাদক শামসুল কিবরিয়া'র মুক্তগদ্য "মেঘজমা দিন" মুলত নিতি যাপনের খণ্ড খণ্ড চিত্রের প্রতিভাস। যা কখনো মনের খেয়ালে, চেতনে বা অবচেতনের না বলতে পারার অনুভূতির ঢালাও প্রকাশ। যেখানে অনেকটা জুড়ে আছে আত্মকথন, আত্মভাবনার বিচ্ছিন্ন কিছু টুকরো টুকরো ঘটনার বিবরণ।

পড়লে তেমনটিই মনে হতে পারে যে কোনো পাঠকের কাছে। মনে হলো যেমমটি আমার।

উৎসর্গনামায় রাখা প্রয়াত কবিদ্বয়ের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।

ছোট ছোট বারোটি অধ্যায়ে সাজানো হয়েছে।

ডিভাইসের দৌলতে রাত জাগা মানুষ ভুলে যায় প্রকৃতির চিরচেনা ফুলের সৌরভ। তার বদলে মুঠোবন্দি হয় বিশ্ব। নষ্ট হয় সময়, চরিত্র মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ, ইমু ইত্যাদির দৌরাত্ম্যে। তারা রাত জাগাকে উপভোগ করে ভিন্ন মাদকতায়। কিন্তু সংসারের টানাপোড়েনের চাপে মানুষগুলো একটুখানি ঘুমের জন্য ট্যাবলেটকেই বেছে নিতে হয়। তাদের জন্য রাত জাগাটা যন্ত্রণার... এমনই এক বিষয় নিয়ে তার প্রথম গদ্য রাত জাগার বৃত্তান্ত: যন্ত্রণা কিংবা মাদকতা।

ডিভাইসের এই ভয়ংকর ক্ষতিকর দিক নিয়ে লেখা "দিনযাপনের কলাবিদ্যা" গদ্যটিও।

শিরোনাম গদ্য মেঘজমা দিন
এখানেও রুটিনমাফিক সংসার যাপনের বাহ্যিক চাপকে মেঘের সাথে তুলনা করে লেখা। তার সাথে লড়াই করে নিজেকে প্রাণবন্ত রাখার চেষ্টায় কাটে নির্ঘুম যন্ত্রণাকাতর রাত। এসব চিত্র মুলত প্রতিটি মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে।

তৃতীয় গদ্য "আমাদের ছোটো নদী" মূলত নদী খেকোদের দৌরাত্ম্যে নদীর দূষণ ও শীর্ণকায় অবস্থার কথা তুলে ধরেছেন আত্মকথনের মাধ্যমে।

প্রত্যেক মানুষের ভেতরে থাকা নিজ মনের অন্তর্দ্বন্দ্ব আর বহির্দ্বন্দ্বের যুদ্ধে ভেতরের আমি আর বাইরের আমি'র মনস্তাত্ত্বিক জটিলতা নিয়ে লেখা "মনেরে আজ কহ যে" গদ্যটি।

কোনো মানুষ ছোটো খাটো অপরাধ মুক্ত নয়। তা সে বয়সের দোষেই হোক বা অন্য কোনো চাপের কারণেই হোক। পাপ তো মানুষই করে। তবে পীড়নবোধ হয় ক'জনের? তেমনই এক আত্মপীড়ন মূলক গদ্য "কয়েক টুকরো অপরাধচিত্র"।

শেষ গদ্য "অপঠিত নন্দনতত্ত্ব"। জীবন ও জীবিকার ঘেরাটোপে দ্বিতীয় কোনো অপশন নেই বেছে নেবার। ফুলের সুবাস কিংবা চাঁদের স্নিগ্ধতাও মনকে নাড়া দেয় না। কারণ 'জীবন' শব্দের প্রতিশব্দ 'কাজ' শব্দটিকেই সর্বাধিক প্রাধান্য দিতে শেখানো হয়, হয়ে যায় আপনা থেকেও। তাই নান্দনিকতার পাঠ সত্যিই এখানে বিলাসিতা মাত্র!  এমন ভাবনায় লেখা গদ্যটি।

বেশিরভাগ গদ্য 'তুমি', 'আমি' সর্বস্ব। এতে অবশ্য ধরে নিতে পারি লেখকের ভেতর ও বাইরের দ্বৈত সত্তাকেই।

এছাড়াও বাকি গদ্যগুলোরও পাঠ মুগ্ধ করেছে। যেমন: আলো ছায়ার খেলা, আজ আমার একলা থাকার দিন, শেকড় থেকে মেলব ডানা, হেমন্তদিনের সংলাপ, কুয়াশার ডিম

পরিশেষে, সমালোচনার খাতিরে দু'একটি কথা যা না বললেই নয়। তা হলো, লেখাগুলোয় সব ঠিকই আছে তবে আরও ভালো হত যদি প্রতিটি গদ্যে সমাজ, সংসার, জীবনের ও যাপনের এমন কিছু মেসেজ দেয়া যা পাঠককে মোহিত করার পাশাপাশি ভাবতে শেখাত, সংস্কারের দায়বদ্ধতার মানসিকতা তৈরি করতে পারত।

বইটির সাফল্য কামনা রইলো। নির্ঝর নৈঃশব্দ্যের চমৎকার প্রচ্ছদে বইটির মূল্য ২০০ টাকা। বুনন প্রকাশন থেকে প্রকাশিত। সংগ্রহ করতে পারেন বন্ধুরা।

 

****************

একই বইয়ের আরেকটি আলোচনা -


****************
মেঘজমা দিন
শামসুল কিবরিয়া


প্রচ্ছদ: নির্ঝর নৈঃশব্দ
প্রকাশনী: বুনন প্রকাশন, সিলেট, বাংলাদেশ
প্রকাশকাল: ফেব্রুয়ারি ২০২৩
পৃষ্ঠা:৪৮
মূল্য২০০/-
ISBN 978-984-97197-0-0

মতামত:_

0 মন্তব্যসমূহ