শামসুল কিবরিয়া রচিত 'মেঘজমা দিন'- মুক্তগদ্যের আলোয় ভরা ভাবনারা: ইলিয়াস বাবর

শামসুল কিবরিয়া রচিত মুক্তগদ্য 'মেঘজমা দিন'- মুক্তগদ্যের আলোয় ভরা ভাবনারা: ইলিয়াস বাবর


ইদানিং মুক্তগদ্য নিয়ে এক-আধটা আয়োজন দেখা যায় কোন কোন ছোটকাগজের। এমনকি দৈনিকের পাতায়ও শোভা পায় মুক্তগদ্যের প্রকাশ। কিন্তু মুক্তগদ্যেরই একটা সংকলন প্রকাশ করা যে কোন লেখকের জন্য একই সাথে চ্যালেঞ্জ ও সাহসের। কোন কোন কবিতাকেও আজকাল মুক্তগদ্য হিসেবে অনায়াসে চালিয়ে দেয়া যায় তার নির্মাণ ও বিষয়গুণে। আবার গল্পহীন গল্পচর্চায় দেখা যায়  মুক্তগদ্যের আড়াল কি ঝলকানি। শামসুল কিবরিয়াকে ধন্যবাদ দিতেই হয়, তিনি আড়ালে যাননি, মুক্তগদ্যকে মুক্তগদ্যের মর্যাদা দিয়ে সংকলনভুক্ত করেছেন নিজের ভাবনাগুলোকে, সংবেদ ও সময়কে। তার দেখার চোখ, তার বিশ্বাস, তার সমসাময়িক বাস্তবতাকে তিনি মুক্তগদ্যের উদ্যানে ছেড়ে দিয়েছেন। একেকটা নাতিদীর্ঘ গদ্য তাই হয়ে ওঠে হৃদয়ের কবিতা, মননের বহিঃপ্রকাশ, সৃজনের অনন্য সম্ভার।

অবশ্য মুক্তগদ্যের ক্ষেত্রে বেশ সুবিধাই থাকে বোধ করি লেখকের। ভাবনাকে যেকোন ভাবে প্রলম্বিত করা যায়, যেকোন দিকে তাকে টানা যায়, ফলে ফরমেটের চিন্তার গরহাজির নিয়ে ভাবতে হয় না। মুক্তগদ্যে লেখক যে স্বাধীনতাটুকু ভোগ করেন তার ষোলআনা উপভোগের উপলক্ষ হয়ে যায় পাঠকের। "মেঘজমা দিন" নামের ভেতর কাব্যগন্ধি ভাব আছে, গল্পের বিস্তার আছে। ক্ষণিকের ঘোরলাগা পাঠককে গল্পের স্বাদ দেবে, কখনোবা প্রবন্ধের সাযুজ্য। তবুও শেষতক এসব গদ্যকে চিহ্নিত করা যায় মুক্তগদ্যরূপে, তা তার প্রসাদগুণে। নাতিদীর্ঘ শরীর নিয়ে এককেটা গদ্য পাঠকের হৃদয়ে নাড়া দেয়ার মতো, চমকে দেয়ার মতো, উদ্দেশহীন করার মতো এবং ভাবনাকে উসকে দেয়ার মতো। বারোটা মুক্তগদ্যের সমাহার এই কিতাবের একেকটা লেখার শিরোনাম শিহরণজাগানিয়া। রাত জাগার বৃত্তান্ত: যন্ত্রণা কিংবা মাদকতা, মেঘজমা দিন, আজ আমার একলা থাকার দিন, দিনযাপনের কলাবিদ্যা, কুয়াশার ডিম, অপঠিত নন্দনতত্ত্ব ইত্যাদি নাম যে কাউকে প্রলুব্ধ করবে ভেতরে ঢোকার। আর আছে গদ্যের মতোই স্মার্ট কিতাবটির অবয়ব, মেদহীন, ছোটমোটো। গল্পের ঢঙে নিজের বিশ্বাস, বোধ, বাস্তবতা ও সময়কে একরকম বিচরায়ে লেখক তার চিন্তার সমান্তরালে দাঁড় করিয়ে নেন দৈশিক ও আর্ন্তজাতিক নানা প্রেক্ষাপট। তার সাথে থাকে প্রযুক্তিবাহিত নানা ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার সংযুক্তি।

এ কারণে আমরা সূর্যোদয় দেখি না, আমরা সূর্যাস্ত দেখি না
অবশ্য মুক্তগদ্যের ক্ষেত্রে বেশ সুবিধাই থাকে বোধ করি লেখকের। ভাবনাকে যেকোন ভাবে প্রলম্বিত করা যায়, যেকোন দিকে তাকে টানা যায়, ফলে ফরমেটের চিন্তার গরহাজির নিয়ে ভাবতে হয় না। মুক্তগদ্যে লেখক যে স্বাধীনতাটুকু ভোগ করেন তার ষোলআনা উপভোগের উপলক্ষ হয়ে যায় পাঠকের। "মেঘজমা দিন" নামের ভেতর কাব্যগন্ধি ভাব আছে, গল্পের বিস্তার আছে। ক্ষণিকের ঘোরলাগা পাঠককে গল্পের স্বাদ দেবে, কখনোবা প্রবন্ধের সাযুজ্য। তবুও শেষতক এসব গদ্যকে চিহ্নিত করা যায় মুক্তগদ্যরূপে, তা তার প্রসাদগুণে। নাতিদীর্ঘ শরীর নিয়ে এককেটা গদ্য পাঠকের হৃদয়ে নাড়া দেয়ার মতো, চমকে দেয়ার মতো, উদ্দেশহীন করার মতো এবং ভাবনাকে উসকে দেয়ার মতো। বারোটা মুক্তগদ্যের সমাহার এই কিতাবের একেকটা লেখার শিরোনাম শিহরণজাগানিয়া। রাত জাগার বৃত্তান্ত: যন্ত্রণা কিংবা মাদকতা, মেঘজমা দিন, আজ আমার একলা থাকার দিন, দিনযাপনের কলাবিদ্যা, কুয়াশার ডিম, অপঠিত নন্দনতত্ত্ব ইত্যাদি নাম যে কাউকে প্রলুব্ধ করবে ভেতরে ঢোকার। আর আছে গদ্যের মতোই স্মার্ট কিতাবটির অবয়ব, মেদহীন, ছোটমোটো। গল্পের ঢঙে নিজের বিশ্বাস, বোধ, বাস্তবতা ও সময়কে একরকম বিচরায়ে লেখক তার চিন্তার সমান্তরালে দাঁড় করিয়ে নেন দৈশিক ও আর্ন্তজাতিক নানা প্রেক্ষাপট। তার সাথে থাকে প্রযুক্তিবাহিত নানা ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার সংযুক্তি।

বিশ্বায়ন, মুক্তবাজার অর্থনীতি আমাদেরকে ঘুম পাড়ানি গানের বদলে দেয় মাদক, পর্ন মুভি। ফলে আমরা রাত জাগি। আর এ কারণে আমরা সূর্যোদয় দেখি না, আমরা সূর্যাস্ত দেখি না।


অথবা

অথচ 'নদী বিধৌত বাংলাদেশ' পাঠ্যবইয়ে এখনো পড়ে শিশুরা, পড়ে কোন নদীর উৎস কোথায়, এক নদীর সাথে অপর নদী কোথায় মিলেছে। তবে কেন এমন হচ্ছে! নদীগুলো একে একে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।


অথবা

যৌথ বিচরণের ক্ষেত্রগুলোও হারিয়ে যাওয়ার পথে। কিছু বিষয় তো ইতোমধ্যে অতীতের গর্ভে চিরদিনের জন্য চলে গেছে। পত্রিকা, বই, টেলিভিশনকে কেন্দ্র করেও যে-মেলবন্ধনের দেখা মিলত তা-ও হারিয়ে যাচ্ছে।


কিংবা

মা-বাবা মজে থাকেন কোনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আর বাচ্চারা মেতে থাকে কোনো গেমে বা ইউটিউবে, কোনো ভিডিও কনটেন্ট নিয়ে।


এরকম অসংখ্য উদ্বৃতি দেয়া যাবে পাঠকের করকমলে। কিন্তু লেখাটি তাতে ভার হয়ে যায় অথচ মুক্তগদ্যের একেকটি বক্তব্য কি উদ্বৃতি এত বেশি প্রাসঙ্গিক আর চিন্তাপ্রসূত তা এড়িয়ে যাওয়া রীতিমতো মুশকিল। আমাদের নদী মরে যাচ্ছে, যৌথতার শুদ্ধ অগ্রযাত্রা ভেঙে পড়ছে, বেড়ে চলছে ডাকাতদলের উৎপাত, রুচিতে ধরেছে মূর্খের খামচি, দীর্ঘ সবুজ বাগানের বদলে বাসা বেঁধেছে বনসাই-কালচার, আর আছে পুঁজির দাসত্ব; সব মিলিয়ে বর্তমানের যে প্রেক্ষিত তার দিকেই লেখক বারবার নজর নেয়ার চেষ্টা করেছেন। কবিতা-গল্প-উপন্যাস-প্রবন্ধের রাজ্য শাসনে মুক্তগদ্যের এই যে আত্মপ্রকাশ একেবারে সবটার নির্যাস নিয়ে তা আমাদের সাহিত্যের জন্য, নির্মল পাঠের জন্য আনন্দের। তবে তা ব্যক্তির একক চিন্তা ছেড়ে যত বেশি সমষ্টির চেতনা ধারণ করতে পারবে ততই মঙ্গল। এই বিষয়টার দিকে নজর দিলে শামসুল কিবরিয়া মুক্তগদ্য জনরায় বিশিষ্ট হয়ে ওঠবেন তা দৃঢ়ভাবে বলা যায়।


****************
মেঘজমা দিন
শামসুল কিবরিয়া


প্রচ্ছদ: নির্ঝর নৈঃশব্দ
প্রকাশনী: বুনন প্রকাশন, সিলেট, বাংলাদেশ
প্রকাশকাল: ফেব্রুয়ারি ২০২৩
পৃষ্ঠা:৪৮
মূল্য২০০/-
ISBN 978-984-97197-0-0

মতামত:_

0 মন্তব্যসমূহ