বাউল সংগীতের দর্শন, সাহিত্যতত্ত্ব ও সৌন্দর্য সম্পর্কে আলোচনার বই দেবপ্রসাদ দাঁ সম্পাদিত 'বাউল সংগীতের নন্দনতত্ত্ব'

বাউল সঙ্গীত দর্শন বিষয়ক দেবপ্রসাদ দাঁ সম্পাদিত 'বাউল সংগীতের নন্দনতত্ত্ব' বইয়ের প্রচ্ছদচিত্র


বাঙালী জীবনে লোকসঙ্গীত ও লোকদর্শনের চর্চা ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। মানুষের নাগরিক হবার শ্লাঘা আত্মদর্শনের সুযোগ ও সময় কোনটাই দেয় না। অথচ লোকজীবনের নানাবিধ আধ্যাত্মিক প্রশ্নচর্চায় বাউল সাধকরাই বাঙালী দর্শনের প্রাণ। বাঙালীর আত্মপরিচয় নিহিত আছে বাউলদের জীবন ও গানের ভাঁজে ভাঁজে। দেবপ্রসাদ দাঁ সম্পাদিত 'বাউল সংগীতের নন্দনতত্ত্ব' বইতে বাউল গান, বাউল তত্ত্ব ও বাউল দর্শন নিয়ে বিবিধ বিষয় উপস্থাপিত হয়েছে একাধিক প্রবন্ধে। সম্পাদক তাঁর ভূমিকায় বলেন-


একথা সত্যি যে, বাউলদের কঠিন সাধনা, তপস্যা ও আত্মসংযমের ব্রত সবার পক্ষে পালন করে চূড়ান্তে পৌঁছানো সম্ভব নয়। এমনকি সাধকেরও অনেকেই পুরোটা পথ পাড়ি দিতে পারেন না রিপু ও ইন্দ্রিয়ের ফাঁদে পড়ে। তবুও অনুসারীগণ যতটুকু পথ এগিয়ে দিয়ে যায়, ততটুকুই প্রশান্তির। মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসা, জাতি-গৌরবের বিনাশ, ব্যক্তির ভিতরে থাকা 'আমি'কে ধ্বংস করা, যাপিত জীবনে অসংখ্য মোহ ও রিপুর প্রভাব থেকে ফিরিয়ে রাখা, অসতের চক্র থেকে সরে এসে শুদ্ধাচারি জীবনের দিকে বিবেক, জ্ঞান, সংযম, বৈরাগ্য ও ভক্তি প্রতিষ্ঠা করা, তাই বা কম কি? পৃষ্ঠা - ১০



মূল আলোচনায় যাওয়ার আগে বইয়ের সূচিপত্রটি একবার দেখে নেয়া যাক।


সূচিপত্র


  • সম্পাদকের কথা
  • ভূমিকা
  • বাউলের গান- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
  • বাউল গানের রূপ ও সাহিত্যিক মূল্য – অধ্যাপক উপেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য
  • লালন ফকির ও রবীন্দ্রনাথ – অন্নদাশঙ্কর রায়
  • সাধক লালন শাহ- কাজী মোতাহার হোসেন
  • রবীন্দ্রনাথ ও বাংলার বাউল – শান্তিদেব ঘোষ
  • লালন শাহ ও আত্মদর্শন – দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ
  • শাস্ত্রীয় সংগীত ও লালন গীতি - মকছেদ আলী সাঁই
  • লালন সংগীতের তত্ত্ববিচার – খোন্দকার রিয়াজুল হক
  • বাংলা দেহতত্ত্বের গান – সূধীর চক্রবর্তী
  • লালন তত্ত্ব - রমাকান্ত চক্রবর্তী
  • বাউল কবি লালন ও সাহিত্য-বৃত্ত – সনৎকুমার মিত্র
  • বাউলের আউল কথা - লীনা চাকী


বাউলের গান

বাঙালী জীবনের প্রাচীন আধ্যাত্মিক বোধ বাউল দর্শন। বাউল গানের মধ্য দিয়ে এর তত্ত্ব আমাদের হৃদয়ে মহাকালিক তরঙ্গের প্রতিধ্বনি তোলে। আমরা আধুনিক জীবনের তাড়না থেকে মুক্ত হই। সমকালীন অন্তসারশূন্যতা নিজেকে আর আড়াল করতে পারে না। আধুনিক শিক্ষিত মানুষের যাপিত জীবনের অসারতা প্রকট হয়ে ধরা পরে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর 'বাউলের গান' প্রবন্ধে এই প্রসঙ্গে বলেন-


আমরা দেখিতে পাই মগ্নতরী হতভাগ্যের ন্যায় আমাদের এই হৃদয় ক্ষণস্থায়ী যুগবিশেষের অভ্যাস ও শিক্ষা- নামক ভাসমান কাষ্ঠখণ্ড আশ্রয় করিয়া ভাসিয়া বেড়াইতেছে না, অসীম মানবহৃদয়ের মধ্যে ইহার নীড় প্রতিষ্ঠিত। ইহা দেখিলে আমাদের হৃদয়ের উপরে আমাদের বিশ্বাস জন্মে। আমরা তখন যুগের সহিত যুগান্তরের গ্রন্থনসূত্র দেখিতে পাই। আমার এই হৃদয়ের পানীয় – এ কি আমার নিজেরই হৃদয়স্থিত সংকীর্ণ কূপের গন্ধ হইতে উত্থিত, না, অভ্রভেদী মানবহৃদয়ের গঙ্গোত্রীশিখরনিঃসৃত, সুদীর্ঘ অতীত কালের শ্যামল ক্ষেত্রের মধ্য দিয়া প্রবাহিত, বিশ্বসাধারণের সেবনীয় স্রোতস্বিনীর জল! যদি কোন সুযোগে জানিতে পারি শেষোক্তটিই সত্য, তবে হৃদয় কি প্রসন্ন হয়! প্রাচীন কবিতার মধ্যে আমাদিগের হৃদয় সেই প্রসন্নতা লাভ করে। - পৃষ্ঠা ১৯



বাউল গানের রূপ ও সাহিত্যিক মূল্য

অধ্যাপক উপেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য তাঁর 'বাউল গানের রূপ ও সাহিত্যিক মূল্য' প্রবন্ধে বাউল গানের রূপ নির্বাচনের প্রচেষ্টা করেছেন। তিনি মনে করেন সহজাত জীবন বোধ বা কবিত্বের অনুপ্রেরণায় এই গানগুলো ছন্দোবদ্ধ রূপ লাভ করে। এসবের মধ্যে কোন কৃত্রিমতা বা কষ্টকল্পিত সাহিত্যপ্রয়াস নেই। চারপাশের প্রত্যক্ষ জীবন, বস্তু ও প্রকৃতি থেকে এই গানগুলোর উপমা ও রূপকের বিষয়গুলো সংগৃহীত হয়। তাই কখনো কখনো নিতান্ত আটপৌর ভাষায়, কখনও বা আঞ্চলিক বা কথ্য ভাষায় বাউল শিল্পীদের ভাবানুভূতি কাব্যরূপ গ্রহণ করে। তিনি সরলভাবে বুঝিয়ে দেন-

প্রকৃতির নিজস্ব সম্পদের মতো এ-রচনা স্বাভাবিক, সহজ, সরল ও অযত্ন-বর্ধিত। পৃষ্ঠা - ২১


লালন ফকির ও রবীন্দ্রনাথ

এই প্রবন্ধে অন্নদাশঙ্কর রায় জানান ১৩২২ (১৯১৫-১৬ খ্রিষ্টাব্দে) সালে 'প্রবাসী' পত্রিকার 'হারামণি' বিভাগে রবীন্দ্রনাথের সংগৃহিত লালনগীতিগুলো প্রথম প্রকাশিত হয়। অর্থাৎ রবীন্দ্রনাথ ততোদিনে বিশ্বজোড়া খ্যাতি লাভ করেছেন। তবে অনেক আগে প্রায় ২২ বৎসর বয়স থেকেই তিনি বাউল গানের সাথে পরিচিত। ভারতী পত্রিকায় 'বাউল গান' (১৮৮৩ খ্রি.) নামেও একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন। তবে তিনি বাউল বলতে লালন ফকিরকে তখনও চিনতেন না। অন্য বাউল যেমন মদন বাউল, গগন হরকরা, বিশা ভূঁইমালী, গঙ্গারাম -এদের গানের সাথে তাঁর পরিচিতি ছিল। বাউল গানের প্রতি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আগ্রহের কারণ সম্পর্কে অন্নদাশঙ্কর রায় বলেন-


বাউলদের প্রতি তাঁর অনুরাগ সেই পর্যন্ত – ওরা মানুষতত্ত্বের সাধক। বাউলদের সাধনা কেবল কি মানুষতত্ত্বের সাধনা? আত্মতত্ত্ব, দেহতত্ত্ব ইত্যাদি আরো কয়েকটি তত্ত্বও বাউল গানের বিষয়। - পৃষ্ঠা ৪০



এ- গানের অন্তর্বাণীর প্রাধ্যান্য, রূপের আড়ালে লুকিয়ে বাজে যে অরূপ বীণা, তা শোনার জন্য একটা আলাদা শ্রবণ লাগে।
রবীন্দ্রনাথের সাথে লালনের সাক্ষাৎ হওয়ার যে গল্প প্রচলিত, শিলাইদহের শচীন্দ্রনাথ অধিকারী 'পল্লীর মানুষ রবীন্দ্রনাথ' প্রবন্ধে উল্লেখ করেছেন, তার সত্যতা নিয়েও অন্নদাশঙ্কর রায় আলোচনা করেছেন। তিনি ধারণা করেন যে, রবীন্দ্রনাথের সাথে লালনের দেখা হওয়ার যে গল্পটি প্রচলিত সে সময় লালনের বয়স ছিল ১১২ এর মতো। আর রবীন্দ্রনাথের বয়স ছিল ২২ থেকে ২৯। সে সময় তিনি কবি হিসেবে তেমন পরিচিত ছিলেন না, বিশ্বজোড়া পরিচিতি আরও পরের ব্যাপার। তাঁর দেখা পাওয়ার জন্য বয়োবৃদ্ধ লালনের ঘোড়ার পিঠে চড়ে গোরাই নদী পার হয়ে দেখা করতে আসার কোন কারণ পাওয়া যায় না। বরং জ্যোতিরিন্দ্রনাথের সাথে দেখা হওয়া অধিক যুক্তিযুক্ত। কারণ লালনের স্কেচ জ্যোতিরিন্দ্রনাথ এঁকেছেন। সামনাসামনি না দেখলে চিত্রাঙ্কনে অবয়ব ফুটিয়ে তোলা কঠিন। আর শচীন্দ্রনাথ যার কাছ থেকে গল্পটি শুনেছেন তিনি হলেন শিলাইদহ নিবাসী হায়দার বরকন্দাজ। হায়দার বরকন্দাজের নিকট 'বাবুমশাই' শুধু রবীন্দ্রনাথ নন। অন্নদাশঙ্কর রায় মনে করেন বরকন্দাজ হায়দার মিঞা 'বাবুমশায়' বলতে 'জ্যোতিরিন্দ্রনাথ'কে বুঝিয়েছেন, ‘রবীন্দ্রনাথ'কে নয়। (পৃষ্ঠা- ৪৪)


বাউল গানের ভাষা প্রসঙ্গে প্রাবন্ধিক বলেন-


এইছন্দের ভাষা একঘেয়ে নয়। ছোট বড় নানা ভাগে বাঁকে বাঁকে চলেছে। সাধু প্রসাধনে মেজেঘষে এর শোভা বাড়ানো চলে, আশা করি এমন কথা বলবার সাহস হবে না কারো। এই খাঁটি বাংলার সকল রকম ছন্দেই সকল কাব্যেই লেখা সম্ভব এই আমার বিশ্বাস। পৃষ্ঠা - ৪৬



সাধক লালন শাহ

কাজী মোতাহার হোসেন তাঁর 'সাধক লালন শাহ’ প্রবন্ধে মরমী গানের প্রকৃতি সম্পর্কে বলেন-


সংগীতপ্রিয় বাংলা-দেশীয় সমাজে লোকগীতির ক্ষেত্রে সাধক লালন শাহ এত অজস্র ও অনবদ্য অবদান রেখে গেছেন যে, এইসব পরমার্থ-সূচক মরমী গানের সহজ প্রকাশমাধুর্য ও লালিত্যের গুণেই তিনি বেশ কয়েক শতাব্দী যাবত বাঙালির হৃদয়ে ভাব-লহরীর উদ্রেক করতে পারবেন। মরমী গানের প্রকৃতিই হচ্ছে, নানা রূপক দিয়ে অতীন্দ্রিয় ভাবকে প্রকাশ করতে হয়। অনেক সময় সেগুলো বুদ্ধি দিয়ে বেড় পাওয়া যায় না, হৃদয় দিয়ে অনুভব করেই লোকে তৃপ্তি পায়। হৃদয়ের অলক্ষ্য ভাবগুলো যেন মনকে কোনও মনোহর উচ্চগ্রামে নিয়ে যায়: এ অবস্থা অধিকক্ষণ স্থায়ী না হলেও, এর ক্ষণিকপ্রাপ্তির আনন্দটাই বা কম কি? সমুদয় মরমী ভাবের জন্য উপযুক্ত ভাষা না থাকাতেই ভাবাবিষ্ট গায়ককে হয়ত কখনও এক-একটা আজগুবি শব্দের উদ্ভাবন করতে হয়, নয়ত রূপক অলঙ্কার প্রভৃতি দিয়ে ইঙ্গিতে ভাব-সঞ্চারণ করতে হয়, আবার কখনও হয়ত ঐশিক প্রেরণায় হঠাৎ দৃষ্টি খুলে যায়, -- সে অবস্থায় অজ্ঞাতসারে, ‘অপরিচিত'-ও যেন পরিচিতরূপে আবির্ভূত হয়। এ সব রহস্যের কথা কে কাকে বুঝাবে? যার যার মেকদার মত সেই সেই, একটা অর্থ ঠিক করে নেয়। তাতে একটি বস্তু বা দৃশ্য এক এক জনের কাছে এক এক রূপে গৃহীত হয়। পৃষ্ঠা - ৪৮




রবীন্দ্রনাথ ও বাংলার বাউল 

শান্তিদেব ঘোষ তাঁর রবীন্দ্রনাথ ও বাংলার বাউল প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথের বিভিন্ন বক্তব্য থেকে বাউল সঙ্গীত সম্পর্কে তার মনোভাব উন্মোচন করার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে তিনি রবীন্দ্রনাথের অনুরাগের মুল বিষয়টিকে চিহ্নিত করতে সক্ষম হন। তিনি বলেন-


জীবন-দেবতা ও মনের মানুষের মধ্যে ঐক্যের সন্ধান পেয়েই গুরুদেব বাউল ও তাঁদের সাধনার প্রতি গভীরভাবে আকৃষ্ট হন। পৃষ্ঠা - ৬১



লালন শাহ ও আত্মদর্শন

দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ তাঁর 'লালন শাহ ও আত্মদর্শন' প্রবন্ধে লালনের বাউল গানের বিভিন্ন আধ্যাত্মিক দিক অন্বেষণ করেছেন। খাঁচার ভিতর অচিন পাখি গান সম্পর্কে বলেন-


পরম আত্মাকে অচিন পাখি বলে যেমন লালন ধারণা করেছেন, তেমনি আরও নানাভাবে নানারূপে ধারণা করেছেন। সে সব ধারণাতে বৈষ্ণব মতবাদ ও সহজিয়া মতবাদের নানা ভাবের প্রতিফলন সহজেই আবিষ্কার করা যায়।

তবে এ ক্ষেত্রে বিশেষ লক্ষ্যণীয় বিষয় এই যে, লালন সে অচিন পাখির মধ্যে লীন হতে প্রস্তুত ছিলেন না। তিনি ও তাঁর পরমারাধ্য পরমাত্মার মধ্যে একটা দ্বৈত পার্থক্য বজায় রাখতে ছিলেন উন্মুখ। পৃষ্ঠা - ৭২



তিনি লালনের জীবনধর্ম প্রসঙ্গে আরও বলেন-


যদিও লালন দ্বৈতবাদ ও অদ্বৈতবাদের এ দ্বন্দ্বে দোল খেয়েছেন তবুও একথা নিঃসন্দেহে বলা যায়--- জীবন ভরেই তিনি ছিলেন সত্য-সন্ধানী। খোলা ও প্রশস্ত মন নিয়ে তিনি জ্ঞানের ক্ষেত্রে অগ্রসর হয়েছেন। এখানেই রয়েছে-- তাঁর সত্যিকার পরিচয়। জ্ঞানের পূর্ণ বিকশিত আদর্শ সর্বকালেই মানব-মানসে আদি সঞ্চালক বা মহাআকর্ষণকারীরূপে বিরাজমান। পৃষ্ঠা - ৭৩



শাস্ত্রীয় সংগীত ও লালন গীতি

এই প্রবন্ধে মকছেদ আলী সাঁই লালনের গানে বৈষ্ণবধর্মীয় ভাবনার প্রতিফলন লক্ষ্য করেছেন। তিনি বলেন-


অনুকরণবর্জিত সংগীত সৃষ্টি বিরল। লালনও তাই পূর্বসূরি বৈষ্ণব পদাবলী ও শাক্তপদাবলী রচয়িতা কবিগণের কিছু কিছু অনুকরণ করে তাঁর সংগীত সৃষ্টির পথ রচনা করেছেন। নদীয়ার শ্রীচৈতন্যদেবের লীলাভূমি নবদ্বীপ ও অন্যান্য তীর্থক্ষেত্র পরিভ্রমণের কালে তিনি কীর্তন ও ভজনগীতি দ্বারা প্রভাবিত হন। ফলে, কীর্তনধর্মী লালনগীতি রচিত হয়েছে অনেকগুলো। আপেক্ষিকভাবে কিঞ্চিৎ পার্থক্য থাকলেও প্রায় ক্ষেত্রেই নিবেদনধর্মী কিছু গীতিকবিতার সুরে বিরহী প্রেমিক-প্রেমিকার বিচ্ছেদ-প্রদাহ লালনের গানে গোচরীভূত হয়। এই গানগুলো তাঁদের ভাষায় রাগদৈন্য বলে পরিচিত।… একটি গানের উল্লেখ করছি-


        "কালার কথা কেন বল আজ আমায়।
        যার নাম শুনিলে আগুন জ্বলে, অঙ্গ জ্বলে যায়।।"


গানটিতে বৈষ্ণব পদাবলীর অনুরূপ বিরহিনী রাধার প্রাণের বিরহ-বিধুর দিকটিই উদ্‌ঘাটিত হয়েছে। এখানে তত্ত্ব অপেক্ষা ভাব প্রাধান্য পেয়েছে। পৃষ্ঠা- ৭৬



আলোচক লালনের প্রকৃতি বিচার করে নির্দ্বিধায় বলেন-


লালন প্রকৃত তাপস এবং খান্দানি ফকির। তবে বক্তব্য ও তত্ত্বকথা তিনি গানে প্রকাশ করেছেন। সুতরাং তাঁকে তাত্ত্বিক গীতিকার 'সামা' সংগীতজ্ঞ সাধক শিল্পী বলা যায়। নিছক জড়বাদী বাউল বললে তাঁকে খাটো করা হয়। তাঁর সংগীত বাংলা শাস্ত্রীয় সংগীতেরই একাংশ। পৃষ্ঠা-৮১



লালন সংগীতের তত্ত্ববিচার

 খোন্দকার রিয়াজুল হক তাঁর লালন সংগীতের তত্ত্ববিচার প্রবন্ধে লালন গানের তত্ত্ব প্রসঙ্গে আলোচনার সূচনায় বলেন-


লালন-সংগীত অধ্যাত্মভাবে ভরপুর এবং তত্ত্বরসে অভিসিঞ্চিত। ঐশী চেতনা, মনোজাত অনুভূতি এবং অতিন্দ্রীয় উপলব্ধি থেকে এ সংগীতের উদ্ভব ও বিকাশ। এসব চেতনা-অনুভূতি-উপলব্ধি উৎসারিত হয় আত্মা থেকে। আত্মাই সকল অনুভূতির কেন্দ্রীয় ধারকযন্ত্র। বস্তুত অধ্যাত্ম সাধনা ও আত্মিক উন্নতি দ্বারা মানুষ ক্ষুদ্রত্ব অতিক্রম করে বিরাট শক্তির অধিকারী হয়ে পূত আলোর পরশ পেতে পারে। এই পবিত্র জ্ঞানালোকের সন্ধান মেলে লালন-সংগীতে। পৃষ্ঠা- ৮২


বাংলা দেহতত্ত্বের গান

সূধীর চক্রবর্তী তাঁর 'বাংলা দেহতত্ত্বের গান' রচনায় ইতিহাসের আলোকে বাংলা গানের উৎসরূপ সন্ধান করেছেন। আলোচনার প্রথমাংশেই বলেন –


চর্যাগান, শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের গান, জয়দেবের কোমলকান্ত পদাবলি, চণ্ডীদাস-বিদ্যাপতির ভাবময় গীতি, চৈতন্যোত্তর মহাজন পদাবলি, নাথযোগীদের গান, রামপ্রসাদ প্রভৃতির শ্যামাবিষয়ক গান ও কালীকীর্তন এবং বাউল-ভাটিয়ালি-মুর্শিদা ইত্যাদি লোকায়তবর্গের গান-- এইসবই বাংলা গানের আদি-বৃত্তান্তের অংশ। পৃষ্ঠা- ৯১



বাংলা গানের ঐতিহ্য শনাক্ত করতে গিয়ে তিনি প্রসঙ্গক্রমে বলেন-


এককালে এদেশে লোকায়ত গুহ্য ধর্মসাধনার প্রয়োজনে অভিসন্ধিত শব্দের আড়ালে তত্ত্বকে লুকিয়ে রাখতে হয়েছিল। কিন্তু অন্তর্লীন বিবেচনা থেকে বোঝা যায় চর্যাগান থেকে নাথপন্থীদের গান, বৈষ্ণব সহজিয়াদের গান, শাক্তগান ও বাউলগানকে ছুঁয়ে সেই গোপন গানের ধারা রবীন্দ্রনাথের গানকেও স্পর্শ করেছে। একে চলতি কথায় বলা হয় রূপক গান-- যার বাইরে একটা মানে, ভেতরে আর একটা মানে। এ- গানের অন্তর্বাণীর প্রাধ্যান্য, রূপের আড়ালে লুকিয়ে বাজে যে অরূপ বীণা, তা শোনার জন্য একটা আলাদা শ্রবণ লাগে।… রূপকের আবরণে ঢাকা চর্যাগান থেকে বাউলগান পর্যন্ত বাংলাগানের সেই ধারা ও তার শরীর ব্যবচ্ছেদ করলে একটা অন্তঃস্রোতের সন্ধান পাওয়া যাবে। আমাদের শিষ্টসমাজ কিছুটা ঘৃণা আর বেশ কিছুটা অজ্ঞতা নিয়ে তাকে চিহ্নিত করেছেন দেহতত্ত্বের গান বলে। কিন্তু প্রকৃত পর্যবেক্ষণে ও মরমী দৃষ্টিভঙ্গিতে বোঝা যায় যে দেহতত্ত্বের গান আসলে এক বলিষ্ঠ জীবনবাদী বাস্তবতার স্মারক। পৃষ্ঠা- ৯৩



তিনি মনে করেন দেহসংক্রান্ত শব্দাবলি যেসব গানে রয়েছে আমরা ভাববাদী শিক্ষিত সমাজ শুধুমাত্র সেগুলোকেই দেহতত্ত্বের গান বলে চিহ্নিত করেছি। এবং এর ফলেই এই গানগুলো সম্পর্কে শিক্ষিত মানসে কিছুটা হীন ধারণার জন্ম হয়েছে। তিনি বলেন-


অথচ ভেবে দেখা হয়নি যে, দেহতত্ত্বের গান কেবল বাউলরাই লেখেননি, বস্তুত বাংলা গানের একেবা রে আদি উৎস সিদ্ধদের রচিত চর্যাগীতি থেকে শুরু করে মধ্যযুগের সহজিয়া বৈষ্ণবদের গান, যোগীসম্প্রদায়ের গান, কবিগান, মাইজ-ভাণ্ডারী, ঝুমুর এমনকি রামপ্রসাদের শাক্তগানে দেহসাধনার কথা স্পষ্ট রয়েছে। তবে সবচেয়ে ব্যাপকভাবে দেহসংকেত পাওয়া যায় বাউল, মুর্শিদা ও মারফতি গানে, কর্তাভজাদের গানে, সাহেবধনী, বলরামী এবং আরও নানাবর্গের লৌকিক বাংলা গানে। পৃষ্ঠা- ৯৩



লালন তত্ত্ব

আলোচ্য প্রবন্ধে রমাকান্ত চক্রবর্তী তাঁর আলোচনাকে তিনভাগে বিভক্ত করেছেন। প্রথমভাগে সূত্রনির্দেশ করেছেন, দ্বিতীয় ভাগে করেছেন লালন ফকিরের ধর্মবিশ্বাসের নানা অনুষঙ্গ আর শেষভাবে করেছেন সার্বিক বিষয়ের পর্যালোচনা। তিনি মনে করেন লালনের চিন্তা সূফি মতবাদ দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত ছিল। তিনি লালনগীতির আলোকে লালনের অধ্যাত্মচিন্তাকে উন্মোচন করতে গিয়ে মনে করেন লালনের তত্ত্বচিন্তামণি আলোতে আঁধারে মাখানো। সেজন্য এর অর্থনিরূপণ করতে গিয়ে ভাষ্যকারের উপলব্ধিকে গুরুত্ব দিতে হবে। তবে এই ধারণার দুর্বলতা বা প্রামাণিকতার মাত্রা সম্পর্কে তিনি সচেতন। কারণ ভাষ্যকার নিজে হয়ত বাউলতত্ত্ব সাধনা করেন না। আর শুধু বইপত্র পাঠে অতীন্দ্রিয়বাদ বোঝা সহজ নয়। তারপরও তিনি বেশ কিছু বিষয় লালনের গানে খুঁজে পেয়েছেন, যা তার আলোচনাকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। তিনি লালনের গানে যে বিষয়গুলোকে আলোচ্য করে তুলেছেন, সেগুলো নিম্নরূপ:-


গৌরাঙ্গ, গুরু, মুরশিদ, মারফত, দয়াল গুরু, বৈরাগ্য, মানুষ এবং মনের মানুষ, রসিক মানুষ, সাধনপন্থা, প্রেম, মনঃশিক্ষা, ভাবাত্মিকা পদাবলী, দেহতত্ত্ব, ইসলাম বিষয়ক গীতাবলী এবং বিবিধ গান



পর্যালোচনা অংশে আলোচক লালনের গুরু সিরাজ সাঁইয়ের কথা উল্লেখ করেছেন। সিরাজ আর্থ সামাজিক বিচারে সামান্য লোক ছিলেন। কাজ করতেন পাল্কীবাহক হিসেবে। কিন্তু লালনের একাধিক গানে সিরাজের চিন্তারাজ্যের অসামান্যতার কথা বারবার স্মরণ করা হয়েছে। প্রাবন্ধিক বলেন-


বস্তুত লালনতত্ত্ব-বিচার এক অর্থে সিরাজ সাঁইয়ের তত্ত্ব-বিচার, কারণ অধিকাংশ গানেই লালন তাঁর এই অসামান্য গুরুর ঋণ স্বীকার করেছেন, তাঁর অসাধারণ প্রজ্ঞার জয়ধ্বনি করেছেন। কত বড় সাধক হলে লালনের মতো শিষ্য তৈরি করা যায়, তা আমরা কিছুটা অনুমান করতে পারি। সিরাজ সেই রকমের একজন বড় সাধক ছিলেন। লালনের দান, তাঁরই কথামৃত। আমাদের দুর্ভাগ্য যে, সিরাজ সাঁইয়ের মতো একজন বিশিষ্ট 'ব্রাত্য' বাঙালির পূর্ণ পরিচয় আমরা জানতেও পারলাম না। তবে লালনের গানে তিনি চিরজীবী হয়ে থাকবেন। পৃষ্ঠা- ১৫৭



বাউল কবি লালন ও সাহিত্য-বৃত্ত

সনৎকুমার মিত্র তাঁর বাউল কবি লালন ও সাহিত্য-বৃত্ত শীর্ষক রচনায় রবীন্দ্রনাথের মাধ্যমে লালনের গানের শিক্ষিত সমাজে প্রবেশের ইতিহাস আলোচনা করেছেন। রবীন্দ্রনাথের গানে বাউল গানের ভাবচেতনা তাঁর জীবনবোধের সাথে কীভাবে লীন হয়ে গেছে তার বিশ্লেষণ করেছেন। তিনি মনে করেন অসীমের প্রতি মানবচৈতন্যের যে গতি তা রবীন্দ্র বা লালন উভয়েরই গানের মূল সুর। বাউলদের গান প্রসঙ্গে তিনি মনে করেন জীবনদর্শনের 'বড় ভাবকে তারা এক সহজ-সরল সাহিত্য মাধ্যমে প্রকাশ করে'। রবীন্দ্রনাথের বক্তব্যকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন-


লালনসহ সমস্ত বাউল কবির অধিকাংশ গান বিশ্লেষণ করলে আমরা সহজেই যা পাই তা হচ্ছে: ‘গুরুর নিকট অকপট আত্মসমর্পণ, মানবের হৃদয়স্থিত ভগবানের নিকট দৈন্য, সাধন-ভজনে অক্ষমতার জন্য নৈরাজ্য, সাধনমার্গে ব্যক্তিগত বিচিত্র অভিজ্ঞতা' (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শান্তিনিকেতন – ২য় খণ্ড ১৩৫৬, পৃ. ৩৩০-১) এবং তা প্রকাশের মধ্যে যে ভাবানুভূতির কারুণ্য, যে মাধুর্য, যে অকপট সারল্যের সৌন্দর্য আছে তা-ই এগুলিকে সাহিত্য-গুণোপেত করে তুলেছে। এবং এইখানেই লালনসহ অন্যান্য সকল বাউলের গানের ঔৎকর্ষ। পৃষ্ঠা- ১৬৫


বাউলের আউল কথা

লীনা চাকী তাঁর 'বাউলের আউল কথা' রচনায় কয়েকজন সংসারী মানুষের বাউল শিল্পী হয়ে ওঠার কথা বর্ণনা করেছেন। তারা সংসার জীবনে থেকেও সাধনার পথ না মাড়িয়েও কীভাবে বাউল হয়ে উঠলেন, সেই কাহিনী লেখকের মূল প্রসঙ্গ। প্রথমে তিনি সুবল নামক একজন বাউল শিল্পীর বিখ্যাত হয়ে ওঠার কাহিনী বর্ণনা করেন। কতকটা গল্পের ভঙ্গিতে আলাপচারিতার মাধ্যমে তিনি বাউল তত্ত্ব, এর সাথে সুবলের জীবনের গতিপথ এবং কলকাতার শিক্ষিত সমাজে তার অধিষ্ঠান ও বিশ্বব্যাপী পরিচিতির সাবলীল বর্ণনা দেন। সুবলের সাথে কথা প্রসঙ্গে উঠে আসে তার বাউল হয়ে ওঠার কাহিনী। তার বাড়ির পরিবেশ, সংসার, আশ্রম, কৈশোর থেকে যৌবনে পদার্পণকালে গানের সমুদ্র অবগাহন সবকিছুর মনোজ্ঞ বিবরণ রচনাটির প্রাণ। সুবল বৈষ্ণব মতের দিক থেকে বাউলগান শিখেছেন। বাউলগান নিয়ে তার ভাবনা নিম্নরূপ-


বাউলগান তত্ত্ব-নির্ভর। দেহসাধনার কথাই এই গানের মূল কাঠামো। রসসিঞ্চন রাধা-কৃষ্ণপ্রেমলীলা নিয়ে। কিন্তু দেহসাধনাভিত্তিক বাউলগানে যে পদ তা সত্যিই ভাবাবেগ নিয়ে নয়। সাধনার একটা পদ্ধতির কথা গানের পদে। ফলে তা চোখে জল আনে না। সে-জন্যই মূল বাউলগান ভাবাবেগ নিয়ে নয়। পৃষ্ঠা- ১৬৯



আরেক বাউল কবি ও গায়ক সোমেন বিশ্বাস বাউলগান ভালবাসতেন ছোটবেলা থেকেই। তার অন্যান্য ভাইয়েরা ঘোর সংসারী। কিন্তু বাউল-ফকিরিগান তাকে সংসারের যাবতীয় মায়া থেকে মুক্ত করতে পেরেছিল। লেখক বলেন-


সোমেন তাদের প্রতিনিধি, যারা গৃহস্থের আঙিনায় এক পা রাখে, আর এক পা রাখে বাউল-আশ্রমে। অর্থাৎ বাউলগানকে জীবনের ব্রত পালনের মতো মনে করে, সাধনায় বিশ্বাস রাখে, কিন্তু সংসার থেকে সম্পূর্ণ বিচ্যুত হয়ে নয়। সোমেন বাড়ির সদস্যদের সঙ্গে থেকেও উদাস জীবন পালন করার অভ্যাস করে ফেললেন। - পৃষ্ঠা ১৭৩



বাউলজীবন যাপন না করে, সাধনার কঠিন পথ না মাড়িয়েও যে শুধু বাউল গান গেয়ে বা রচনা করে বাউলশিল্পী হওয়া যায় সুবল, সোমেন এ জাতীয় বাউল।


সাধুসঙ্গ করে, কীর্তন বা বাউল গান পরিবেষ্টিত গ্রামে বাস করে মনের মধ্যে রহস্যের আকর্ষণ জন্ম হয়েছে নবকুমার দাসের। লেখকের ভাষ্যে-


গুনগুন করে গান গাইতে-গাইতে একদিন ভিড়ে গেলেন আশ্রমের কীর্তনীয়াদের দলে। ততদিনে তাঁর কাছে পৌঁছে গেছে লালন ফকিরের গান। আশ্চর্য একটা আকাশ সামনে। পৃষ্ঠা- ১৭৫



রবীন্দ্রনাথ শিলাইদহে যাদের কণ্ঠে বাউল গান শুনেছেন, তারা যাপিত জীবনেও বাউল ছিলেন, অর্থাৎ তত্ত্বজ্ঞ বাউল, অধ্যাত্মচেতনাসমৃদ্ধ বাউল। তাঁরা নিজের মনের গভীর পথে মনের মানুষের অন্বেষণ করেন। কিন্তু আধুনিককালে গানের মধ্য দিয়ে বাউলদের বিকাশ। তত্ত্বসাধনার দুর্গম পথ একালে হারিয়ে গেছে। তবুএ কিছু মানুষ আছেন যারা গানের মধ্য দিয়ে নিজের আত্মচেতনার সন্ধান করেন। সাধনার শুদ্ধতা না থাকলেও গানের শুদ্ধতা বজায় রাখতে চান। এরকম আরেকজনের কথা এই রচনায় পাওয়া যায়। তাঁর নাম সনাতন। তাঁর সম্পর্কে লেখক বলেন-


বিভিন্ন মেলা-মহোৎসবে বাউলগানের রস আস্বাদন করতে-করতে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান পরিবারের কাছ থেকে। বাউল-ফকিরদের সঙ্গ করা, তত্ত্বের রহস্য জানা আর গুরু ধরে গানের রস বুঝে নেওয়ার পাশাপাশি গানকে মূল মন্ত্র করলেন। পৃষ্ঠা- ১৭৬



এরা বাউল গানকে জীবনের অংশ করে নিয়েছেন। সাধনার মাধ্যমে প্রাপ্ত গভীর অধ্যাত্মবোধ তাদের জীবনে হয়ত নেই, কিন্তু বাউল গানকে ভালবেসে ডুবে থাকেন বাউল গান রচনায়, সুরারোপে এবং চর্চায়। একা, নিঃসঙ্গ জীবনে খুঁজে ফেরেন হয়ত মনের জটিল স্বরূপকে।


বাউলদের প্রতি তাঁর অনুরাগ সেই পর্যন্ত – ওরা মানুষতত্ত্বের সাধক।
বাউল সংগীত ও দর্শন সম্পর্কে জানতে আগ্রহী পাঠকের অনেক প্রশ্নের উত্তর দেবে এই বই। ১২টি প্রবন্ধে বাউল সংগীতের অন্তরালে প্রোথিত বাউল সাধকদের জীবন চিন্তার নানাবিধ প্রতিফলন তাকে অরূপজগতের সন্ধান দেবে। বইতে বাউলগানের সাহিত্যিক মূল্য, সাংগীতিক রূপরেখা, দার্শনিক বোধ এবং বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে নান্দনিক দিক বিস্তারিতভাবে আলোচিত হয়েছে। লেখকের মনে করেন বইটি ভক্তপ্রাণ মানুষ, উচ্চতর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের শিক্ষার্থীদের জ্ঞানতৃষ্ণা মেটাবে। বলা যায় ১৭৮ পৃষ্ঠার এই বই বাউল গান সম্পর্কে জানতে আগ্রহী পাঠকের অবশ্যপাঠ্য হিসেবে বিবেচিত হবার মত বই।


বইয়ের ছাপা স্পষ্ট। বোর্ড বাঁধাই হওয়ায় সহজে জীর্ণ হবে না। প্রচ্ছদে একটি রহস্যময়তা আনার চেষ্টা লক্ষ্য করা যায়, এজন্য প্রচ্ছদশিল্পী একটি ধন্যবাদ পেতেই পারেন। বাঙালীর অধ্যাত্মচেতনার মর্মরূপ অনুধাবনে এই বই পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করুক এই প্রত্যাশা করি।


**********


বাউল সংগীতের নন্দনতত্ত্ব
সম্পাদনা- দেবপ্রসাদ দাঁ

প্রচ্ছদ ও অক্ষর বিন্যাস: বিশ্বজিৎ সেন রায়
প্রকাশনী: মেরিট ফেয়ার প্রকাশন, ঢাকা
প্রকাশকাল: ২০১২
পৃষ্ঠা: ১৭৮
মূল্য ২৫০
ISBN: 984-70131-0253-2

মতামত:_

0 মন্তব্যসমূহ