বিধু বাবুর দোকান - সৈকত দে

সৈকত দে রচিত বিধু বাবুর দোকান গল্পের বইয়ের প্রচ্ছদ



বিধু বাবুর দোকান একটি সেন্সরবিহীন সত্য ও সুন্দরের শিল্পীত বয়ান। যে গদ্য আমরা পড়তে চাই, যে পাঠ আমরা নিতে চাই, যে রসদ আমরা খুঁজি- সর্বোপরি যে সারল্য গদ্যে আমরা প্রত্যাশা করি, তেমনই একটি বই এটি।

আমি বিশ্বাস করি, বইটি আলাদা একটি মূল্য দাবি করে, বিশেষত, বিগত দুই দশকের শিল্প-সাহিত্যের যে অনুষজ্ঞে চট্টগ্রাম শহরটাকে দেখেছি আমরা, তাকে সত্য ও সারল্যের ভেতর দেখার জন্য। বইটি'র গদ্য পাঠককে সুন্দর একটি পাঠ- ভ্রমণের অভিজ্ঞতা দেবে। লেখকের আত্মজৈবনিক এতো সুন্দরভাবে সামনে এগিয়েছে- মাঝেমধ্যে মনে হতে পারে, আরে, এই জীবনটাই তো কবির, কবিতার!

বইটির লেখক সৈকত দে। মূলত কবি, কিন্তু গদ্যের পথে হাঁটলে সেটা ওহীর মতো সত্য বয়ান হয়ে যায়। নিজের জীবনের ভেতর দিয়ে সাহিত্যের অনুষঙ্গ সুন্দরের হাত ধরে লেখকের গদ্যে চলে আসে। এখানেই স্বকীয়তা, এখানেই সারল্য গদ্যের।

সৈকত দে'র গদ্য পাঠে না-থাকে ক্লান্তি, না-থাকে থেমে থাকার ফুরসত। বরং সৈকত দে যেভাবে লেখেন, সেভাবে পাঠকের এগুতে ইচ্ছে করবে। যদিও পাঠকের পাঠ অভিজ্ঞতা এখানে প্রভাবক হিসেবে কাজ করবে। বইয়ে সাহিত্যের বিচিত্র বিষয় ও অনুষঙের পাশাপাশি সিনেমা ও অন্যান্য বৈষয়িক গদ্যগুলোও সুখপাঠ্য- লেখকের সংবেদনশীলতার স্বাক্ষর।

বইটি সুন্দর, সরল- সর্বোপরি সত্য। শিল্পের এই জায়গায় এসে দাঁড়াবার সাহসটুকু খেয়াল করলে, কেবল সৈকত দে'র আছে। আছে বলেই পাঠকের হাতে তুলে দেওয়া সম্ভবপর হলো- বিধু বাবুর দোকান।
- জয়ন্ত জিল্লু


ইচ্ছে হলো তাই


দেশ স্বাধীন হলো, পঞ্চাশ বছরের বেশি আগে। এই সময়ে যখন উন্নয়নের চতুর রমরমা, প্রচার মাধ্যমের গগনবিদারী উল্লাস, ঠিক সেই সময়ে দাঁড়িয়ে আমাদের চোখে পড়ে যায় পঞ্চাশ বছর বয়সী মানুষ গীতা বিশ্বাসের চাল কুড়ানোতে ব্যস্ত থাকার খবরে। ঘরে খাবার না থাকায় চাল কুড়ানোর এই খবরে আমরা একাধিক দরিদ্র মানুষকে দেখেছি। খবর আমাদের আরও জানায়, একুশ জন মানুষের সন্ধান পাওয়া গেছে যারা পাঁচ হাজার কোটির বেশি টাকার মালিক। পাঁচের পর কয়টি শূন্য বসালে ঐ সংখ্যক টাকা হতে পারে ভাবতে ভাবতে সতেরো কোটি প্লাস জনসংখ্যার দেশে তিনশ কপি সম্ভাব্য প্রচারের একটা গদ্যের বই প্রস্তুত করতে অপরাধবোধে ভুগি। লেখা বাদে আর কিছু পারি না বলে, এই গ্লানি হজম করে ফেলতে হয়। আরেকটা কারণ এমন, যাকে সর্বশেষ ভালোবেসেছিলাম, তাঁর হাত একবার ছুঁয়ে যদি দেখে বইটি, যদি একবার...

বাইশটি নানা ধরনের গদ্যের পরেও, আরেকটু কথা, প্রথা মাফিক বলার ইচ্ছে হলো। না বললেও বিশেষ ক্ষতি হতো না। প্রথম রচনা আত্মজৈবনিক, প্রকাশিত হয়েছিলো সীমান্তের অন্য পাশের বাংলাভাষী অঞ্চল থেকে, 'সর্বনাম' নামের এক সুসম্পাদিত পত্রিকায়। বাংলাদেশের বন্ধুদের পড়াতে পারিনি, যেহেতু পত্রিকাটি বাংলাদেশে আসেনি তেমনভাবে। একজন কবি হতে চাওয়া কিশোরের বেড়ে ওঠার ইতিহাস দিয়ে বইয়ের শুরু।

এই বইয়ের অধিকাংশ রচনা প্রকাশিত হয়েছিলো ইংরেজি দৈনিক দি বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সাপ্তাহিক বাংলা সাময়িকী ইজেলে। ইচ্ছে ছিলো, ইজেলের রচনার একটি নির্বাচিত সংকলন গ্রন্থভুক্ত করবার। চলচ্চিত্র আর নাটকের আলোচনা যেমন আছে, তেমনি আছে বিচিত্র সব বিষয়ের অবতারণা। এই সুযোগে ইজেলের সম্পাদক, কথাসাহিত্যিক, অনুবাদক আলীম আজিজকে অন্তরের কৃতজ্ঞতা জানাই। ছেলেবেলা থেকে মূলত বিষণ্ণ ও নিঃসঙ্গ আমাকে তার অক্ষরেরা সঙ্গ দিয়েছিলো আরও কয়েকজন বড় লেখকের পাশাপাশি।

সুমন দীপ সম্পাদিত দেশলাই, বিজন অরণ্য সম্পাদিত অনলাইন পত্রিকা মেঘচিল যথাক্রমে কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর ও সেলিম মোরশেদ সংক্রান্ত লেখা দু'টি যত্ন করে রেখেছিলো নিজেদের আয়োজনে। আমাকে যুক্ত করবার জন্যে কৃতজ্ঞতা জানাই তাদের।

অতিমারির দিনগুলিতে আমাদের সামগ্রিক বিপর্যয় ও ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টার সময় একটি লেখা লিখতে হয়েছিল বিপন্ন বোধ করায়। সীতাকুণ্ডে কন্টেইনার ডিপো বিস্ফোরণের মর্মঘাতী ঘটনাটি অত্যন্ত আহত করেছিলো। তাৎক্ষণিক একটি রচনায় নিজের অসহায় ক্ষোভ ব্যক্ত করেছি। রচনা দুটি রইলো।

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল আমার প্রথম ও একমাত্র রাজনৈতিক দল। ২০০৯ সালে প্রথম সাম্রাজ্যবাদবিরোধী কনভেনশনে দিনব্যাপী একটি রিপোর্ট লিখেছিলাম। শেষ লেখা হিসেবে একজন কথাসাহিত্যিক হতে চাওয়া মানুষের আদি গদ্যের নিদর্শন হিসেবে জুড়ে দিলাম।

কৃতজ্ঞতা অশেষ– ভালোবেসে, আগ্রহে যারা বইটি তুলে নেবেন।

বিধুবাবু বস্তুত একজন চলে যাওয়া সময়ের মানুষ- যিনি নিজের অভিযোজন ঘটাতে পারেন নাই এই সময়ের সাথে। তিনি স্মৃতির ভেতরে থেকে যাওয়া একজন। আমাদের সকলের ভেতর একজন বিধবাবু তার দোকান খুলে বসে থাকেন, পসরা সাজিয়ে, মৃদু আলো জ্বেলে। গ্রামের কোনো ভাঙা হাটের প্রায় ধ্বস্ত টং দোকান হতে পারে। শহরের উচ্ছেদ হয়ে যাওয়া মানুষও হতে পারেন তিনি।

গ্রন্থনামটি দিয়েছেন আমাদের ভালোবাসার মানুষ, বড় ভাই মুহাম্মদ কাইউম। সম্প্রতি 'কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া' চলচ্চিত্র নির্মাণ করে বাংলাভাষী চলচ্চিত্রপ্রেমিকদের ধন্যবাদার্হ হয়েছেন।

সম্ভাব্য পাঠিকা আপনাকে আমন্ত্রণ।

- সৈকত দে, ডেবার পাড়, চট্টগ্রাম, তেরো ফেব্রুয়ারি, ২০২৩


সৈকত দে, জন্ম ১৯৮১

সিনেমা দেখা, বই পড়া আর লেখার চেষ্টা তাঁর দৈনন্দিন 'কাজ'। যদিও 'চিন্তা'-কে কাজ ভাবতে আমাদের দেরি আছে আজো। তিনি মনে করেন, লেখালেখি আসলে প্রাণের বন্ধুর জীবনব্যাপ্ত অনুসন্ধান যাকে রবীন্দ্রনাথ বলেন, পরানসখা।


লেখকের অন্যান্য বই


উদাসীনতার পাপ (কবিতা) (২০১৭)
তোমাকে বুঝিনি, থিও (অনুবাদ) (২০১৮)
শৌখিন হস্তশিল্প (কবিতা) (২০১৯)
বিস্মরণবিরোধী গল্প (গল্প) (২০১৯)
বিপ্লব আনবাড়ি যায় (গল্প) (২০২০)
অমনোনয়নের দিন (কবিতা) (২০২১)
ব্রিজিত বার্দো এবং ললিতা সিন্ড্রোম (অনুবাদ) (২০২৩)
লেখকের প্রকাশিতব্য বই
কোহেনের নোটবই ও অন্যান্য (অনুবাদ)
হিম (উপন্যাস)

::::::::::

বিধু বাবুর দোকান
সৈকত দে


প্রকাশক : প্রিন্টপুকুর
প্রচ্ছদ : তাইফ আদনান
প্রথম প্রকাশ : ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
মূল্য: ৪০০ টাকা

মতামত:_

0 মন্তব্যসমূহ