সংগতি অসংগতির তৃষ্ণা - আহমাদ মাযহার

আহমাদ মাযহার এর লেখা সংগতি অসংগতির তৃষ্ণা বইয়ের প্রচ্ছদ


লেখক হিসেবে আহমাদ মাযহারের সাহিত্যিক অভিমুখ বিচিত্র! 'সংস্কৃতির সেরেনাদ', 'বইয়ের বেলাফোন', 'বাংলার বিস্তার', 'করোনার করুণতায়', 'লঘুতার লয়কারি' সংগীত অনুষঙ্গী শিরোনামধারী পাঁচ পর্বে সংকলিত ব্যক্তিগত প্রবন্ধের এই বইটিও তারই পরিচায়ক। বাংলাদেশের সমাজ ও সংস্কৃতি, বই পুস্তক- প্রকাশনা ও বইমেলা, অভিবাসী বাঙালি জীবনানুষঙ্গ, সাহিত্যিকতা যাপন, জেমস জয়েসের ব্লুমসডের শতবর্ষ প্রসঙ্গ, প্রান্তিক মানুষের জীবন ও সংস্কৃতিবোধ, করোনার দিনকাল এবং কোভিড উনিশ আক্রান্তের স্মৃতি সজ্জিত এই বই!


পূর্বকথা


আশির দশকে, কৈশোরোত্তর কালে, একটা সময় অনুভব করি আমি লেখক হতে চাই; তখনই, নিজের সম্বন্ধে সিদ্ধান্ত নিই: প্রতিভা থাকুক আর না-থাকুক, সাহিত্য-সমাজে স্বীকৃতি পাই বা না-পাই, লেখক হওয়ার জন্য আমৃত্যু অনুশীলন চালিয়ে যাব। ক্রমশ বুঝতে থাকি, সে অনুশীলন কেবল লেখার কলাকৌশলগত পারঙ্গমতা অর্জনের লক্ষ্যে সীমিত থাকলে চলবে না! আমাকে যাপন করতে হবে লেখকীয় জীবনও। কিন্তু লেখকীয় জীবন বলে তো নির্দিষ্ট কোনো আদর্শ খুঁজে পাওয়া যায় না! ক্রমশ অনুভব করেছি একেকজন লেখকের কাছে তাঁর জীবনবোধ একেক রকম। জীবন-সম্পর্কে নিজের স্বাভাবিক কৌতূহল মোচনে উদ্যোগী হয়ে লেখকীয় জীবনসূত্রের যে-ইশারা পেয়েছি তা আমাকে অন্তরাত্মার টানে চলার নির্দেশনা দিয়েছে। অন্তরাত্মার টান মানে লেখকের সৎ-উপলব্ধি প্রকাশের প্রয়াস- আকাঙ্ক্ষা। প্রকৃত অনুভব-উপলব্ধিকে প্রকাশে অনুপ্রাণিত বলে সততাই লেখকের সৃজন ও মননশীলতাকেও পথ দেখায়; করণীয় বিষয়ে অন্তরাত্মাই হয়ে ওঠে লেখকের নির্দেশক।

সাহিত্যিক অনুশীলনে আমার অন্তরাত্মা গিয়েছে রুচি-অর্জনের পথে; সন্ধান করতে চেয়েছে বাংলাদেশের ভৌগোলিক সীমানার ও এর বাইরের সামগ্রিক সাংস্কৃতিকতার শক্তিকে সর্বোপরি অনুভব করতে চেয়েছে বাংলাদেশের রাষ্ট্রাচারের সামর্থ্যকে। অন্যদিকে যেনতেন প্রকারে প্রতিষ্ঠা-লাভ, জনপ্রিয়তা-অর্জন কিংবা সাফল্য-লাভের আকাঙ্ক্ষা আমার অন্তরাত্মাকে পরিচালনা করেনি; ফলে বাধাগ্রস্ত করতে পারেনি নিজের সাহিত্যিক সত্তার আন্তরিক প্রকাশ-প্রয়াসকে। হয়তো সে কারণে আমার সাহিত্যিক অভিমুখ হয়ে উঠতে চেয়েছে কিছুটা বিচিত্র; হয়তো সে কারণেই পায়নি নির্দিষ্ট কোনো বিষয়ের আগ্রহী পাঠকের মনোযোগ।

সাহিত্যিক অনুশীলনের শুরুর সময় থেকেই বাংলা বইয়ের বিচিত্র জগতের প্রতি অনুভব করে চলেছি অন্তরাত্মার টান। এই সূত্রে আমার আগ্রহের ক্ষেত্র

কেবল বইয়ের অন্তর্বস্তুতে সীমিত থাকেনি; কৌতূহলী থেকেছে অন্তরঙ্গ ও বহিরঙ্গ উভয় দিকে-অর্থাৎ আমার ঔৎসুক্য সামগ্রিক গঠনের দিকেই। যথার্থ পাঠকের কাছে বই পৌঁছানোর উপায় অনুসন্ধান নিয়েও সব সময় রয়েছে অন্তর্গত তাড়না। বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের মহামারি চলাকালে সার্বিক জীবন ভাবনা যেমন আমার চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে তেমনই সেই সময়কে দেখতে চেষ্টা করেছি কোভিড-উনিশে আক্রান্তের দৃষ্টিকোণ থেকেও। লেখকের জীবন তো নয় কেবল গুরুভার উপলব্ধি-অর্জনের লক্ষ্যে আঁটোসাঁটো অনুশীলনের বিষয়; আপাত লঘুতায় পাওয়া বিমূর্ত রূপও তাঁর চিত্তে ধরা দিতে পারে। সে-রকম প্রয়াসও রয়েছে আমার লেখক-সত্তায়!

প্রবন্ধ-সংকলন মানে কয়েকটি প্রবন্ধের একটি মালা। এই মালাটি আমি গাঁথতে চেয়েছি পাঁচটি গুচ্ছ দিয়ে। 'সংস্কৃতির সেরেনাদ', 'বইয়ের বেলাফোন', 'বাংলার বিস্তার', 'করোনার করুণতায়', 'লঘুতার লয়কারি'- এই পাঁচ নামে গুচ্ছগুলোর নামকরণ করেছি ভাবগত পরিচয়-করণের সুবিধার্থে। প্রশ্ন উঠতে পারে: বইয়ের অঙ্গসংগঠনই যদি এর পরিচয়কে ধারণ করতে না পারে তা হলে এই প্রয়াসের সার্থকতা কী? এ ব্যাপারে আমার ভাবনা হলো : বইয়ের সার্বিক সংগঠনের সংস্কৃতি এখনও যথেষ্ট অনুশীলিত হয়নি। তাই এই অনুশীলনের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কেও এখানে উল্লিখিত হলো!

স্বভাবের দিক থেকে আমার প্রবন্ধ চলতে চেয়েছে মতেইন, ফ্রান্সিস বেকন, ভার্জিনিয়া উল্‌ল্ফ, বঙ্কিমচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ, প্রমথ চৌধুরী, মুজতবা আলী-নির্দেশিত পথে! তবে এইসব রচনা পাণ্ডিত্যের চেয়ে মূলত লেখকের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা অনুষঙ্গকে ভিত্তি করে এগিয়েছে। যাত্রাপথে লেখকের নিজের অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধি পাঠকদের কতটা সঙ্গ দিতে পেরেছে সে বিবেচনা একান্তই পাঠকের; একইসঙ্গে রাষ্ট্র সমাজ সংস্কৃতি ও ব্যক্তির অবস্থান কতটা পরস্পর সম্পর্কিত হয়ে উঠেছে লেখকের পক্ষ থেকে তা-ও বিচার্য তাঁদেরই কাছে। পাঠকের সামান্যতম মনোযোগ আকর্ষণেই লেখকের সার্থকতা!
- আহমাদ মাযহার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, নিউ ইয়র্ক


সূচিপত্র


  • সংস্কৃতির সেরেনাদ
  • শিক্ষা রুচি সংস্কৃতি
  • আড়ম্বর ও কবিতা পড়ার সংস্কৃতি
  • রাষ্ট্র ও লেখক-শিল্পীরা
  • মূল্যবোধের কৃষিসংস্কৃতি বনাম বিশ্বায়নসংস্কৃতি 
  • তুলনা কী দরকার?
  • সাহিত্যিকতা: নিমগ্ন-অনুশীলন বনাম সাফল্য লাভের সহজ উপায়
  • লেখকতা ও জীবিকা
  • লেখকীয় বৈষয়িকতা
  • রবীন্দ্রনাথ: সাহিত্য সমাজতত্ত্ব ও কাণ্ডজ্ঞান 
  • অভিবাসী জীবন ধারায় 'মুসলিম সাহিত্য সমাজে'র শিক্ষা
  • বাংলাভাষার ভবিষ্যৎ
  • বইয়ের বেলাফোন
  • বাংলাদেশে বইয়ের সংস্কৃতি
  • বাংলাদেশের পুস্তক-প্রকাশকেরা কি পাঠকের জন্য বই প্রকাশ করেন?
  • বইমেলা ও পাঠকমুখী হওয়ার সংস্কৃতিচর্চা
  • নিউ ইয়র্ক বাংলা বইমেলা: 'মৃত মাধুরীর কণা'
  • লেখা, বইরচনা ও 'অমর একুশে বইমেলা'
  • বাংলার বিস্তার
  • বিশ্বছড়ানো বাংলাদেশ
  • 'মনে এলো' কিংবা 'ঝিলিমিলি'
  • অভিবাসী বাংলাভাষীর ভাষাচর্চা: গবেষণা-র নতুন অভিমুখ
  • করোনার করুণতায়
  • নিউ ইয়র্কের করোনালিপি
  • করোনা-করুণ দিনযাপন
  • করোনাক্রান্তি: গৃহবন্দিত্ব নয়, গৃহবাস
  • কোভিড-উনিশ পেরিয়ে
  • কোভিড-উনিশ পেরিয়ে ভোগ ও উপভোগ
  • লঘুতার লয়কারী
  • জেমস জয়েসের ইউলিসিস, ব্লুমস্ ডে-এর শতবর্ষ ও একটি ব্যতিক্রমী পাঠ
  • সিএনজি-চালকের জীবন-দর্শন
  • নির্ঘণ্ট


::::::::::

সংগতি অসংগতির তৃষ্ণা
আহমাদ মাযহার


প্রথম প্রকাশ: ফেব্রুয়ারি ২০২৫
প্রচ্ছদ: আল নোমান
প্রকাশক: খড়িমাটি
বিনিময়: ৫০০ টাকা

মতামত:_

0 মন্তব্যসমূহ