আলম খোরশেদ ভাই সম্পাদিত 'জাদুবাস্তবতার গাথা, লাতিন আমেরিকার গল্প' বইটি পাঠকের জন্য জাদুবাস্তবতার মোড়কে লাতিন আমেরিকাভুক্ত দেশগুলোর সমাজ, রাজনীতি, দর্শন, অর্থ- বাণিজ্য সর্বোপরি মানুষের জীবন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে চলা এক বৈচিত্রময় যাত্রা। মোট বিশটি গল্প এখানে স্থান পেয়েছে যেগুলো অনুদিত হয়েছে প্রকাশকালে (১৯৯১) মার্কিন দেশে বসবাসরত বাঙালি লেখকদের হাতে। বইটিতে লেখক এবং অনুবাদকদের একটা সংক্ষিপ্ত পরিচিতিও সংযুক্ত হয়েছে। আমার পঠিত বইটি এর দ্বিতীয় সংস্করণ (২০১৭)। গল্প শুরুর আগে ভূমিকা ও সংকলন বিষয়ে কিছু কথার পর লাতিন আমেরিকার ছোট গল্পের পটভূমি নিয়ে যে পর্যালোচনাটি আছে তা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। বিশেষ করে আমার মতো যাদের লাতিন আমেরিকার সাহিত্যের সাথে খুব বেশি যোগাযোগ নেই তাদের জন্য এটি অবশ্য পাঠ্য। একে মূল গল্পের পাঠ-পূর্ব প্রস্তুতিও বলা যায়।
সূচিক্রমকে অমান্য করেই যেহেতু আমার এইসব গল্পপাঠ শুরু হয়েছে তাই সমাপ্তও হয়েছে এই অমান্যতা মেনেই। একইভাবে আমার পাঠ প্রতিক্রিয়াও ক্রম মেনে না চলা উচ্ছৃঙ্খল পাঠকের বহিঃপ্রকাশ।
প্রথমেই পড়লাম প্যারাগুয়ের লেখক আউগুস্তো রোয়া বাস্তোসের লেখা 'ভাগাড়' গল্পটি। মানুষ চাইলেই ফেরেশতা হতে পারে না তার মানুষিক প্রবৃত্তির কারণে। মানুষ চাইলেই শয়তান হতে পারে না তার মানুষিক প্রবৃত্তির কারণে। এই সত্যের ইঙ্গিতবাহী গল্পটি তার বুননের সাথে জড়িয়ে নিয়েছে সাহিত্যের সুষমা। খুবই ছোট কিন্তু গভীর অর্থবহ এই গল্পটি আমার পড়া সেরা ছোট গল্পগুলোর তালিকায় যোগ হলো। গল্পটি অনুবাদ করেছেন তাসনিম সালেহ।
এরপর পড়লাম নোবেল জয়ী লেখক মিগেল আনহেল আন্তুরিয়াসের লেখা 'মুক্তা' গল্পটি। তিনি গুয়াতেমালার লেখক। গল্পটি অনুবাদ করেছেন খালেকুজ্জামান ইলিয়াস। এক দরিদ্র মানুষের অভিনব উপায়ে সমুদ্র থেকে মুক্তা সংগ্রহের গল্প যা তাকে করে তোলে রহস্যময়। গল্পটি পড়তে গিয়ে বারবার হোঁচট খেতে হয়েছে উত্তরবঙ্গের আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহারের কারণে। গল্পের মূলভাষা থেকে আঞ্চলিক/ উপসাগরীয় অঞ্চলের ভাষার ভিন্নতা বোঝাতে হয়তো এটা করা হয়েছে। এতে কথোপকথনের ভেতর বারবার শব্দে য-ফলার আধিক্য (যেমন ক্যাঙ্কা, দ্যাকো, শিল্যার ওগল্যাক, সয়্যা, বুজল্যা, খিদ্যা ইত্যাদি, এছাড়া ওসেক, কিসেক, করিচ্চো ইত্যাদি) পাঠপ্রবাহকে ব্যাহত করেছে। শুরুটা চমৎকার হলেও গল্পে ক্যারিবিয়ান সমুদ্রতীরবর্তী অঞ্চলে ভ্রমণশীল পাঠককে যখন অনুবাদক বগুড়ার ভাষার মাটিতে এনে ফেলছেন তখনই পাঠক হোঁচট খাচ্ছে। বারবার তাই কাঁচভাঙার শব্দ শুনতে পেয়েছি। বগুড়ার (বা রংপুরের) অনেক শব্দের অর্থও বুঝিনি।
ভীতিকে হত্যার মাধ্যমে মুক্তি অর্জনের গল্প 'নদীর ধারে তিনজন মানুষ'। গল্পে এক জাদুবাস্তবতার মধ্য দিয়ে মানুষের রাজনৈতিক মুক্তি ঘটে যেখানে তিনজন মানুষ মিলে একজনকে জলে ডুবিয়ে মারে। এই ভিকটিমটি জাতির অন্তরে জেঁকে বসা ভীতি ছাড়া আর কেউ নয়। সুন্দর গল্প। অনুবাদ করেছেন খন্দকার জাহাঙ্গীর।
সুচরিতা গুহ অনুদিত মারিয়া লুইস বম্বালের লেখা গল্প 'সেই গাছটা'। এটি একজন নিঃসঙ্গ নারীর গল্প যে এক সময় স্বামীর নিঃশ্বাসের তলায় বেড়ে উঠতে চেয়েছিলো আলোর প্রতি সংবেদনশীল চারাগাছের মত। তার অমল তারুণ্য ছিলো স্বামীর গোপন চোখে এক অনির্বচনীয় খুঁত। গঁদ (স্থানীয় বৃক্ষ) গাছের কাছে গচ্ছিত ছিলো তার একাকীত্ব আর সমস্ত অতীত। তাই গাছ কাটার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সে সেই অতীতকে পেছনে ফেলে সামনে এগুনোর প্রয়াস নিতে পারে। গল্প খুব অসাধারণ কিছু নয় কিন্তু বৃক্ষ, সংগীত, সেতু, নদী আর বাগানের সূতো দিয়ে এর বুনন কৌশলে এটি অনন্য।
টান টান আর উইট সমৃদ্ধ গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেসের রাজনৈতিক গল্প 'আক্কেল দাঁত' একটি চমৎকার গল্প। অনুবাদ করেছেন ইকবাল করিম হাসনু।
'খোদার কাছে চিঠি' মেক্সিকান লেখক গ্রেগরিয়ো লোপেস ই ফুয়েন্তেসের লেখা একটি মজার গল্প। এই গল্পটি একটি ভিন্ন আঙ্গিকে অনেকটা কৌতুকাকারে শুনে এসেছি বহুকাল ধরে। তার উৎস যে এই গল্প তা জানা ছিলো না। সাকি সেলিনার সহজ সুন্দর অনুবাদে তা পাঠকের জন্য হয়ে ওঠে অনায়াস পাঠ। গল্পের এক পর্যায় উল্লেখ আছে যে রোববার গীর্জার মাথায় লেন্চো 'ত্রিশূল' দেখেছে। গীর্জার মাথায় ক্রশ থাকার কথা সেখানে ত্রিশূল কেন থাকবে তা বোধগম্য হয়নি।
সের্হিও রামিরেসের লেখা, মুশতাক ইলাহী অনুদিত 'খেলোয়াড়' পুলিশের জিম্মায় এক কয়েদিকে ক্রসফায়ারে হত্যার গল্প। এটি বাংলাদেশের ক্রসফায়ারের গল্প থেকে খুব বেশি ভিন্ন কিছু নয়। হত্যার গল্পটি এসেছে ঘটনার ধারাবাহিকতার উপর ভাষার চমৎকার সূচীকর্মের মাধ্যমে। বলার ধরণ ভালো লেগেছে।
'অতিথি' গল্পটি লিখেছেন মারিয়ো বার্গাস য়োসা। পাহাড় আর অরণ্যের প্রাঞ্জল বর্ণনা দিয়ে গল্পের শুরু। শহীদুল জহিরের ভাষা-ভঙ্গিতে বলতে পারি,
'অতিথি' গল্পটি পড়ে পাঠকেরা জানতে পারে যে প্রতারকেরাও মাঝে মাঝে প্রতারিত হইয়া থাকেন।
সরাইখানার পেছনে দোনিয়া মার্সেদিতা নামের নারীর সাথে এক পলাতক আসামির দেখা হলে গল্পও শুরু হয়। এই পলাতক সেই প্রতারক যে ধরিয়ে দেয় এক বিপ্লবীকে এবং প্রতারিত হয় সেনা সদস্যদের দ্বারা। গল্পের টুইস্ট এখানে এসেছে খুবই সরল ভঙ্গিতে। গল্পটি অনুবাদ করেছেন সম্পাদক স্বয়ং।
উরুগুয়েতে জন্ম নিলেও গল্পকার ওরাসিও কিরোগা প্যারিস ঘুরে থিতু হয়েছিলেন আর্জেন্টিনার বনাঞ্চলে। বইতে অন্তর্ভুক্ত তাঁর গল্প 'হুয়ান দারিয়েন' ফেইবল ঢংয়ে বলা একটি মর্মস্পর্শী গল্প। হুয়ান দারিয়েন একজন বাঘ যে মানুষের ভালোবাসায় মানুষে পরিণত হয়েছিলো। পরবর্তীতে মানুষের ঘৃণা তাকে বাঘের রূপে ফেরত পাঠিয়েছে। গল্পটি অনুবাদ করেছেন স্বপন কুমার গায়েন।
মব লিঞ্চিংয়ের ঘটনা দিয়ে শেষ হওয়া গল্প 'ভাঁড় কিংবা বীরের গোধূলি'। লিখেছেন ভেনেজুয়েলার লেখক রোমুলো গায়েগোস। গল্পজুড়ে আছে শয়তান সেজে বিনোদন দেয়া এক ক্লাউনের লুপ্ত গৌরব নিয়ে হাহাকার। সময়ের সাথে সাথে মানুষের রুচি বদলায়, সেই সাথে তাল মিলিয়ে নিজেদের বদলাতে না পারলে মূল্যহীন হয়ে পড়েন একদা তুমুল জনপ্রিয় বিনোদনকর্মীরা। তাঁদের জানতে হয় কখন অবসরে যাওয়া উচিত, সেই অবসর প্রান্তিকগোষ্ঠীর জন্য বিলাসিতাও বটে। গল্পটি পড়তে পড়তে বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের 'বাঘ বাহাদুর' সিনেমাটির কথা মনে পড়ে গেলো।
তনুশ্রী ভট্টাচার্য অনুদিত, কারমেন লাইরার ছোট গল্প 'এস্তেফেনিয়া'। সমুদ্র সৈকতে একদিন স্রোতে ভেসে আসে রঙচটা কালো ক্রুশ। তাতে খোদাই করা থাকে এস্তেফেনিয়ার নাম। কল্পনার লাগাম ছিঁড়ে অশ্ব ছোটে এস্তেফেনিয়াকে চিহ্নিত করতে। তাকে কল্পনায় খোঁজা হলেও সে কোনো রূপকথার রাজকুমারী নয়। বড় বেশি রূঢ় বাস্তবতায় এই নারী হতে পারে কোনো কলাবাগানের শ্রমিক। শোষিত, নিপীড়িত, দুর্দশাগ্রস্ত এই নারী প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করে। একটা ক্রুশ থেকে এভাবেই কলমের দক্ষতায় লেখক বের করে আনেন একটি করুণ কাহিনী।
সলিমুল্লাহ খানের অনুবাদে পড়লাম আলেহো কার্পেন্তিয়ের গল্প 'রাজনৈতিক আশ্রয়'। ল্যাটিন আমেরিকার এক দেশে সেনা অভ্যুত্থান ঘটলে একজন সচিব গ্রেপ্তার হতে হতে পালিয়ে বাঁচেন এবং আশ্রয় নেন এক দূতাবাসে। ১৯২৮ সালের হাভানা চুক্তি অনুযায়ী রাজনৈতিক ফেরারীগণ আশ্রয় প্রার্থনা করলে দূতাবাসগুলোর তখন তা মঞ্জুর করার বাধ্যবাধকতা আছে অতএব আশ্রয় পাওয়া গেলো। গল্প জমে ওঠে দূতাবাসের স্বল্প পরিসরে যেখানে আছেন আশ্রয়-প্রার্থী, আশ্রয়-দাতা ও আশ্রয়-দাতার স্ত্রী। দেখা গেলো সূঁচ হয়ে যিনি ঢুকেছিলেন গল্প শেষে ফাল হয়ে তিনি বেরিয়েছেন আশ্রয়দাতার রাজনৈতিক ও দাম্পত্য উভয় জীবনে। দীর্ঘ সময় দূতাবাসের আশ্রিত হিসেবে থাকার সুবাদে নাগরিকত্বও মিললো। ক্ষমতা লোভী জেনারেল, বিপ্লব, দমন, কুটনীতি, রাষ্ট্রনীতি ইত্যকার বিষয়কে উপজীব্য করে লেখা এই গল্পে রাজনৈতিক দর্শন ও আধ্যাত্মিক দর্শন এসেছে বাড়তি পাওনা হিসেবে। অনুবাদে সলিমুল্লাহ খানের অতিমাত্রায় অপ্রচলিত বাংলা শব্দের ব্যবহার এবং সর্পিল নদীর ন্যায় দীর্ঘ বাক্য পাঠে মাঝে মাঝে থমকে দাঁড়াতে হলেও এর বাঁকে বাঁকে লেখকের উইট গল্পটিকে করেছে সরেস ও আকর্ষণীয়।
'নদীর তৃতীয় তীর' লিখেছেন ব্রাজিলিয়ান লেখক যোয়াও গিমারায়েস রোয়াসা যিনি পেশায় ছিলেন চিকিৎসক, পরবর্তীতে হয়েছেন কূটনীতিক। অনুবাদ করেছেন মুহম্মদ জাফর ইকবাল। নদীর তৃতীয় তীর হলো সেই গন্তব্য যেখানে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি হয়তো ঝোঁকের মাথায় আপনি দিয়ে ফেলতে পারেন তবে সেখানে পৌঁছানো সবার পক্ষে সম্ভব নয়। চমৎকার এই গল্পে একটা স্নিগ্ধ পারিবারিক আবেশ থাকলেও তাকে ছাপিয়ে যায় শূন্যতাবোধ। গল্পটি ভালো লেগেছে।
নারী পুরুষের সম্পর্কের মাঝে ধূসর অঞ্চলকে ধরার চেষ্টা চলেছে হলিও কোর্তাসার 'অন্য এক আলোয়' গল্পে। অনুবাদ করেছেন জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত।
একটি অস্বাভাবিক পরিবারে অবহেলিত এক অবোধ শিশুর সাথে এক অতি বৃদ্ধ, নিঃস্ব ও নিঃসন্তান শ্রমিকের সখ্যতার গল্প 'আনা মারিয়া'। গল্পকার যেন রূপকের মাধ্যমে জীবনচক্রকেই বোঝাতে চাইলেন। আজ যে শিশুর জন্য স্নেহের আশ্রয় হয়ে উঠেছে বৃদ্ধ মানুষটি কালক্রমে সময়ের কান্ডারী হয়ে ওঠে সেই শিশু। সে-ই তখন পথ প্রদর্শক। গল্পটি লিখেছেন হোসে দোনোসো আর অনুবাদ করেছেন প্রভাতকুমার দত্ত। হোসে দোনোসো চিলির অন্যতম প্রধান গদ্যকার।
আর্জেন্টিনার লেখক লুইসা বালেন সুয়েলার গল্প 'আমি তোমার রাতের ঘোড়া' অনুবাদ করেছেন পুরবী বসু। এটি একজন ফেরারি বিপ্লবী ও তার প্রেমিকার গল্প। যে গল্পে মেয়েটির স্বপ্নে ফিরে আসে তার মৃত প্রেমিক। আহামরি কোনো গল্প নয়, চলনসই এর বয়ান।
পানামার প্রতিষ্ঠানবিরোধী লেখক আলবারো মেনেন্দেস ফ্রাঙ্কো লিখেছেন 'গল্প নয়'। অনুবাদ করেছেন মীর্জা মাসুদ হাসান। গল্পটা শুরু হয় দারুণ এক চৌকস ভঙ্গিতে। কিন্তু গল্প বেশিদূর যেতে পারে না, কিছূদূর গিয়ে গল্প শুরু হয় নতুন করে নতুনভাবে। আবারও পরিণতির দিকে না গিয়ে গল্প শুরু হয় নতুনভাবে আরো বার দু'এক। শেষমেষ গল্প আর হলোই না কারণ গল্প চা- খানা থেকে বেরিয়ে হেঁটে চলে গেলো নিরুদ্দেশে। এই বইতে এটি আমার অন্যতম ভালো লাগা গল্প।
'সনাতনী ধর্ম্মোকথা' - কার্লোস ফুয়েম্তেসের গল্প। অনুবাদ করেছেন সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়। ধর্ম ও অধর্মের টানাটানিতে কৈশোর হারিয়ে ফেলা এক কিশোরের গল্প। এটি মূলত একটা চাইল্ড এবিউজের গল্প।
হোর্হে লুইস বোর্হেসের গল্প 'বেবিলনে লটারী'। সাঙ্কেতিক বিন্যাসে সজ্জিত এক লটারী সিস্টেমের গল্প যে সিস্টেম নিয়ন্ত্রন করে মানুষের ভাগ্য, এমন কি মৃত্যু বা জীবন। সরকারি দপ্তরে কেরানি দ্বারা ভুল তথ্য সংযোজন সেই সিস্টেমের অংশ। কিছুটা দুর্বোধ্য এ গল্প অনুবাদ করেছেন আলী মনোয়ার।
এই সংকলনটিতে সবচেয়ে চমকপ্রদ গল্পটি হলো 'টেইলর সাহেব'। এটি লিখেছেন আউগুস্ত মন্তেরেসা, জন্মস্থান গুয়াতেমালা। চমৎকার, ক্লাসিক ও স্যাটায়ারধর্মী এই গল্পে উইলিয়াম জি নাইটের রচনা-সমগ্রের রেফারেন্স দিয়ে দু'টো সাধু বাক্য আছে।
সাধু-বাক্য ১-
যদি ধনীর প্রতি ঈর্ষা অনুভব না করো তো গরীব হওয়ার মধ্যে লজ্জার কিছু নেই।
সাধু-বাক্য২-
যদি তুমি গরিবদের অবহেলা না করো তবে কোটিপতি হওয়ার মধ্যে লজ্জার কিছু নেই।
পরসমাচার এই যে সাধু বাক্য দুটো পড়ে সাধু-বোধে তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলারও কিছু নেই। কারণ আপ্ত বাক্যদ্বয় সাধু শোনালেও এই গল্প আদতে ভণ্ডামির গল্প। এই গল্প কর্পোরেট বেনিয়া, ভোগতন্ত্র, অসাধু অর্থনীতি ও দুর্নীতিময় রাজনীতির গল্প। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও তার অস্ত্র তথা যুদ্ধ বাণিজ্যের নগ্ন কৌশল উম্মোচিত হয়েছে চমৎকার ভাবে। জনৈক টেইলর সাহেব ঘটনাক্রমে এক মৃত আদিবাসী মানুষের মাথা হাতে পেলে বাণিজ্যের নব যুগের সূচনা হয়। প্রথমিক পর্যায়ে আছে মাথার চাহিদা সৃষ্টির প্রকল্প।
মাস কয়েক পর টেইলর সাহেবের দেশে মাথাগুলো এতটা জনপ্রিয়তা অর্জন করলো যে, পুরো ঘটনাটি এখনো সবাই স্মরণ করে। প্রথম দিকে এগুলো কেবল সবচেয়ে ধনীলোকদের সুবিধাভোগের বস্তু ছিলো, কিন্তু গণতন্ত্র গনতন্ত্রই, তাই কেউ অস্বীকার করতে পারবে না, সপ্তাহ কয়েকের মধ্যে এমনকি স্কুল শিক্ষকরাও এগুলো কেনার সামর্থ্য অর্জন করলো।
রপ্তানি শুরু হয় মানুষের মাথা। চাহিদার তুলনায় মৃত মানুষের মাথার যোগান সঙ্কট দেখা দিলে শুরু হয় মৃতের সংখ্যা বাড়ানোর প্রকল্প। কত কত প্রজেক্টের আওতায় আছে ব্যাধি বৃদ্ধির প্রকল্প। মাথার ব্যবসা জমজমাট হয়ে উঠলে ব্যাধিতে যোগান কুলিয়ে উঠতে না পারলে আছে দুর্ঘটনা প্রকল্প। ক্রমে ক্রমে যুদ্ধ প্রকল্প। কেন নয়, এরই নাম যে অগ্রগতি।
তারপর কী হলো? কিছুতো হলো, তবে সেটা পাঠ, পাঠ- প্রতিক্রিয়ায় না এসে বরং গল্পেই থাকুক। বইটি প্রকাশ করেছে সাহিত্য প্রকাশ।
**********
জাদুবাস্তবতার গাথা: লাতিন আমেরিকার গল্প
আলম খোরশেদ
প্রকাশক: সাহিত্য প্রকাশ, ঢাকা
প্রকাশকাল: ২০১৭
পৃষ্ঠা: ২০০
মূল্য: ৪০০
ISBN: 9847012402580
0 মন্তব্যসমূহ
মার্জিত মন্তব্য প্রত্যাশিত। নীতিমালা, স্বীকারোক্তি, ই-মেইল ফর্ম