মানুষের সংগ্রাম, বাঁচার আনন্দ নিয়ে ‘চার্বাক সুমন’ রচিত বই “লাইফ ইজ ইজি” আলোচনা করেছেন ‘সুজিৎ মণ্ডল’


‘চার্বাক সুমন’ রচিত মোটিভেশনাল বই “লাইফ ইজ ইজি”

প্রতিটি মানুষের জীবনে আসে দুঃখ, আসে কষ্ট- অপার যাতনা। এমনও সময় জীবনের উপর দিয়ে বয়ে যায়- যে কেবল ক্ষেতের ধানের মতো মাথা নুয়ে পড়ে থাকতে হয়। জীবন কতটা জটিল, কতটা সরল তা বিষয় নয়- দুঃখে দিশেহারা হয়ে যদি কেউ ভুল সিদ্ধান্ত নেয় তবে তা কখনও কখনও নিজের জন্যে ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে। এই ক্ষতির দিক থেকে নিজেকে রক্ষা করবার একটি বিশেষ পন্থা হলো প্রথমত- নিজের ভেতর ভেঙ্গে না পড়া। নিজেকে বোঝানো- আমি চেষ্টা করেছি সফল হইনি তার মানে আমি হেরে গেছি বিষয়টি এইরকম নয়। নিজের চেষ্টাটা হয়তো পূর্ণ মনোযোগের সাথে ছিল না এই কারণে হয়নি। সুতরাং প্রতিটি পদক্ষেপই হতে হবে দীপ্ত ও বিবেচনাপূর্ণ আধুনিককালের যুবকশ্রেণীর মধ্যে হতাশায় ভেঙ্গে পড়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায় বেশির ভাগই। অথচ কিছুতে বিফল হওয়া মানে হতাশায় ভেঙ্গে পড়া নয়, পূর্ণ উদ্যোমে নতুন করে কাজটিতে মনোযোগ দিয়ে সময় দিলেই দেখা যাবে সফলতা এসে গেছে। যে মানুষটি কখনও শিক্ষা গ্রহণ করেননি মানে তার জীবন মিছে তা কিন্তু নয়। তিনিও সফল তার কাজ দ্বারা- হয়তো তিনি কৃষক। আমার মনে হয় একজন কৃষক সবচেয়ে সফল মানুষ যার ভেতর রয়েছে পূর্ণাঙ্গ মনোযোগ এবং সফলতা পাওয়ার একাগ্রতা ও সিদ্ধান্ত। সম্প্রতি ‘লাইফ ইজ ইজি’ নামের একটি গ্রন্থ পাঠের সুযোগ হওয়ায় পাঠালোচনা লিখতে বসেছি। চার্বাক সুমন কর্তৃক রচিত এই গ্রন্থ একটি চমৎকার শিক্ষার বিষয় হয়ে উঠতে পারে শিক্ষার্থীদের নিকট। কেননা জন জেনডাই সম্পর্কে লিখেছেন এখানে ছোট্ট একটি উপন্যাসিকার রূপে। মানুষ কেন গরীব এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেয়েছেন জন জেনডাই। জীবন্ত এই কিংবদন্তী জীবন সম্পর্কে আজও মানুষকে বোঝাচ্ছেন থাইল্যাণ্ডের প্রত্যন্ত অঞ্চলের  গ্রামে গ্রামে গিয়ে। এই সময়ের পুঁজিবাদীযুগের মানুষদের কাছে অন্যকে মূল্যায়ন করার প্রধান মাপকাঠি হলো- অর্থ ও মোটা বেতনের চাকুরি কিংবা বলা যায় পণ্যের মাপকাঠিতে। মজার বিষয় হলো- মিস্টার জনের গ্রামে গরীব কিংবা ধনী কী বিষয় এই সম্পর্কে কোনো ধারণাই ছিল না।

মানুষ কেন গরীব এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেয়েছেন জন জেনডাই। 

প্রকৃতির সন্তান তারা, প্রকৃতির মধ্যেই তারা বেঁচেছিলেন আনন্দে উল্লাসে চাষবাসের মধ্যে। জন ছিলেন সরল- তিনি পুরোনো বীজ সংগ্রহ করতেন। চাষ সম্পর্কে তার জানা ছিল। কিন্তু শহরের মানুষেরা যখন এই গ্রামে আসতে থাকে তখন দেখে তাদের চাকচিক্যময় পোষাক, তারা ধনী। ধনীর কদর সমাজের সবখানে। ফলে তার গ্রামের থেকে দলে দলে যুবকেরা গিয়ে পাড়ি জমায় জমজমাট শহরে। জেনও একদিন পৌঁছায় কিন্তু সারাদিন পরিশ্রম শেষে প্রাপ্তি তার বড্ড আশ্চর্য করে তোলে। ভালো কাজের আশায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চশিক্ষা নেয়। কিন্তু আমাদের কালো কাপড়ে বাঁধা চোখে আমরা যা দেখিনি জন তা দেখেন। তিনি দেখেন শিক্ষকরা যা শিখেছে তা তোতাপাখির বুলির মতোন। এর বাইরে জীবনের জন্য তারা কিছুই শেখানোর মতো জানেন না। ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ফাঁকি আর জারিজুরিকে জন তোয়াক্কা করে না। ফিরে আসে গ্রামে নিজে জীবনকে সুন্দর বানানোয় মনোনিবেশ করে। সে চাষে মনোযোগ দেয়, মানুষকে শেখায় কী করে আনন্দ পেতে হয়। অর্থ দিয়ে আনন্দ কেনা যায় না। মাটি দিয়ে সে বানায় স্বাস্থ্যকর এক চমৎকার মডেলের বাড়ি যা জনপ্রিয় হয় তার অঞ্চলে। ধীরে ধীরে জনের এই পদ্ধতিকে সেখানে খুব পরিচিত করে তোলে জনকে। জন জীবনের আনন্দের খোঁজ পায়। হাহাকার যারা করে জীবন তাদের কিছুই দিতে পারে না। জন ছেঁড়া কাপড়গুলোকে রঙে চুবোতেন। তারপর তা হতো এক চমৎকার রঙিন ডিজাইন। মোটা কাপড়ের জুতো পরতেন। এই অবস্থায় জনকে ভালোবেসে ফেলেন এক মার্কিন তরুনী। তাদের বিয়ে হয়- তাদের এক সন্তানও রয়েছে।
তিনি দেখেন শিক্ষকরা যা শিখেছে তা তোতাপাখির বুলির মতোন।

জীবনকে আনন্দ উদযাপনের মাধ্যমে কতটা সহজ করে নেওয়া যায় ছোট ছোট উদ্যোগের মাধ্যমে। এটা নেই ওটা নেই না করে বরং যা রয়েছে তার সঠিক ব্যবহার করেই জীবনকে সফল করা যায়। লেখক চার্বাক সুমনের এমন জ্ঞানদায়ক  গ্রন্থটির প্রশংসা না করে আর কী করবার রয়েছে বলুন তো প্রিয় পাঠক। যারা জীবনকে ভিন্নভাবে ভাবতে চান, দেখতে চান- তারা নিশ্চয়ই গ্রন্থটি পাাঠ করবেন এই প্রত্যাশা করছি। লেখককে এমন একটি সুবিবেচিত টেক্সট পাঠকের জন্য নির্বাচন করার জন্য ধন্যবাদ জানাই; সেই সঙ্গে গ্রন্থটির সর্বাধিক প্রচার কামনা করি।

-:-:-:-:-:-:-:-:-:-:-:-:-
লাইফ ইজ ইজি
চার্বাক সুমন

প্রচ্ছদ: আল নোমান
প্রকাশক:  প্রতিকথা, ঢাকা।
প্রকাশকাল: ২০২০

পৃষ্ঠা সংখ্যা-৬৪
মূল্য: ১২০  টাকা
ISBN: ৯৭৮-৯৮৪-৩৪-৭৪৮৫-৮

মতামত:_

0 মন্তব্যসমূহ