চঞ্চল নাঈম এবং তাঁর কবিতাবই "ধু ধু" : সিদ্দিক বকর

চঞ্চল নাঈম এবং তাঁর কবিতাবই "ধু ধু" : সিদ্দিক বকর

পবিত্র বাইবেলে আছে, “স্থির হও এবং উপলব্ধি কর, আমিই ঈশ্বর।” শুধুমাত্র ধ্যানের মাধ্যমেই তা সম্ভব। এ জগত এক সময় অন্ধকারেই নিমজ্জিত ছিল। ধীরে ধীরে অন্ধকার কেটে যে আলোর সৃষ্টি হয়েছে তা এ জগতের মানুষের প্রগতির চিন্তারই ফসল। সে কারণেই মানুষ অন্য সকল প্রাণীর চেয়ে উন্নততর প্রাণী। সকল প্রাণীদের মাঝে একমাত্র মানূষই পারে তাঁর কর্মতৎপরতা, কর্ম মনোযোগ, ধেয়ান ধারণা তথা সর্বপ্রাণ ও প্রকৃতির নিবিড় নিরীক্ষা ও গভীর নিমগ্নতার মধ্যে থেকে ক্রম বিবর্তনের ধারায় ঈশ্বর হয়ে উঠতে। সকল মানুষের মাঝে ঈশ্বরীয় ক্ষমতা সুপ্তাবস্থায় বিদ্যমান থাকলেও সকল মানূষই ঈশ্বর হয়ে উঠতে পারে না। সৃজনশীলতার রসে অবগাহনই একজন মানুষকে ঈশ্বর করে তোলে। সৃজনশীলতার যত মাধ্যমে মানুষের বিচরণ তার মধ্যে কাব্যকলা বিশেষ উল্লেখযোগ্য। কাব্যকলা সৃষ্টিতে একজন কবিকে তাঁর যাপিত জীবনের অধিকাংশ সময়ই ধ্যানমগ্ন থাকতে হয়, স্থির হওয়া বাসনার বেদিমূলে অর্ঘ্য দিতে হয়, গভীর উপলব্ধির আসন পেতে পদ্মাসনে বসতে হয়- সে দিক থেকে আমার ব্যক্তিগত বিচার- বিশ্লেষণে একজন কবি তাঁর ধ্যান-জ্ঞানের ভেতর নিমজ্জিত হয়েই কবিতা সৃজনে ডুবে যান। বর্তমান বাংলাদেশের তরুণ কবিদের মাঝে কবিতা নিয়ে চিন্তা ও ভাবনার জায়গায় প্রচুর ভাঙা-গড়া ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা লক্ষণীয়- যা অদূর ভবিষ্যতে বাঙলা সাহিত্য তো বটেই বিশ্ব পরিসরে বাঙলাদেশের কবিতা সাহিত্যের এক মজবুত ভিত রচনা করে দিবে। আমি দূর ভবিষ্যতে বাঙলাদেশের একঝাঁক তরুণ কবিদের মাঝে বিশ্ব পরিসরে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার ঝলক দেখতে পাই। এই তরুণদের যার যার মতো করে একেকজন একেকরকম ভাবে কবিতা সৃজন করে গেলেও উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো কবিতা সৃজনে ধ্যান ও সাধনায় স্থির হওয়ার যে চেতনা সেই চেতনাটা লালন করেন এই তরুণ কবিরা। “স্থির হওয়া এবং উপলব্ধি করা”- এই যে চেতনা, এই চেতনাই হলো পরম সম্ভাবনার চেতনা- একেই বলে পরম চেতনার সৃজনশীলতার সহায়তা পাওয়ার যে বাসনা তার মধ্যে প্রবেশ করা। এই প্রবেশের পথ হলো প্রতিদিন মৌনতা ও ধ্যান অনুশীলন এবং বিচার প্রবনতা ত্যাগ করা। প্রকৃতির সাথে সখ্যতা ও বন্ধুতা গড়ে তোলা, সময় কাটনো, প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করা, প্রকৃতির চেতনার সাথে নিজের সৃজনশীল চেতনার সহবাস ও সহমিলন ঘটানো- এর মাঝে পরমভাবে স্থির হওয়া ও উপলব্ধি করাই হলো পরমচেতনার সৃজনশীলতার সহায়তা পাওয়া- ক্রমে স্রষ্টার সত্তায় নিজের সত্তাকে রূপান্তর করা। এ সব সম্ভাবনার আলো আমি দেখতে পাই বাঙলাদেশের  তরুণ কবিদের মাঝে। প্রশ্ন জাগতে পারে- এ তরুণ কবিদের মধ্যে কীভাবে তা দেখতে পাওয়া গেল- আমি কি ব্যক্তিগতভাবে সবাইকে চিনি জানি কিনা। উত্তর খুবই সহজ এবং যৌক্তিক- তাঁদের সৃজনকৃত কবিতার মাঝেই তাঁদের সেই সরূপ ও চেতনা দেখতে পাওয়া যায়। হাঁড়ির একটি ভাত টিপে যেমন বোঝা যায় হাঁড়ির সমস্ত ভাতের অবস্থা ঠিক তেমনি আমি অন্তত আমাদের দেশের একদল তরুণের কবিতা নিবিড়ভাবে পাঠ করে বুঝেছি সমস্ত বাঙলাদেশের তরুণ কবিদের মনন ও নিষ্ঠা- সেই সুতার ওপর দিয়ে হেঁটে গিয়েই কয়েকজন তরুণ কবির সাথে আমার ইতমধ্যেই সখ্যতাও গড়ে উঠেছে। তাঁদের সাথে আড্ডা ও মেলামেশার ভেতর দিয়ে তাঁদের চিন্তা-চেতনা সম্পর্কে সম্যক ধারণা ও উচ্চাশা তৈরি হয়েছে এবং পাশাপাশি কবিতা তথা সাহিত্য চর্চায় নিবিড় মনোনিবেশ, সাধনা ও নিষ্ঠা দেখে আমি শুধু মুগ্ধই নই সমৃদ্ধও হয়েছি অপরিসিম। সেই বাস্তবতা ও পরিপ্রেক্ষিতকে সামনে রেখেই অকপটে বলতে পারছি বাংলা সাহিত্যে কবিতার এক উজ্জ্বল সমৃদ্ধি নিয়ে আসবে অদূর ভবিষ্যতে এই তরুণ কবির দল। সেই তরুণ কবিদের একজন হলেন কবি চঞ্চল নাঈম।


কবি চঞ্চল নাঈম একজন নিভৃতিচারী মানুষ। নিরহংকার ও সরলতা তাঁর যাপিত জীবনের বিশুদ্ধ ভূষণ। স্কুল জীবন থেকেই শুরু করেন লেখালেখি। ছড়া দিয়ে শুরু, কবিতায় বসবাস। ১ এপ্রিল ১৯৮৬ সালে জন্ম বাঙলাদেশের ঝিনাইদহ জেলায়। পেশায় তড়িৎ প্রকৌশলী হলেও কবিতাই তাঁর ধ্যানজ্ঞান। লিটল ম্যাগাজিনে লিখতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন এই তরুণ কবি। তাঁর প্রথম কবিতার বই রাতপত্র, ফেব্রুয়ারি ২০১৯, দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ধু ধু, জুন ২০২১। উল্লেখযোগ্য ও লক্ষণীয় বিষয় হলো, ক্রম পরিবর্তনশীল পরিবেশ ও প্রকৃতিতে যে যুগ চেতনার উন্মেষ ঘটতে যাচ্ছে নতুন জন্মে প্রজন্মে কবিতায়ও তার সচেতন ছাপ ও ছায়া পড়ে এগিয়ে যাবে সামনে সেখানেও কবি চঞ্চল নাঈম যুক্ত রাখবে নিজেকে সকল পরিবর্তন ও নতুন সৃষ্টির মিছিলে সেই দৃঢ় মনোভাব দেখতে পাওয়া যায় কবিতায় তাঁর ধ্যানজ্ঞানের যুক্ততা দেখে। এই যুগসন্ধিক্ষণে কবিতায় অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ও যুগান্তকারী পরিবর্তনের যে মিছিল ধীরে ধীরে সংঘটিত হচ্ছে সে মিছিলেরও একজন অন্যতম কবি চঞ্চল নাঈম।     
   
কবি চঞ্চল নাঈমের ধু ধু কবিতার বইটি সামনে নিয়েই এত কথা বলছি। আজ এখানে তার একজন পাঠক হিসেবেই কথা বলার চেষ্টা করবো। ধু ধু হাতে পেয়ে একেবারে বুঝেশুঝে কবিতা ব্যবচ্ছেদ করে রিভিউ লিখতে বসে গেছি তেমনটি বলব না।  কবিতা ও কবিতার বই নিয়ে আলোচনা, সমালোচনা, মতবিনিময় বিশ্লেষণ করা আমার সাধ্য ও সাধন নয়- আমার সেই জ্ঞান-গরিমা আছে বলেও আমি মনে করি না। পাঠক হিসেবে একান্তই ব্যক্তিগত আনন্দ উপলব্ধি অনুভূতি থেকে ধু ধু কবিতাগ্রন্থটি নিয়ে এ এক আনন্দ প্রকাশের বিচ্ছুরণ।

চঞ্চল নাঈম একেবারেই টগবগে তরুণ প্রজন্মের তরুণ কবি। তারুণ্য আমাকে কবিতার মতোই দুই প্রান্ত ধরে টানাটানি করে নিত্য। বর্তমানে একঝাঁক তরুণের কবিতা নিয়ে ভাঙচুর আমাকে বেশ মোহিত করেছে। প্রতিদিনই আমি তাদের কারো না কারো কবিতার মাঝে ডুব দেয়ার চেষ্টা করি। এর মাঝেই কবি চঞ্চল নাঈমের আসে দ্বিতীয় কবিতার বই ধু ধু। ধু ধু নামটিই আমাকে ও আমার ভেতর কাব্যময়তার এক ধু ধু প্রান্তর উন্মুক্ত করে দেয়- অন্তর পারাবারে ধু ধু বালুচরের মতো জেগে উঠে কবিতা।


কবিতা বই ধু ধু'র কবিতাগুলো তিনটি পর্বে সাজানো হয়েছে- সম্পর্কের নৈশব্দ- ১০টি কবিতা ; বুদবুদ সম্পর্ক- ১০টি কবিতা ; মৃত্যু- ১৫টি কবিতা নিয়ে।

মোজাই জীবন সফরীর আঁকা কাব্যময় ধু ধু প্রচ্ছদ বইটিকে এক অনিন্দ্য সৌন্দর্যে উপনীত করেছে-  বইটি হাতে নিলেই আদ্যোপান্ত কাব্যময় এক ধু ধু নেশার ঘোর সংঘঠিত হয়।

কবিতা বুঝি না- আমি যেমন বলি- অনেককেই শুনি বলতে। সেক্ষেত্রে আমার নিজেকে বুঝ দেই এভাবে- কবিতা মানুষের মতো। মানুষ যেমন একেকজন একেকরকম, মন-প্রাণ একেকরকম, চিন্তাভাবনা অনুভূতি একেকজনের একেকরকম, তাকে চিনতে হলে যেমন তার সাথে বসবাসের প্রয়োজন, তার সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলতে হয়, তাকে ভালোবাসতে হয়, তার প্রেমে মশগুল হতে হয়, কবিতাও তেমনি।

তারপরও বলবো শুধু সাধারণ পাঠক কেন একজন কবি  আর একজন কবির কবিতা একশত ভাগ বুঝতে পারেন তেমনটি বোধ হয় নয়। আর তাই আমার মনে হয় কবিতার আসল রহস্য, মাধুর্য, সৌন্দর্যও সেখানেই।

কবি চঞ্চল নাঈমরে ধু ধু'র কবিতাগুলো পড়ে সেই রহস্য, মাধুর্য ও সৌন্দর্যের সুবেহ-সাদিকের শীতল হাওয়ায় অন্তরে ভেতরে হয়তো একধরনের উষ্ণতায় মনপ্রাণ ভরে ওঠে। এইটুকু। এতটুকু থেকেই সরল পাঠপ্রতিক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হয়েছি।

কবিতাশিল্পজ্ঞানীর ছিটিয়ে দেয়া শষ্যদানা খুঁটে খুঁটে শিখেছি- কবিতা অন্ধকার, স্তব্ধতা ও নৈশব্দ তৈরি করে। যে অন্ধকার মানুষকে চঞ্চল করে, পাঠককে স্তব্ধ করে অন্ধকারে চুবিয়ে আবার কবি নিজেই তাকে আলোর মাঝে নিয়ে আসেন।

কবি চঞ্চল নাঈমের ধু ধু'র কবিতারাও অন্ধকার, স্তব্ধতা ও নৈশব্দ তৈরি করেছে এবং শুধু তাই নয় কবিতার ভেতর দিয়ে কবি নিজেরই এক অতৃপ্ত জীবনের মনের যন্ত্রণার কথাই বলে গেছেন- যা পড়ার পর মনে হয়েছে এ যন্ত্রণা শুধুই তার এমন নয়- এ যন্ত্রণা আমাদেরও। তাই তা হয়ে উঠেছে সর্বজনের।


যে যন্ত্রণা ও বেদনা, অন্ধকার ও নিঃস্তব্ধতার কথা বলেছেন কবি- কবিতাগুলো পড়ে আমিও তার মর্মর ধ্বনির মর্ম টের পেয়েছি। বাবা মা হারানোর যে বেদনা সে বেদনা বিষাদ কবির একান্ত ব্যক্তিগত না রেখে সকলের করে দিয়েছেন। আমার মনে হয় কবি কবিতা সৃষ্টির পর যখন সে সৃষ্টি প্রকাশিত হয় তখন সেই সৃষ্টি আর কবির ব্যক্তিগত থাকে না- তা হয়ে ওঠে সবার। এখানেও কবি চঞ্চল নাঈম শব্দ ও ভাষা দিয়ে সেই কাজটিই সুচারুরূপে করতে পেরেছেন।  মনে হয় যেন আমারই হারানো মা বাবার সান্নিধ্য লাভের জন্য এই সাঁকোটার খুব প্রয়োজন ছিল। মৃত্যু তখন হয়ে উঠে জীবনের প্রাণরসায়ন। 


ধু ধু'র কবিতাগুলো পড়ে আমার কাছে তেমনটি মনে হয়েছে -

সেই থেকে মায়ের পেটের অনেক আলোক জমা আছে আমারই চোখের
ভেতর
আলোর মূল্য না দিয়ে
দিনরাত চোখের সহস্র জ্যান্ত আলো ধ্বংস করি আর হাসি- পহেলা এপ্রিল  


বুকভরা সরল বেদনা যেন পরস্পর বিচ্ছেদী  সম্পর্কে ধু ধু
রাতজাগা অসংখ্য কলহ,অন্ধ আর অন্ধকার কাছাকাছি
মায়ের বিষাদে আমার চোখেও সূক্ষ্ম জল জমে
বস্তুত, নিরীহ সহস্র যন্ত্রনা অনুভব করি
আর বাবার শূন্যতা থেকে মায়ের সহসা কান্না টের পাই
বাবার মৃত্যুও আমাকে সরলভাবে ডাকে, প্রকৃতির অন্ধকারে- প্রকৃতির অন্ধকার


আজ আর কিছু লিখবো না
 শুধু চিন্তাগুলো চিবিয়ে চিবিয়ে খাবো- প্রেম


এভাবে কবি তাঁর অন্তর্গত কবিতায় অন্ধকার ও স্তব্ধতাকে মাধুর্যময় শব্দের সমাহার ঘটিয়ে নিরবদ্য ও নিলয় ছন্দে আমাদেরও কবি করে তোলেন। কবির সাথে সাথে এই মহাকালের আদি ও অকৃত্রিম রূপ অন্ধকারের মাঝেই আমাদেরও নিক্ষিপ্ত করেন। তখন কবি ও পাঠক একাকার হয়ে এক উপলব্ধি এক অনুভূতি এক আত্মা হয়ে ওঠে।

কবির বাবা মা জন্ম মৃত্যু যেমন কবিকে অন্ধকারে নিমজ্জিত করে, চলমান জীবন যাপন স্তব্ধতায় পাথর করে তোলে- তখন কবি তাঁর কবিতার আশ্রয়ে অন্ধকার ও নিঃস্তব্ধতার ভেতর থেকে আলোর কণা কুড়িয়ে কুড়িয়ে শব্দ ও ভাষা দিয়ে নির্মাণ করেন এক আলোর পথ। কবি তখন নিজেরই প্রতিবিম্ব হয়ে উঠেন। কবির বাবা মা জন্ম মৃত্যু বেদনা কষ্ট তখন মি টু হয়ে ওঠে।

মৃত্যু যেমন সত্য সে সত্যের ওপর দাঁড়িয়ে কবি মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেন ভালোবেসে, মমতায়। কবি তাঁর কাব্য ভাষা দিয়ে কবিতা সৃজন করার মাধ্যমে এটাই বুঝাতে চান যে, মৃত্যুকে ভয় নয় ভালোবেসে আলিঙ্গন করতে হবে, তাহলেই জীবন আরও সুন্দর ও মাধুর্যময় হয়ে উঠবে। মৃত্যুকে ভালো না বেসে ভয় পেলে জীবন যাপন করা ব্যহতই হবেনা শুধু মানুষ তাঁর জীবদ্দশায় হারিয়ে ফেলবে তাঁর প্রণবন্ত, সরল ও সাবলীল সৌন্দর্য।

“আমি আর মৃত্যু পাশাপাশি নিবিড় ঘুমাই
অবসাদে আমাদের দুজনের দ্বন্ধ- প্রশ্ন একান্ত নিভৃত
-----------------------
আমি ভয়ডরহীন দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে হাসি
মৃত্যুর শিকড় শুধু ক্রমাগত বাড়ে” (মৃত্যু পর্ব ১০)

*আমার মৃত্যুর সাথে এভাবেই দেখা হয়
মৃত্যুর সাথে দূরত্ব কমে সবদিন (মৃত্যু পর্ব ৯)


সর্বোপরি জন্ম ও মৃত্যু কবির মাঝে পারস্পরিক সম্পর্কের যে নৈঃশব্দ তৈরি করে- সেই নৈঃশব্দ, জন্ম ও মৃত্যু; আলো ও অন্ধকার; আশা ও নিরাশার মৈথুনে যে প্রকৃতিগত সরল সন্তান লাভ হয়- চূড়ান্ত ভাবনায় তা হয়ে উঠে সত্যম সুন্দরম। এভাবেই কবি আবার অন্ধকার ও বিষাদে নিমজ্জিত হয়েও কবিকে নৈশব্দের সাথে প্রাণবন্তও করে তোলে।

কবির বয়ানে শুনি-

দু-আঙুল দিয়ে কিছু মাটি খুঁড়ে একবার কেঁচোদের পিঠে
চাড়া গেঁথে দেখি, কেঁচোদের ছুঁলেই ওদের শরীর থেকেও
গুঁড়ি গুঁড়ি মাটি বের হয়। ওইসব মাটি গেঁথে কেঁচোদল
এক সময়ের পাহাড়-শরীর গড়ে। এরপর বর্ষাঢেউ
জল নুয়ে পাহাড়ের সমস্ত অবগাহন ধুয়ে যেতে থাকে,
অবগাহনের ভাঁজের ভেতর থেকে কেঁচোদের চোখ, ভ্রু'র
দীর্ঘশ্বাস বের হ'য়ে আসে, আবারও ঘর নির্মাণের খোঁজে
ওদের বিরহে অদ্ভুত ভূতুড়ে স্বপ্ন ভেঙে মনে মনে বলি,
শূন্যে দৌড় যেন মাত্র আঁধারের কাঁদাজল ভেতর সম্ভব।- যুগ যুগ


কবি চঞ্চল নাঈম তার কবিতার অন্তরগুহায় নিজেরই জীবনকে সযতনে রেখে পাঠকের মুখোমুখি হয়ে নিজের বেদনা বিষাদ বিশদভাবে ফুটিয়ে তোলেন। মুঠো ভরে শব্দশষ্যের বীজ পাঠকের উর্বর হৃদয় ভূমিতে বপন করেন একজন কৃষকের মতো। কৃষকের ফসল ফলানোর আসন্নকালের ঘুরঘুট্টি আনন্দে বিভোর করে রাখেন নিজেকে- এভাবেই কবি তার কবিতার ভেতর দিয়ে নিজের জীবনকেই মেলে ধরেন। কবির এই আনন্দ সুখ ছোঁয়াচে পাঠকের হৃদয় মন প্রাণ সংক্রমিত করেন- পাঠক তখন কবিতার উড়ান পানে অঘুম রাতের ভেতর জিওল থেকে সন্তরণপটু হ'য়ে উঠেন। কবির মতোই পাঠকও তখন নিজের জন্মমৃত্যু মা-বাবার মৃত্যুযন্ত্রণার ভেতর ঢুকে ডুবে ডুবে ক্রমবর্ধমান সরল ও স্বাভাবিক, সহজ ও সুন্দর- জীবনের আরো সৌন্দর্যে ফিরেন- বাতাসে তুলোহালকা উড়েন। কবি এবং পাঠক প্রত্যেকেরই জীবনের মূল সুর হয়ে উঠে তখন শুধুই আনন্দ- যা নদী ও সাগর মন্থিত নির্মল ও ঝলমল।

মতামত:_

0 মন্তব্যসমূহ