নতুন উপন্যাস "রসুন চাষের ঘটনাবলী" নিয়ে মঈন উদ্দিনের সাক্ষাৎকার

নতুন উপন্যাস "রসুন চাষের ঘটনাবলী" নিয়ে মঈন উদ্দিনের সাক্ষাৎকার
২০২০ সালের একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে মঈন উদ্দিনের উপন্যাস "রসুন চাষের ঘটনাবলী"। বইটি প্রকাশ করেছে বুকিশ। প্রচ্ছদ এঁকেছেন রাজীব দত্ত। বইটি পরিবেশনায় রয়েছে চন্দ্রবিন্দু। পাওয়া যাচ্ছে ঢাকা বইমেলায় স্টল নাম্বার ৬০৭, চট্টগ্রাম বইমেলায় ১২১-১২২ নম্বর স্টলে। বইয়ের দাম ২৬০ টাকা।

নতুন বই প্রকাশকালের অনুভূতি এবং ব্যক্তিগত সাহিত্যভাবনা প্রকাশ করেছেন বই আলোচনার ওয়েবসাইট গ্রন্থগত.কম এর সাথে।

==============

❑  সম্প্রতি আপনার বই প্রকাশিত হলো৷ আপনার অনুভূতি জানতে চাই৷

'রসুন চাষের ঘটনাবলী' আমার প্রথম উপন্যাস। উপন্যাসের প্রচলিত ফর্ম থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করেছি আমি। ছোট ছোট প্যাসেজ দিয়ে লেখা শুরু করেছি। এখন তো অডিও-ভিজুয়ালের জমানা, মানুষ সোশিয়াল মিডিয়ার ছোট ছোট ফেসবুক স্ট্যাটাস পড়তে বেশি অভ্যস্ত। বড় ন্যারেটিভ লেখায় টেনে আনা বেশ কষ্টকর। তাই ফিকশনে টানতে ছোট প্যাসেজ আকারে লেখার টেকনিককে বেছে নিই। প্যাসেজগুলোর মাঝে আমার আঁকা কিছু ইলাস্ট্রেশনও আছে। ছাপার অক্ষরে নিজের লেখা আর ড্রয়িং দেখতে ভালই লাগছে।

❑  বই প্রকাশের সিদ্ধান্তে উপনীত হলেন কীভাবে?

আমি এমনিতেই একটা ফিকশন লিখছিলাম। ধীরে-সুস্থেই আগাচ্ছিলাম। কিন্তু যতই আগাতে থাকি ফিকশনের ক্যারাকটারগুলো আমার নিয়ন্ত্রণে আর থাকছিল না। ইভেন স্বপ্নে বা রাস্তাঘাটেও ক্যারাকটারগুলো এসে ঝামেলা করছিল। মানে, রাস্তায় সামনের হেঁটে যাওয়া মানুষটাকেই আমার ফিকশনের ক্যারাকটার মনে হচ্ছিল। তাই ঝামেলা এড়াতে তাড়াতাড়ি ছাপিয়ে বই করে ফেলার সিদ্ধান্ত নিই।

❑  বইটি প্রকাশ করতে প্রকাশক নিয়ে জটিলতায় পড়তে হয়েছিলো কি?

আমার বইটি পাবলিশ করেছে বুকিশ। বুকিশের সোহাগ ভাই ফিকশনের কথা শুনেই পড়তে চাইলেন। পড়ে উনি ছাপাতে রাজি হন আর পান্ডুলিপি গুছানোর জন্য দশদিন সময় দিলেন। বুকিশের প্রোডাকশন কোয়ালিটি এক কথায় দারুণ। ইলাস্ট্রেশনগুলো প্যাসেজের মাঝখানে দারুণ ভাবে প্লেস করে বুকিশ টিম।

❑  নিজের লেখার প্রতি আত্মবিশ্বাস কতটুকু?

ওই যে বলছিলাম, উপন্যাসের প্রচলিত ধারাকে যেহেতু আমি ভাঙতে চেয়েছি, আর এটা একটা ওপেনিং, ফাইনাল না। সো, এক্সপেরিমেন্টে কিছু প্লাস মাইনাস হতেই পারে। সেটা কন্টেন্ট, ফর্ম বা প্লট যেখানেই হোক। যারা প্রচলিত উপন্যাসের ভাষার সাথে অভ্যস্ত, ন্যারেশনের সাথে অভ্যস্ত তাদের জন্য এটা একটা ধাক্কাই। উপন্যাস থেকে কিছু অংশ আমি ফেসবুকে পড়তে দিয়েছিলাম। তো, ওখানে উপন্যাসের ভাষার বিষয়েই লোকজনের কন্ট্রোভার্সি দেখতে পেলাম। বেশ কয়েকজন একই সাথে 'থিকা, থেকে, থেইকা' এর ব্যবহারের ভ্যালিডিটি নিয়ে প্রশ্ন করলেন। একই বানান তিনভাবে লেখার পরও বুঝতে পারার ভিতর একটা ইশারা আছে। এইটা এক্সপেরিমেন্টই। ইশারাটি উপন্যাসের চরিত্র আর ন্যারেটরের কথ্যভঙ্গী বোঝাইতেই। যত মুখ তত ভঙ্গী, তত এঙ্গেল। 'থিকা' আর 'থেইকা' নিয়া ক্লাস ভেদের একটা বিবাদও আছে রাইটারদের মধ্যে, মানে যারা প্রমিত ভাষাকে প্রশ্ন করতে চান তাদের মধ্যেই। এটারও একটা জবানবন্দী হিসেবেই রাখতে চেয়েছিলাম এই তিনটার ব্যবহারের মাধ্যমে। তো, এটা তো আসলে ওপেনিং, ফাইনাল না।

❑  অনেকে বলেন লেখার ক্ষেত্রে প্রস্তুতির প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে আপনার প্রস্তুতির কথা জানতে চাই।

ক্লাইমেক্স, সিকুয়েনশালি আগানো বা উপন্যাসের যে ফর্ম বা আইডিয়া থেকেই বের হতে চাইলাম আমি
ফিকশন হিউম্যানের ইনবর্ন জিনিস, মানুষের রক্তে রক্তে ফিকশন মিশে থাকে। আর স্টাইল ব্যাসিক্যালি ইতিহাসের ক্রনোলজি থেকে আসে মে বি, কিছুটা ইনবর্নও। উপন্যাস, মানে ফিকশন তো অনেক পড়েছি। তো ফিকশন যখন লিখতে বসলাম, আমার কাছে মনে হল, আমি উপন্যাস ধারণা থেকেই বের হতে চাই। ক্লাইমেক্স, সিকুয়েনশালি আগানো বা উপন্যাসের যে ফর্ম বা আইডিয়া থেকেই বের হতে চাইলাম আমি। আসলে রাইটারের যখন অন্যদের লেখা পড়তে ভাল লাগেনা, বা তার নিজের জন্য যুতসই মনে হয় না, তখন সে নিজেই লিখতে বসে যায়,নিজেরটা লিখতে চায় সে। ম্যাজিক রিয়েলিজম, এবসার্ডিটি, মার্কসিজম ইত্যাদি আশ্রিত সহ কত আইডিয়া আর আইডিয়োলজির উপন্যাসই তো পড়তে হল এতদিন। তো, এসব পড়ে আমার মনে হল লাইফে তো প্রত্যেকটা ইনসিডেন্ট সিগনিফিক্যান্ট না। কিন্তু ওই সকল উপন্যাস রাইটারকে একটা লাইনও বেশি লেখার এখতেয়ার দেয় না। রাইটার তাহলে ফিকশন লিখতে গিয়ে এক দাসের কাজই করছেন। তাই আমি প্রচলিত উপন্যাসের ফর্ম থেকে বেরিয়ে এসে 'রসুন চাষের ঘটনাবলী' লিখলাম। আর এই উপন্যাসটি মনে হয় আমার এতদিনের পড়া ফিকশনগুলোর সাথে আমার ইন্টিমেসির পরিবর্তে একটা দুরত্বই তৈরি করে দিল।

❑  পাণ্ডুলিপি গোছানোর ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েছেন?

'রসুন চাষের ঘটনাবলী' ছোট উপন্যাস। আমি একটানা লিখেছি, পাঠকও চাইলে এক বসায় পড়ে ফেলতে পারবেন। উপন্যাস লেখার পর টেকনিক্যাল এরর যাতে না থাকে সেটার দিকেই নজর দিয়েছিলাম বেশি।

❑  শিল্প না কি পাঠক, আপনার দায়বদ্ধতা কার কাছে?

রিডারের সাথে শিল্পের বিরোধ নাই। রিডারের ভাল লাগলে ওইটাই শিল্প, আর শিল্প কোন না কোন রিডারের ভাল লাগবেই। মানুষ ছাড়া আর কার জন্য শিল্প বানাবো আমি!

❑  একজন পাঠক হিসেবে যখন বইটি দেখছেন/পড়ছেন, তখন বইটিকে কেমন মনে হচ্ছে?

বই পাবলিশ একটা জটিল জার্নি, মানে আমি লেখালেখি থেকে শুরু করে ছাপাছাপি পর্যন্ত সব  কাজের কথাই বলছি। শেষ মুহূর্তের, মানে লাস্ট এডিটের কয়েকটি বানান কারেকশন ছাড়াই প্রিন্টে চলে যেতে হয়েছিল। পুরো বই মিলিয়ে কয়েকটি বানান ভুল চোখে পড়ছে এখন। সেটা আমার মনে হয় প্রায় সব বইয়েই থাকে কম-বেশি। যারা বইটা পড়ে শেষ করছেন, ইনস্ট্যান্ট জানাচ্ছেন কেমন লাগলো। রিডারের সাথে সরাসরি যোগাযোগ হওয়াও একটা আলাদা অভিজ্ঞতা। এটা ভাল লাগছে যে, উপন্যাসের কোন কিছু যদি ভাল না লাগে, তাহলে রিডার সাফ জানিয়ে দিচ্ছেন ফেসবুকের ইনবক্সে।

❑  অধিকাংশ লেখক বইমেলাকে কেন্দ্র করে বই প্রকাশ করে, বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখেন?

বইমেলাকে কেন্দ্র করে বই ছাপানো খারাপ কিছু না। অনেকেই নিন্দা-মন্দ করেন এইটার। নিন্দা-মন্দ যারা করেন তারাও দলে ভারী হউক। তাহলে এক দল বইমেলায় প্রচুর বই ছাপাবেন, আর আরেক দল কাউন্টার হিসেবে সারা বছর বই ছাপাবেন। ফলে প্রকাশনা শিল্প এগিয়ে যাবে। বইমেলাতে তো অবশ্যই, সারা বছরও বই ছাপাছাপি চলবে। ব্যাপারটা দারুণ হবে।

মতামত:_

0 মন্তব্যসমূহ